Logo
Logo
×

ডাক্তার আছেন

হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা কতটুকু সম্ভব? করণীয় কী?

Icon

ডা. আশরাফুল হক

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২০, ০১:৫৫ পিএম

হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা কতটুকু সম্ভব? করণীয় কী?

যে কোনো সংক্রমণ সবার ক্ষেত্রে মৃত্যুর শঙ্কা তৈরি করে না, ৯৪ ভাগই সুস্থ হয়ে যান। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বায়নের এই যুগে এক দেশ আরেক দেশ থেকে খুব একটা দূরে নয়। মুক্তবাজার অর্থনীতি অনুসরণে এগিয়ে না গেলে উন্নতি সম্ভব নয়।

এক সময় পাট ছিল আমাদের মূল বৈদেশিক অর্থের মূল, এরপর আসলো গার্মেন্টস সেক্টর। সেটি অতিক্রম করছে আমাদের বিদেশে অবস্থানরত ভাইদের পাঠানো অর্থ। তারা আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধা। ২০১৯ সালের শেষ দিকে আমরা দেখলাম, বিশ্ব অর্থনীতির পরাশক্তি বৃহৎ চীনে অজানা এক ভাইরাসের দ্বারা অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হতে থাকে।

RNA virus হিসাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয় যা করোনা প্রজাতির অংশ। এই পরিবারের ভাইরাস পূর্বেও পৃথিবীর কয়েক দেশ মহামারী ঘটিয়েছিল যার একটি ছিল MRAS এবং SARS. ২০২০ সালের প্রথম দিকে নতুন সৃষ্ট ভাইরাসে নাম দেওয়া হয় COVID-2019.

রোগের নাম দাঁড়ায় SARS-CoV 19

শ্বাসনালীতে প্রদাহ সৃষ্টির মাধ্যমে মানব দেহে উপসর্গের তৈরি করে বলে এমন নামকরণ।

সাধারণত ভাইরাস আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায় যাকে বলে এন্টিবডি। এই এন্টিবডি দিয়েই পরবর্তীতে একে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।  তবে বর্তমান করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এখনও কোনও এন্টিবডি তৈরি হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি তাই একবার আক্রান্ত হলে যে পুনরায় হবেনা তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।

প্রথম দিকে সারস বা মারসের মত মৃত্যুর শঙ্কা তৈরি না করলেও দিন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা পরিবর্তিত হতে থাকে। মৃত্যুর মিছিল লম্বা হতে থাকে। বিশেষ করে যখন এটি নতুন কোনও দেশে সংক্রামিত হয় তখন। এর কারণ এর লক্ষণ অন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের মতই।

সবার ক্ষেত্রে যে এটি মৃত্যুর শঙ্কা তৈরি করে তা নয় তার কারণ একশর মধ্যে ৯৪ জনই সুস্থ হচ্ছেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করছে আসলে কার ক্ষেত্রে এটি কিরূপ প্রভাব ফেলবে।

একে প্রতিরোধ করার জন্য চীনে যা করেছিল তা হল পৃথকীকরণ, সামাজিক দূরত্ব এবং সংক্রামিত জনগোষ্ঠীর বিচ্ছিন্নতা তৈরি। এমনটা করে ২০০২-০৩ সালে সিঙ্গাপুর এবং হংকং সারসের প্রাদুর্ভাবের সময় সফল হয়েছিল।

প্রশ্ন আসতে পারে কেন এই পৃথকীকরণ? আসলে কোভিড-২০১৯ এ আক্রান্ত রোগী কখন রোগ ছড়ানো শুরু করে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আক্রান্ত সময়ের পুরো অংশ জুড়েই হয়ত রোগ ছড়াতে পারে তাই ১৪ দিন ধরে চলে এই পৃথকীকরণ।

পৃথকীকরণ করার জন্য হাসপাতালের প্রয়োজন নেই। এই রোগে আক্রান্ত ৮০% একেবারেই স্বাভাবিক সুস্থতা অর্জন করেন, ১৪% মানুষের কিছু জটিলতা তৈরি হয় আর ৬% মানুষ বেশি খারাপ হয়ে যায়।

তাই সর্দি, কাশি হলেই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ঝুঁকিমুক্ত থাকার চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।

গতবার ডেঙ্গু মৌসুমে দেখা গিয়েছিল আশঙ্কা থেকে অনেকেই বাসা-বাড়িতে যেতে চাননি পরিপূর্ণ সুস্থতা আসা পর্যন্ত। এর দ্বারা দেখা যায় জটিল রোগীর ব্যবস্থপনায় ত্রুটি থেকে যায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে কোথায় কোথায় এই রোগের চিকিৎসা চলে।

দেশজুড়ে চালানো আসলেই সম্ভব নয় নানা কারণে। অন্যতম কারণগুলো হলো-

১. সংক্রমণ প্রতিহত করার জন্য যেসব উপকরণ রয়েছে তার অপর্যাপ্ততা রয়েছে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে।

২. এই রোগ নির্ণয় অন্য যেকোনো ভাইরাসের মত নয়। RT-PCR এর মাধ্যমে এটি নির্ণয় করা লাগে। এবং ল্যাব থাকা প্রয়োজন লেবেল-৩ পর্যায়ের ন্যূনতম। যেটি IEDCR এই রয়েছে।

৩. আমরা সবাই জানি ইবোলা রোগের প্রাদুর্ভাবের সময় একে নিয়ন্ত্রণ করা দুরূহ হয়ে গিয়েছিল স্বাস্থ্য কর্মীদের মৃত্যুর কারণে। ইতিমধ্যে কোভিড-২০১৯ এও বেশ কয়েকজন চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করেছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তরে। তাই স্বাস্থ্যকর্মীদের দিকেও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।

সামাজিক ভূমিকা কী হতে পারে?

যেদিন জানা গেলো আমাদের দেশে কোভিড-২০১৯ সংক্রমন ঘটেছে, সেদিনই গণহারে মাস্ক, হাত পরিষ্কার করার সরঞ্জামাদি শঙ্কট তৈরি হয়ে গেলো। এক শ্রেণির মুনাফাকারীদের জন্য এটি আশীর্বাদ হিসাবেই এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিন্তু বলে দিয়েছে যিনি সুস্থ তিনি মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। উপরন্তু সুস্থ মানুষ যদি সব সময় মাস্ক পরিধান করেন তবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ৫% পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। আমি মাস্ক বেশিরভাগ কিনে নিয়ে আসলাম, আমার প্রতিবেশী পেল না।

তিনি যদি আক্রান্ত হয়ে পড়েন তবে আমারও নিস্তার নেই কারণ বাজারে প্রাপ্ত মাস্ক কোভিড-২০১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে না বলেই প্রকাশিত। এর জন্য প্রয়োজন বিশেষায়িত মাস্ক।

উইঘুরে মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের কারণেই করোনার প্রাদুর্ভাব?

চীন দেশে উইঘুরে মুসলিমদের ওপর নির্যাতন স্বরূপ এমন হয়েছে ভাবছেন অনেকে। স্রষ্টার বিচার নিয়ে এতো সহজে কিভাবে আমরা হিসাব করি?

তিনি কি সবাইকে নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন না?

যিনি তাকে স্মরণ করেন তাকেও দিচ্ছেন আবার যিনি করেন না তাকেও দিচ্ছেন। কাজেই এসব ব্যাধি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা উচিত নয়। সবার জন্য দোয়া করলে সেই দোয়াই কবুল হয়। মসজিদ-মন্দির-গির্জা-প্যাগড়ায় ধর্মীয় গুরুরা মানুষকে সচেতন করা উচিত কিভাবে এর থেকে বেঁচে থাকা যায়।

জনপ্রিয় ব্যক্তিবর্গের ভূমিকা

কয়েকদিন পূর্বে দেখা গেলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখাচ্ছেন কিভাবে হাঁচি-কাশি নিরাপদে দিতে হয়। সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। বিষয়টি আসলে খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ভদ্রতা প্রদর্শনমূলক ভিডিও।

উন্নত দেশ হতে হলে শুধু পকেটের টাকা দিয়ে আগালে হয় না,সামাজিক ব্যবহারেও শালীনত আনা খুবই জরুরি। জনপ্রিয় ব্যক্তিবর্গকে সাধারণত জনমানুষ অনুকরণ করে, কিছু করে দেখালে সহজে সেই বার্তা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। টেলিভিশনে এমন অনুষ্ঠান ঘন ঘন প্রচার করা জরুরি যাতে রোগের সংক্রমন কম হয়।

সামাজিক মাধ্যমের দায়িত্ব

একটি গ্লাসে পানি ঢালা হলো অর্ধেক পরিমাণ। বিশ্লেষণ করতে দিলে কেউ বলবে গ্লাসটির অর্ধেক পরিমাণ পানি আবার কেউ বলবে অর্ধেক খালি। সম্পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির বিষয় এটি। বাংলায় একটি কথা রয়েছে- ‘বনের বাঘে খায় না, খায় মনের বাঘে’।

ভয় ঢুকলে সেটি প্রতিনিয়ত আমাদের দুর্বল করে। তাই কোভিড-২০১৯ এ আক্রান্তের খবর প্রচারের চেয়ে পজিটিভ খবর প্রচার করলে তা বেশি কার্যকর দুর্যোগ মোকাবেলায়।

কোভিড-২০১৯ এর ব্যাপারে সরকার উদাসীন, ব্যর্থ ইত্যাদি হিসাব করার অবকাশ নেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুরুর দিকেই বলে দিয়েছিল সমগ্র বিশ্বের জন্য এটি হুমকি। এই পর্যন্ত সেসব দেশে এর প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছে সেসব দেশে সরকারি ব্যবস্থাপনার চেয়ে জনগণের ভূমিকাতেই একে প্রতিহত বা ক্ষতির হার হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে।

 

লক্ষণ নিয়ে অতীব চিন্তার যেমন প্রয়োজন নেই তেমনি অবহেলা করে রোগ ছড়ানোটাও অনুচিত। এই রোগে মৃত্যুর হার ৬%, কিন্তু আমার কিছু হলে তা আমি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জন্য ১০০%ই ক্ষতি।

স্বাস্থ্যকর খাবার, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করি, নিজে সুস্থ থাকি এবং অপরকেও সুস্থ রাখতে ভূমিকা পালন করি।

করোনাভাইরাস

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম