Logo
Logo
×

ডাক্তার আছেন

যেভাবে বর্ষার রোগ প্রতিরোধ করবেন

Icon

ডা. চৌধুরী সাইফুল আলম বেগ

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৩, ১১:৪৯ এএম

যেভাবে বর্ষার রোগ প্রতিরোধ করবেন

ঋতু বদলের পালায় এখন বর্ষা মৌসুম। এ সময়ে হঠাৎ গরম, হঠাৎ বৃষ্টি। আশপাশের পরিবেশ বৃষ্টির পানিতে ভেজা থাকে এবং স্যাঁতসেঁতে অবস্থা বিরাজ করে। বর্ষা মৌসুমে একটু বেশি সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। বর্ষার প্রকৃতির বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্প বেশি থাকে। ঠান্ডা গরম মিশ্রিত আবহাওয়া শরীরের জন্য তেমন আরামদায়ক নয়। এ সময় পানিবাহিত রোগজীবাণু ছড়ায় বেশি। নিচে বর্ষার কয়েকটি রোগ নিয়ে আলোচনা করা হলো-

* জ্বর : জ্বর, সর্দি, কাশি বর্ষার প্রধান রোগ। এ মৌসুমে খুবই সাবধানে চলাফেরা করতে হয়, অন্যথায় নানা রোগের আক্রমণে জটিলতা সৃষ্টি করে। যাদের দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারা এসব রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। এ সময়ে ঘরে ঘরে জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তবে মনে রাখবেন, জ্বর কোনো রোগ নয়, অন্য কোনো রোগের লক্ষণ মাত্র। ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হলে হাঁচি, কাশি, চোখ লাল হওয়া ও শরীরে ব্যথা হতে পারে। এ অবস্থা ২/৩ দিন থাকতে পারে। তবে জ্বর যদি ৪/৫ দিন স্থায়ী হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ মতে ওষুধ খেতে হবে। এ অবস্থায় তরল খাবার ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া ভালো।

* ডায়রিয়া : পানিবাহিত রোগের মধ্যে অন্যতম হলো ডায়রিয়া। দূষিত পানি পান বা ব্যবহার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, অপুষ্টি ও কৃমির আক্রমণে ডায়রিয়া হতে পারে। এতে ঘন ঘন পাতলা পায়খানা, পেটব্যথা ও জ্বর থাকতে পারে। এ অবস্থায় শরীর থেকে প্রচুর পানি ও খনিজ লবণ বের হয়ে যায়। তাই রোগী শুকিয়ে যায় এবং দুর্বল হয়ে পড়ে। এ অবস্থা দেখা দিলে খাবার স্যালাইন কিছুক্ষণ পরপর খেতে হবে। শিশু হলে অবশ্যই তার মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এ রোগ থেকে বাঁচতে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। রান্নাঘর, থালাবাসন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতে পচা, বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। বাড়ি ঘর তেলাপোকা, আরশোলা, মাছিমুক্ত রাখতে হবে।

* ম্যালেরিয়া : স্ত্রী এনোফিলিস মশার কামড়ে এ রোগ হয়। শরীর কেঁপে কেঁপে নির্দিষ্ট সময় পরপর জ্বর আসে। মাংসপেশিতে ব্যথা, শরীর দুর্বল হয় ও খাবারে অরুচি দেখা দেয়। জ্বর ৪/৫ দিনের বেশি স্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এসব মশা বদ্ধ জলাশয়ে, বাড়ির আশপাশে ঝোপঝাড়ে, ঘরের পাশে ফেলা টব, বালতি, হাঁড়িপাতিল, বাসন ইত্যাদিতে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে বসবাস করে এবং বংশবিস্তার করে। তাই এসব অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঘুমানোর আগে মশারি ব্যবহার করবেন।

* কৃমি সংক্রমণ : বর্ষাকালেই কৃমির আক্রমণ বেশি হয়। এ সময় চারপাশে পানি আর স্যাঁতেসেঁতে পরিবেশের মাটিতে মিশে থাকে কৃমির পরজীবী জীবাণু। কৃমির সংক্রমণ হয় মল থেকে মুখে। একজনের মল থেকে খাবার পানির মাধ্যমে অন্যজন সংক্রমিত হয়। কৃমির জীবাণু মাটিতে-পানিতে মিশে থাকে। তাই খালি পায়ে হাঁটলে পায়ের সংস্পর্শে চামড়া ভেদ করে শরীরে প্রবেশ করে এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কৃমিতে রূপ নেয়। এর আক্রমনে শরীরে রক্তশূন্যতা, ক্ষুধামন্দা, বদহজম, পেটব্যথা, ডায়রিয়া হয়। এ ছাড়া চামড়ায় চুলকানি, এপেনডিসাইটিস, জণ্ডিস, হাঁপানি, পেপটিক আলসার ও মহিলাদের সাদা স্রাব বের হওয়ার মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

* প্রতিরোধ : মল ত্যাগের পর, খাবার পরিবেশনের আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। যে কোনো ফলমূল খাওয়ার আগে ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। নিয়মিত হাতের নখ কেটে ছোট রাখতে হবে। যেখানে-সেখানে পায়খানা করা যাবে না। নির্দিষ্ট জায়গায় গর্ত করে কিংবা স্যানেটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত গোসল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জামা-কাপড় ব্যবহার করতে হবে। জুতা পায়ে হাঁটতে হবে। শিশুদের ধুলাবালিতে খেলতে না দেওয়াই ভালো। আধা সিদ্ধ মাছ, মাংস খাওয়া যাবে না। প্রতি তিন মাস পরপর কৃমিনাশক ওষুধ পরিবারের সবাই একসঙ্গে খেতে হবে। তবে এক বছরের কম বয়সের শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের কৃমির ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।

লেখক: মেডিকেল এডুকেটর অ্যান্ড জিপি এক্সমিনার, সিনিয়র জিপি, ওয়াল্টার্স রোড মেডিকেল সেন্টার, ব্ল্যাক টাউন, অস্ট্রেলিয়া।

বর্ষা রোগ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম