ডেঙ্গুতে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, বাঁচতে কী করবেন
চারদিকে শুধু জ্বর আর জ্বর। এদের অনেকেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। ডেঙ্গু জ্বরে রোগীর মৃত্যু ২৩ বছরের ইতিহাসে এ বছর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি, ৪৭৬ জন।
কেন এত বেশি মৃত্যু হচ্ছে?
আসলে ডেঙ্গু সম্পর্কে এখনো সবার মধ্যে সেই ভাবে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি।
সেই করোনার সময় থেকে দেখছি— স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য অনেক প্রচার আমরা চালিয়েছিলাম স্বাস্থ্যসেবা খাত থেকে। মানুষকে সচেতন করার জন্য; কিন্তু শুরুতে তেমন একটা স্বাস্থ্যবিধি মানত না; ঠিক সেভাবেই ডেঙ্গু নিয়েও আমরা এতো সচেতনতার কথা বলছি। কিন্তু মানুষ এখনো উদাসীন।
ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে-
১। রোগী হাসপাতালে অনেক বেশি দেরিতে আসছে;
২। নিজ থেকেই ব্যথানাশক (NSAIDs) ওষুধ যা খুবই মারাত্মক তা খেয়ে ফেলছে;
৩। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছে;
৪। রক্তক্ষরণ হলে অথবা পেটে ব্যথা করলে সেটা আমলে নিচ্ছে না;
এসব কারণে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হার বাড়ছে।
কী করবেন
ডেঙ্গুর জন্য ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট বা তরল পদার্থের প্রয়োজনটা সবচেয়ে বেশি হয়। পরিপূর্ণ বিশ্রাম এই সময় নিতে হয়। প্রোটিন জাতীয় খাবারের পাশাপাশি তরল খাবার ওরাল স্যালাইন বেশি করে খেতে হয়। তরল খাবার মুখে যতক্ষণ খেতে পারবেন ততক্ষণ খাবেন। যদি পাতলা পায়খানা অথবা বমি হয়, যদি মুখে খাবার খেতে না পারেন, তা হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে স্যালাইন দিতে হবে।
নিজের বাসায় জমানো পানি ৩ দিনের বেশি সময় পার হলে ফেলে দিন। পারলে প্রতিদিন পানির পাত্র পরিষ্কার করুন এবং পানি অবশ্যই ঢেকে রাখবেন।
অতিরিক্ত ডাবের পানি নয়
ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। সে জন্য আমরা ডাব খেতে বলি। কিন্তু অতিরিক্ত কোনো কিছু ভালো না; পরিমাণমতো খেতে হয়। শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে পটাশিয়াম বের হয়ে যায়, যখন ডেঙ্গুতে ডায়রিয়া হচ্ছে, তখন শরীরে ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য সোডিয়াম পটাশিয়াম পরিমাণটা ঠিক রাখার জন্য ডাবের পানি খেতে বলি; কিন্তু পরিমাণ মতো খেতে হবে। অতিরিক্ত ডাব খেলে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি বেড়ে গেলে তখন সেটা কিডনির ওপর চাপ তৈরি করে।
ডেঙ্গুতে শরীরে প্রচুর ঘাম তৈরি হয়, তাই আমরা ওরস্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি।
আর সঙ্গে তো আছে বিশুদ্ধ পানির পরিমাণ ২ থেকে ৩ লিটার। অতিরিক্ত ডাবের পানি পান করার অভ্যাসে শরীরে বেশি পরিমাণ এ পটাশিয়াম জমে যায়, যা কিডনি ও হৃৎপিণ্ড দুটোর ওপর চাপ তৈরি হয়ে কার্যকর ক্ষমতাটা কিছুটা কমিয়ে দেয়।
তাই ডেঙ্গু হলে পরিপূর্ণ বিশ্রামের পাশাপাশি খাবারের মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানি, বার্লি, সহজপাচ্য খাবার ঘরের তৈরি সেগুলো খাবে। শুরুতে ডাক্তারের পরামর্শ মতো চললে মৃত্যুঝুঁকি কমে যায়।
আর নয় অবহেলা
এখনি সময় ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার। এডিস মশা জন্মাতে দেওয়া যাবে না। আতঙ্কিত নয় সচেতন হন।
লেখক: সহকারী পরিচালক
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল।
ডেঙ্গুতে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, বাঁচতে কী করবেন
ডা. আয়শা আক্তার
২১ আগস্ট ২০২৩, ১৩:৩২:৪৫ | অনলাইন সংস্করণ
চারদিকে শুধু জ্বর আর জ্বর। এদের অনেকেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। ডেঙ্গু জ্বরে রোগীর মৃত্যু ২৩ বছরের ইতিহাসে এ বছর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি, ৪৭৬ জন।
কেন এত বেশি মৃত্যু হচ্ছে?
আসলে ডেঙ্গু সম্পর্কে এখনো সবার মধ্যে সেই ভাবে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি।
সেই করোনার সময় থেকে দেখছি— স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য অনেক প্রচার আমরা চালিয়েছিলাম স্বাস্থ্যসেবা খাত থেকে। মানুষকে সচেতন করার জন্য; কিন্তু শুরুতে তেমন একটা স্বাস্থ্যবিধি মানত না; ঠিক সেভাবেই ডেঙ্গু নিয়েও আমরা এতো সচেতনতার কথা বলছি। কিন্তু মানুষ এখনো উদাসীন।
ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে-
১। রোগী হাসপাতালে অনেক বেশি দেরিতে আসছে;
২। নিজ থেকেই ব্যথানাশক (NSAIDs) ওষুধ যা খুবই মারাত্মক তা খেয়ে ফেলছে;
৩। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছে;
৪। রক্তক্ষরণ হলে অথবা পেটে ব্যথা করলে সেটা আমলে নিচ্ছে না;
এসব কারণে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হার বাড়ছে।
কী করবেন
ডেঙ্গুর জন্য ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট বা তরল পদার্থের প্রয়োজনটা সবচেয়ে বেশি হয়। পরিপূর্ণ বিশ্রাম এই সময় নিতে হয়। প্রোটিন জাতীয় খাবারের পাশাপাশি তরল খাবার ওরাল স্যালাইন বেশি করে খেতে হয়। তরল খাবার মুখে যতক্ষণ খেতে পারবেন ততক্ষণ খাবেন। যদি পাতলা পায়খানা অথবা বমি হয়, যদি মুখে খাবার খেতে না পারেন, তা হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে স্যালাইন দিতে হবে।
নিজের বাসায় জমানো পানি ৩ দিনের বেশি সময় পার হলে ফেলে দিন। পারলে প্রতিদিন পানির পাত্র পরিষ্কার করুন এবং পানি অবশ্যই ঢেকে রাখবেন।
অতিরিক্ত ডাবের পানি নয়
ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। সে জন্য আমরা ডাব খেতে বলি। কিন্তু অতিরিক্ত কোনো কিছু ভালো না; পরিমাণমতো খেতে হয়। শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে পটাশিয়াম বের হয়ে যায়, যখন ডেঙ্গুতে ডায়রিয়া হচ্ছে, তখন শরীরে ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য সোডিয়াম পটাশিয়াম পরিমাণটা ঠিক রাখার জন্য ডাবের পানি খেতে বলি; কিন্তু পরিমাণ মতো খেতে হবে। অতিরিক্ত ডাব খেলে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি বেড়ে গেলে তখন সেটা কিডনির ওপর চাপ তৈরি করে।
ডেঙ্গুতে শরীরে প্রচুর ঘাম তৈরি হয়, তাই আমরা ওরস্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি।
আর সঙ্গে তো আছে বিশুদ্ধ পানির পরিমাণ ২ থেকে ৩ লিটার। অতিরিক্ত ডাবের পানি পান করার অভ্যাসে শরীরে বেশি পরিমাণ এ পটাশিয়াম জমে যায়, যা কিডনি ও হৃৎপিণ্ড দুটোর ওপর চাপ তৈরি হয়ে কার্যকর ক্ষমতাটা কিছুটা কমিয়ে দেয়।
তাই ডেঙ্গু হলে পরিপূর্ণ বিশ্রামের পাশাপাশি খাবারের মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানি, বার্লি, সহজপাচ্য খাবার ঘরের তৈরি সেগুলো খাবে। শুরুতে ডাক্তারের পরামর্শ মতো চললে মৃত্যুঝুঁকি কমে যায়।
আর নয় অবহেলা
এখনি সময় ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার। এডিস মশা জন্মাতে দেওয়া যাবে না। আতঙ্কিত নয় সচেতন হন।
লেখক: সহকারী পরিচালক
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023