সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য বিয়ের আগে যে বিষয়গুলো জানা জরুরি
কামরুল হাসান কাওছার
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৩:৩৮ পিএম
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিয়ে কেবল দুটি মানুষের মিলন নয়, দুটি পরিবারের বন্ধনও বটে। সুস্থ ও
সুন্দর দাম্পত্য জীবনের জন্য শারীরিক সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের আগে কিছু
নির্দিষ্ট রোগের পরীক্ষা করানো শুধু নবদম্পতির সুস্থতার জন্যই নয়, তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের
সুস্বাস্থ্যের জন্যও অপরিহার্য।
কিছু রোগ আছে যেগুলো বাইরে থেকে বোঝা যায় না। কিন্তু বিয়ের পরে খুব সহজে
স্বামী থেকে স্ত্রী, আবার স্ত্রী থেকে স্বামী বা তারা যখন সন্তান নেন; তখন তাদের মাঝে ছড়াতে পারে। এক্ষেত্রে একটু সচেতন হয়ে আগেই
কিছু পরীক্ষা করালে রোগগুলো ধরা সম্ভব, চিকিৎসা করে সারিয়ে তোলা বা পরিবারের মাঝে রোধ
করা সম্ভব।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সহায় হেলথের সহপ্রতিষ্ঠাতা ডা. তাসনিম
জারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নিজস্ব চ্যানেলগুলোতে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর জন্য
৬টি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার কথা তুলে ধরেছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই পরীক্ষাগুলো সম্পর্কে:
১. থ্যালাসেমিয়া (Thalassemia)
থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। এটি পিতামাতা থেকে সন্তানের মধ্যে
ছড়াতে পারে। যদি স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তবে তাদের সন্তানের
গুরুতর থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এই রোগ প্রতিরোধে বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া
স্ক্রিনিং (Hemoglobin Electrophoresis) অত্যন্ত জরুরি।
থ্যালাসেমিয়া রোগ সম্পূর্ণ প্রতিরোধ যোগ্য। সিম্পল একটা রক্ত পরীক্ষার
মাধ্যমেই জেনে নেওয়া যায় এ রোগের বিষয়ে। বিয়ের আগে যদি এই পরীক্ষাটি না করা হয় তাহলে
ভবিষ্যতে আপনাদের সন্তানেরও থ্যালাসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে।
এই পরীক্ষাটি করালে ফলাফল কেমন আসতে পারে
- দুজনের একজনেরও রক্তে কোনো সমস্যা নাই।
এমন ফলাফলে আসলে বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া
হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই।
- দুইজনের মধ্যে একজনের থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়লে
এ ক্ষেত্রেও বাচ্চার এ রোগটি
হওয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই। তবে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া মাইনর হওয়ার ৫০ শতাংশ
সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ বাচ্চা অসুস্থ হবে না, কিন্তু সে থ্যালাসেমিয়ার বাহক হতে পারে।
- দুইজনেরই থ্যালাসেমিয়া মাইনর ধরা পড়লে-
এই ক্ষেত্রে বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মানোর সম্ভবনা আছে।
২. হেপাটাইটিস বি পরীক্ষা (Hepatitis B)
হেপাটাইটিস বি একটা ভাইরাস যা
আমাদের লিভারে গরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। শুধু তাই না, ক্যান্সার পর্যন্ত হতে
পারে। কিন্তু যাদের শরীরে এই ভাইরাসটা বসবাস করছে, তারা অনেকেই জানেন না যে তারা এই
ভাইরাসে আক্রান্ত। ফলে নিজের অজান্তেই তারা অন্যদের মাঝেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন।
এছাড়া সুরক্ষা ছাড়া সহবাস করলে একজন থেকে আরেকজনের শরীরে এই ভাইরাস ছাড়াতে পারে। তাই
বিয়ের আগেই দুজনে এ পরীক্ষাটি করা পারেন।
৩. হেপাটাইটিস সি (Hepatitis C)
হেপাটাইটিস বি এর মত হেপাটাইটিস সি-ও এক ধরনের ভাইরাস। এটা ছড়ায় সাধারণত
রক্তের মাধ্যমে। যেমন- একই সুই বা ইনজেকশন ব্যবহার করলে যাতে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত
লেগে থাকতে পারে, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ঠিকমত জীবাণুমুক্ত না করলে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।
এছাড়া সুরক্ষা ছাড়া সহবাস করলে বা মায়ের দুধ পানেও আক্রান্ত হতে পারে এই রোগে।
এই রোগটি লিভার অনেকটুকু নষ্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত এ রোগে লক্ষণ দেখা যায়
না। তাই বিয়ে আগে থ্যালাসেমিয়া- সি পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারে।
৪. এইচআইভি পরীক্ষা
এইচআইভির ব্যাপারে আপনারা কমবেশি প্রায় সবাই জানেন। আকান্ত ব্যক্তির
সঙ্গে সহবাসের মাধ্যমে সাধারণত এটা ছড়ায়।এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির সুই বা ইনজেকশন ব্যবহার
করলে, জন্মের সময়ে মায়ের কাছ থেকে বা মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে শিশু এই ভাইরাসে আক্রান্ত
হতে পারে।
অনেকের ক্ষেত্রে বহু বছর ধরে এই ভাইরাসের কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে।
আর সেই সময় একজনকে থেকে আরেকজনে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। স্ত্রী থেকে স্বামী, স্বামী
থেকে স্ত্রী, মা থেকে সন্তানের মধ্যে এ রোগ ছড়াতে পারে। তাই বিয়ে আগে এই পরীক্ষাটি
করে ফেলাই শ্রেয়।
৫. যৌনবাহিত রোগ পরীক্ষা
অনেকেই যৌনবাহিত রোগে ভোগেন কিন্তু তিনি হয়তো জানেন না। শুধু মাত্র
টেস্ট করার পরেই ধরা পড়ে। কিন্তু অনেকেরই যেহেতু কোনো লক্ষণ থাকে না। ফলে টেস্ট করাও
হয় না, রোগও ধরা পরে না। পরে নানান ধরনের শারীরিক সমস্যা যেমন- সন্তানধারণের সমস্যা
দেখা দিতে পারে। অথচ সময়মত অল্প কয়েকদিনের অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স নিলেই রোগটা সেরে
যেত।
এই চারটি কমন যৌনবাহিত রোগ পরীক্ষা করাতে পারেন। যেমন- সিপিলিস, গনোরিয়া,
ক্লামেডিয়া, ট্রিকোমনায়সিস।
৬. ব্লাড গ্রুপ
ব্লাড গ্রুপ এবং আরএইচ ফ্যাক্টর পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে Rh নেগেটিভ মায়ের ক্ষেত্রে যদি বাবা Rh পজিটিভ হন, তবে গর্ভাবস্থায় সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যাকে Rh ইনকম্প্যাটিবিলিটি (Rh Incompatibility) বলে, যা শিশুর জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এই ক্ষেত্রে আগাম প্রস্তুতি ও সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
