পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত অনুমোদন
সঞ্চয়ীদের অর্থ ফেরতে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক: প্রথমে পাঁচ ব্যাংক অধিগ্রহণ করবে সরকার * ২০ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে সরকার শেয়ার পাবে * পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ছয় সদস্যের উপকমিটি * শিগগিরই রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
লুটপাটের কারণে দুর্বল হওয়া বেসরকারি খাতের পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক একমত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যাংকের আপত্তি গ্রহণ করা হবে না। একীভূত করার প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুকূলে ধাপে ধাপে ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড় করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। একীভূত করার পুরো প্রক্রিয়াটি দেখভাল করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. কবির আহমদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি ব্যাংক একীভূত করার পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করবে। এর মধ্যে দিয়ে এখন থেকে পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণের জন্য আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলো। কমিটিকে বলা হয়েছে একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে। অচিরেই উপকমিটি বৈঠক করে ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে একটি রোডম্যাপ তৈরি করবে।
রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয়ে এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর অনলাইনে যোগ দেন। বৈঠকে উপস্থিতি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাপক লুটপাটের কারণে বেসরকারি খাতের পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক মাত্রাতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। এসব ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানাভাবে নীতি সহায়তা দিয়েও স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সময় বেঁধে দিয়ে এসব ব্যাংককে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বলা হয়। কিন্তু পাঁচ ব্যাংক পারেনি। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এগুলোকে একীভূতকরণ করে বড় একটি ইসলামী ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। এর আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে পাঁচ ব্যাংককে শুনানির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আহ্বান করে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। শুনানিতে এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয়ে তীব্র আপত্তি করে। বাকি তিন ব্যাংক একীভূতকরণের পক্ষে একমত পোষণ করে।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতে দুর্বল ব্যাংকগুলোর সার্বিক চিত্র তুলে ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। এতে দুই ব্যাংক একীভূতকরণের বিপক্ষে মতামত দিয়েছে সেই তথ্যও জানানো হয়। বৈঠকে পাঁচ ব্যাংকের সব তথ্য বিশ্লেষণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় দুই পক্ষই একমত পোষণ করে যে এই পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণ করা হবে। এতে কারও কোনো আপত্তি গ্রহণ করা হবে না। কারণ যে দুটি ব্যাংক আপত্তি করেছে তারাও এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তা ছাড়া চলতে পারছে না।
একীভূতকরণ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদামতো ২০ হাজার কোটি টাকার জোগান দিতে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মত হয়েছে। ধাপে ধাপে এসব অর্থ সরকার থেকে দেওয়া হবে। এর বিপরীতে সরকার নব-গঠিত ব্যাংকের সমপরিমাণ শেয়ার পাবে। একীভূতরণের প্রক্রিয়ায় পাঁচ ব্যাংক হয়ে যাবে সরকারি খাতের ব্যাংক। ওই অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানতকারীদের বকেয়া অর্থ পরিশোধে ও অন্যান্য খাতে খরচ করবে। তবে বড় অংশই ব্যয় হবে আমানতকারীদের অর্থের জোগান দিতে।
এই কার্যক্রমটি সম্পন্ন করতে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. কবির আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি তিন সদস্য থাকবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এবং বাকি দুজন থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে।
