সফল উদ্যোক্তা মুফতি সাইফুল ইসলামের জুতার কারখানার গল্প
jugantor
সফল উদ্যোক্তা মুফতি সাইফুল ইসলামের জুতার কারখানার গল্প

  অনলাইন ডেস্ক  

২৩ আগস্ট ২০২২, ১৮:০৪:০৯  |  অনলাইন সংস্করণ

সফল উদ্যোক্তা মুফতি সাইফুল ইসলামের জুতার কারখানার গল্প

তিনি একজন মাদ্রাসাশিক্ষক। প্রচণ্ড পরিশ্রমী ও মেধাবী। মাদ্রাসার দরিদ্র শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নানাভাবে সহায়তা করার জন্য তিনি গঠন করেন গোরাবা ফান্ড। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই ফান্ডে মানুষ টাকা পাঠাতো। সেই টাকা দিয়েই দরিদ্র শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সহযোগিতা করতেন এই আলেম।

কিন্তু দেশে যখন বৈশ্বিক মহামারি করোনা আঘাত হানে, তখন যারা গোরাবা ফান্ডে টাকা পাঠাতেন তারা টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেন। তাই বন্ধ হয়ে যায় গোরাবা ফান্ড থেকে সহযোগিতা করাও। শুধু বন্ধ হয় না এই ফান্ড থেকে যারা সহযোগিতা নিতেন তাদের আহাজারি ও আর্তনাদ।

মাদ্রাসার দরিদ্র-অসহায় ছাত্ররা ফোন দিয়ে বলতো, হুজুর মাদ্রাসায় বেতন দিতে পারছি না, একটু সহযোগিতা করেন। কোনো শিক্ষক বলতেন, আমার বেশি কিছু লাগবে না, এক কেজি চাল কিনে দেন। গোরাবা ফান্ড তো খালি। একটা পয়সাও নেই। কীভাবে সহযোগিতা করবেন এই আলেম। বিষয়টি অনেক যন্ত্রণা দিত তাকে।

তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তিনি নিজে স্বাবলম্বী হবেন এবং অন্য আলেমদেরও স্বাবলম্বী করবেন। এরপরই তিনি গড়ে তুলেন এস কে এম নামে একটি জুতার কারখানা।

ওই আলেমের নাম মুফতি সাইফুল ইসলাম। তিনি ফরিদপুরের ভাঙ্গা, আলগীর শুখনী গ্রামের মরহুম সোহরাব মাতুব্বরের ছেলে। গোপালগঞ্জের জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামপুর মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) এবং ইফতা সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি মানিকগঞ্জ জামিয়া আরাবিয়া সিদ্দিকিয়া মাদ্রাসায় তিন বছর শিক্ষকতা করেন।

মুফতি সাইফুল ইসলামের গোরাবা ফান্ড যখন বন্ধ হওয়ার পথে, তখন সহকর্মীদের নিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য নিয়ে কমিশনের ভিত্তিতে বিক্রি করা শুরু করেন তিনি। পণ্যগুলো অনলাইনে যখন ভালোই বিক্রি হচ্ছিল, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন- নিজেই পণ্য বানিয়ে বিক্রি করবেন।

মুফতি সাইফুল ইসলামের ছোটভাই জুতা তৈরির কাজ করতেন। তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই পরবর্তীতে বড় পরিসরে জুতা তৈরির কাজ শুরু করেন। তাদের এই কোম্পানির নাম দেয়া হয় এস কে এম।

মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, যখন জুতা তৈরির কারখানা করার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন আমার কাছে কোনো পুঁজি ছিল না। আমার মা, ছোটভাই এবং অনেকেই তখন আমাকে সহযোগিতা করেন।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালে মাত্র ৮ হাজার টাকা বিনিয়োগে আমাদের পথচলা শুরু হয়। বর্তমানে আমাদের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৭০ লাখ টাকা। আমাদের কারখানায় ৩০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এ ছাড়াও আমাদের পণ্য নিয়ে কাজ করছেন শতাধিক আলেম।

মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেক মাসে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার জুতা বিক্রি হয় আমাদের কারখানা থেকে। সারা দেশে প্রত্যেক জেলায় এবং উপজেলায় এস কে এমের ডিলার নিয়োগ চলছে। তবে তারা আলেম বা দ্বীনদার মানুষ ছাড়া ডিলার নিয়োগ দেন না।

মুফতি সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা জুতা বিক্রির পর থেকে আজ পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে নেতিবাচক কোনো মন্তব্য পাইনি।

তাছাড়া প্রসিদ্ধ আলেম শায়েখ আহমাদুল্লাহ, মাওলানা উবাইদুর রহমান খান নদভী, মাওলানা সাইফুল্লাহসহ শীর্ষ পর্যায়ের আলেমরা আমাদের এস কে এম সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন এবং আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা আশা করছি, একদিন আমাদের এই জুতার কোম্পানি শীর্ষ জুতার কোম্পানিগুলোর মধ্যে জায়গা করে নেবে।

সফল উদ্যোক্তা মুফতি সাইফুল ইসলামের জুতার কারখানার গল্প

 অনলাইন ডেস্ক 
২৩ আগস্ট ২০২২, ০৬:০৪ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ
সফল উদ্যোক্তা মুফতি সাইফুল ইসলামের জুতার কারখানার গল্প
মুফতি সাইফুল ইসলামের জুতার কারখানায় এখন ৩০ জন শ্রমিক কাজ করেন।

তিনি একজন মাদ্রাসাশিক্ষক। প্রচণ্ড পরিশ্রমী ও মেধাবী। মাদ্রাসার দরিদ্র শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নানাভাবে সহায়তা করার জন্য তিনি গঠন করেন গোরাবা ফান্ড। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই ফান্ডে মানুষ টাকা পাঠাতো। সেই টাকা দিয়েই দরিদ্র শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সহযোগিতা করতেন এই আলেম। 

কিন্তু দেশে যখন বৈশ্বিক মহামারি করোনা আঘাত হানে, তখন যারা গোরাবা ফান্ডে টাকা পাঠাতেন তারা টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেন। তাই বন্ধ হয়ে যায় গোরাবা ফান্ড থেকে সহযোগিতা করাও। শুধু বন্ধ হয় না এই ফান্ড থেকে যারা সহযোগিতা নিতেন তাদের আহাজারি ও আর্তনাদ। 

মাদ্রাসার দরিদ্র-অসহায় ছাত্ররা ফোন দিয়ে বলতো, হুজুর মাদ্রাসায় বেতন দিতে পারছি না, একটু সহযোগিতা করেন। কোনো শিক্ষক বলতেন, আমার বেশি কিছু লাগবে না, এক কেজি চাল কিনে দেন। গোরাবা ফান্ড তো খালি। একটা পয়সাও নেই। কীভাবে সহযোগিতা করবেন এই আলেম। বিষয়টি অনেক যন্ত্রণা দিত তাকে। 

তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তিনি নিজে স্বাবলম্বী হবেন এবং অন্য আলেমদেরও স্বাবলম্বী করবেন। এরপরই তিনি গড়ে তুলেন এস কে এম নামে একটি জুতার কারখানা।

ওই আলেমের নাম মুফতি সাইফুল ইসলাম। তিনি ফরিদপুরের ভাঙ্গা, আলগীর শুখনী গ্রামের মরহুম সোহরাব মাতুব্বরের ছেলে। গোপালগঞ্জের জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামপুর মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) এবং ইফতা সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি মানিকগঞ্জ জামিয়া আরাবিয়া সিদ্দিকিয়া মাদ্রাসায় তিন বছর শিক্ষকতা করেন। 

মুফতি সাইফুল ইসলামের গোরাবা ফান্ড যখন বন্ধ হওয়ার পথে, তখন সহকর্মীদের নিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য নিয়ে কমিশনের ভিত্তিতে বিক্রি করা শুরু করেন তিনি। পণ্যগুলো অনলাইনে যখন ভালোই বিক্রি হচ্ছিল, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন- নিজেই পণ্য বানিয়ে বিক্রি করবেন।
 
মুফতি সাইফুল ইসলামের ছোটভাই জুতা তৈরির কাজ করতেন। তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই পরবর্তীতে বড় পরিসরে জুতা তৈরির কাজ শুরু করেন। তাদের এই কোম্পানির নাম দেয়া হয় এস কে এম। 

মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, যখন জুতা তৈরির কারখানা করার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন আমার কাছে কোনো পুঁজি ছিল না। আমার মা, ছোটভাই এবং অনেকেই তখন আমাকে সহযোগিতা করেন। 

তিনি বলেন, ২০১৯ সালে মাত্র ৮ হাজার টাকা বিনিয়োগে আমাদের পথচলা শুরু হয়। বর্তমানে আমাদের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৭০ লাখ টাকা। আমাদের কারখানায় ৩০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এ ছাড়াও আমাদের পণ্য নিয়ে কাজ করছেন শতাধিক আলেম।
 
মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেক মাসে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার জুতা বিক্রি হয় আমাদের কারখানা থেকে। সারা দেশে প্রত্যেক জেলায় এবং উপজেলায় এস কে এমের ডিলার নিয়োগ চলছে। তবে তারা আলেম বা দ্বীনদার মানুষ ছাড়া ডিলার নিয়োগ দেন না। 

মুফতি সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা জুতা বিক্রির পর থেকে আজ পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে নেতিবাচক কোনো মন্তব্য পাইনি। 

তাছাড়া প্রসিদ্ধ আলেম শায়েখ আহমাদুল্লাহ, মাওলানা উবাইদুর রহমান খান নদভী, মাওলানা সাইফুল্লাহসহ শীর্ষ পর্যায়ের আলেমরা আমাদের এস কে এম সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন এবং আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা আশা করছি, একদিন আমাদের এই জুতার কোম্পানি শীর্ষ জুতার কোম্পানিগুলোর মধ্যে জায়গা করে নেবে।
 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন