মূল্যস্ফীতির কারণ জানালেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৪৫ পিএম
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ কোনো কারণে চলমান মূল্যস্ফীতি ঘটেনি। এর পেছনের অন্যতম প্রধান কারণ হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী আমদানি। এ মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামাতে এক বছরের মতো সময় লাগবে। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি আগামী মাস অথবা নভেম্বর থেকে কমতে পারে।
মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘বাংলাদেশের জন্য মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদ এড়ানো: কোরিয়া থেকে শিক্ষণীয়’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে বিশ্বব্যাংক।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপক (সামষ্টিক অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সরকারি খাত) হুন সাহিব সুহ।
সেমিনারে দক্ষিণ কোরিয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক। এতে বিশেষ আলোচক ছিলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ও নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ও পামি ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শামসুল আলম আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি এখন বড় আলোচনার বিষয় (বিগ ক্রাই)। সবাই এটি নিয়ে চিন্তিত। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়েনি। এটি বাইরে থেকে এসেছে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়ানোসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পলিসি রেটগুলো বাড়ানো হয়েছে। আমদানি চাহিদা কমাতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় বাড়তি মূল্যের দায় সরকারকে দেওয়া যায় না। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার জন্য সরকারকে এককভাবে দায়ী করা যায় না।
ডিমের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। ডিম ব্যবসায় সিন্ডিকেট থাকলে তা ভাঙবে। ডিমের দাম অবশ্যই কমবে। কারণ ডিম পাচার হয়ে দেশের বাইরে যায় না। দেশের অভ্যন্তরে সরবরাহ ব্যবস্থায় সংকটে ডিমের দাম বাড়ছে। আমি অবশ্য এখনই সিন্ডিকেটকে দায়ী করব না।
তিনি আরও বলেন, মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদ এড়িয়ে উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত হতে কোরিয়া থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে হলে আমাদের বাণিজ্যনীতি নতুন করে পুনর্বিন্যাস করতে হবে। রপ্তানির ঝুড়িতে পোশাক খাতের বাইরে আরও পণ্য বাড়াতে হবে। এছাড়া উদ্ভাবন, দক্ষ শ্রমিক ও উচ্চ উৎপাদনশীলতার মাধ্যমেই আমরা এ ফাঁদ এড়াতে পারব।
কোরিয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা হুন সাহিব সুহ বলেন, মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়াতে কোরিয়া শিল্প খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়েছিল। কোরিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের ৭৮ শতাংশ বিনিয়োগ হয়। এর বেশিরভাগ বেসরকারি বিনিয়োগ। মানবসম্পদ উন্নয়নে কোরিয়া ভোকেশনাল বা কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে। শিল্প খাতের সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পৃক্ততা থাকায় চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ শ্রমশক্তি জোগান দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কোরিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ৯৫ শতাংশ বিনিয়োগই বেসরকারি খাতের। এ সময় কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক বাংলাদেশকে উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত হতে উৎপাদন খাত শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন। এজন্য দক্ষ মানবশক্তি ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর কথাও বলেন তিনি।
মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়াতে নীতি প্রণয়নে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করার সুপারিশ করেন সিপিডির ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নের কাজটি রাজনীতিমুক্ত হতে হবে। দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করতে হবে।
পামি ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক বলেন, দেশে অনেক ভোকেশনাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে। কিন্তু শিল্প খাতের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ শ্রমশক্তি পাওয়া যায় না। গত এক দশকে আমরা পোশাক খাতের পাশাপাশি চামড়ার পণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের রপ্তানির সম্ভাবনার কথা শুনেছি। কিন্তু কার্যকর নীতির অভাবে এসব খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।