Logo
Logo
×

অর্থনীতি

প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি কেন?

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ০৬:৪৫ পিএম

প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি কেন?

প্রতীকী ছবি

দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। তবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে দেখা দেয় দীর্ঘসূত্রিতা। সরকারের নেওয়া অধিকাংশ প্রকল্পের বাড়ানো হয় মেয়াদ।  এর সঙ্গে বাড়ে খরচও। যার ফলে নষ্ট হয় টাকা। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে জনগণের কাঁধে। এছাড়া অনেক সময় দীর্ঘসূত্রিতার জেরে স্থগিত করা হয় প্রকল্প। এতে করে সুফল থেকে বঞ্চিত হয় জনগণ।

সরকারি প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ বাড়া নিয়ে কথা হলেই চলে আসে জবাবদিহির বিষয়। মেয়াদ ও খরচ বাড়া নিয়ে প্রকল্প পরিচালকদের ওপর দায় চাপাতে চান সংশ্লিষ্টরা। তবে তাদের গাফিলতির সঙ্গে রয়েছে অর্থছাড় ইস্যুও। এছাড়া ঠিকাদারের গাফিলতি থেকে শুরু করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতার জন্য দায়ী। সঙ্গে রয়েছে জলবায়ু সংক্রান্ত কিছু বিষয়ও।

এ বিষয়ে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সাবেক সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রকল্পের বিষয়ে ক্লিয়ারকাট একটি নির্দেশনা থাকা দরকার। কেননা বছরের পর বছর একই ঘটনা ঘটবে আর কোনো জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে না- এটা হতে পারে না। প্রকল্পের সংশোধন বা মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে অবশ্যই প্রকল্প পরিচালকদের গাফিলতি আছে। এ ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেরি হওয়ার পেছনে কিন্তু শুধু প্রকল্প পরিচালকরা দায়ী নন। এর পেছনে থাকে নানা কারণ। যেমন সময়মতো অর্থছাড় হয় না, ঠিকাদাররা পালিয়ে যায় ও গাফিলতি করে এবং ক্লাইমেটসংক্রান্ত কিছু বিষয়সহ নানা বিষয় যুক্ত থাকে। শেষ পর্যন্ত দায় চাপে জনগণের ওপর। মেয়াদ ও ব্যয় বেড়ে গিয়ে করের টাকা অপচয় হয়।’

এদিকে, পরিচালকদের (পিডি) চরম দায়িত্ব অবহেলার খেসারত দিতে হচ্ছে ৪০৪ উন্নয়ন প্রকল্পকে। এসব প্রকল্পে অর্থছাড় ও খরচে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। রোববার এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরিকল্পনা কমিশন থেকে এগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়।

আগামী জুন মাসেই চলমান ৪০৪ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। কিন্তু এসব প্রকল্পের কাজ এখনও শেষ হয়নি। এছাড়া এখনও প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধি কিংবা সংশোধনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় বিশেষ ‘তারকা’ চিহ্ন দিয়ে আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) যুক্ত করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় মেয়াদ বৃদ্ধি যথাসময়ে না হওয়ায় অর্থবছরের প্রথম ৪ থেকে ৫ মাস এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ করা টাকা ছাড় বা ব্যয় করা সম্ভব হয় না। ফলে এডিপির বরাদ্দ কমে যায় এবং সামগ্রিকভাবে এডিপি বাস্তবায়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ প্রকল্পগুলোর ৩০ জুনের মধ্যে মেয়াদ বৃদ্ধি বা সংশোধনের সব প্রক্রিয়া শেষ করা প্রয়োজন। যাতে অর্থবছরের শুরুতেই অর্থছাড় বা ব্যয় করা যায়। এ জন্য আগামী অর্থবছরের এডিপিতে ‘তারকা’ চিহ্ন দিয়ে রাখা যেতে পারে। তবে বাস্তবায়ন মেয়াদ বৃদ্ধি ছাড়া কোনো প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থ ছাড় বা ব্যয় করা যাবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলেও সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই। কিংবা এজন্য দায়ী প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসারও কোনো নজির নেই। ফলে এক্ষেত্রে কোনো গুরুত্ব দেন না প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বাস্তবায়নে দেরি হওয়ার কারণে মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির যে কষাঘাত সেটির জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় হচ্ছে বলে মনে করছেন বিষেজ্ঞরা। তারা বলছেন, এটি অবশ্যই পরিকল্পনা ও আর্থিক শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ।

চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতেও গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৩৯৫টি মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পের বোঝা চেপেছিল। তখনও এসব প্রকল্পের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। কিন্তু এর বেশি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এছাড়া এসব প্রকল্পের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে চলমান প্রকল্পও ছিল। এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপিতেও ঘটেছিল এ ঘটনা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপি থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রায় ৩০০ এর মতো উন্নয়ন প্রকল্প তারকা চিহ্ন দিয়ে যোগ করা হয় এডিপিতে।

আগামী অর্থবছরের এডিপিতে যুক্ত হওয়া মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পের মধ্যে একটি হলো, ঘোড়াশাল-৩ রিপাওয়ারিং প্রজেক্ট। এটি ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে এবং আগামী ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা। প্রায় ১০ বছর ধরে চলমান থাকলেও শেষ হওয়ার নাম নেই। এছাড়া ময়মনসিংহ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের জন্য ধনুয়া হতে ময়মনসিংহ পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ। এটি ২০২২ সালের জুলাই থেকে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়নে লক্ষ্য ছিল।

মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পের মধ্যে আরও আছে, বিআরটির জন্য সিএনজিচালিত একতলা এসিবাস সংগ্রহ প্রকল্প। ২০২৩ সালে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এতে দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণ রয়েছে। কিন্তু এখনো কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বিআরটি প্রকল্পের জন্য বাস সংগ্রহ কাজের কিছুই হয়নি এখনো। অথচ অবকাঠামো তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে। কোরিয়া বা যে দেশ থেকে বাসগুলো আনা হবে সেই দেশে বাসের দরজা আমাদের দেশে যেদিকে থাকে তার বিপরীত দিকে থাকে। ফলে বিশেষ অর্ডার দিয়ে আমাদের দেশের মতো উপযোগী করে দরজা তৈরির পর সেগুলো আনতে হবে। কিন্তু এসব প্রক্রিয়া এখনো শুরুই হয়নি।’

প্রকল্প সরকার বাস্তবায়ন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম