শুল্ক কমলেও চ্যালেঞ্জ কোথায়, কী ছাড় দিল বাংলাদেশ?
বিবিসি
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৫, ১০:৪১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের আরোপ করা পালটা শুল্কের হার ৩৫ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। ১৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর বিষয়টি কীভাবে ব্যবহার করা হবে অর্থ্যাৎ এর বাস্তবায়ন হবে কীভাবে-এনিয়ে আশঙ্কার কথা বলছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বাড়তি শুল্ক কারা কতটুকু বহন করছে, তা দেখবার বিষয়। এটি উদ্যোক্তাদের ওপর এলে মুনাফা কিছুটা কমে যাবে।’
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেলের বক্তব্য হচ্ছে, পারস্পরিক শুল্ক হার তুলনামূলকভাবে কমলেও খুচরা বাজারে দাম বেড়ে যাচ্ছে।
এছাড়া, তিনি মনে করেন, ‘এ সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য বিদ্যুৎ গ্যাস, জ্বালানি, ব্যাংক, লজিস্টিক, পোর্ট, এনবিএআরের অনেক কিছু উন্নত করতে হবে।’
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসানও এই বিষয়গুলোকে সমস্যা মনে করেন। তিনি বলেন, গ্যাসের অভাবে ফ্যাক্টরি চলে না। উৎপাদনে দেরি হলে সময় মতো অর্ডার দেওয়া হয় না। তখন প্রোডাক্ট বিমানে পাঠাতে হয় বা ডিসকাউন্ট দিতে হয়। আবার দেখা যায়, বন্দর থেকে মালামাল জাহাজে ওঠাতে এক সপ্তাহ লেগে যায়। এনবিআর থেকে ডকুমেন্টস ক্লিয়ার হয়না। বন্দরের অদক্ষতার কারণেও অনেকসময় গতি মন্থর হয়।’
গত এক বছর ধরে বাংলাদেশে যে প্রায়ই রাস্তাঘাট বন্ধ করে অবরোধ করা হয়, সে বিষয়টির কথা বলেন তিনি। তার মতে, এসব ঘটনা ‘সরবরাহ চেইনকে বিঘ্নিত করছে।’
এছাড়া, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শ্রমিক অসন্তোষও বড় একটি বাধা বলে মনে করেন তিনি।
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের বদনাম আছে যে বাংলাদেশ ন্যুনতম মজুরি দিয়ে কাজ করানো হয়। এই ইমেজটা কাটাতে হবে। কারণ ইউরোপিয়ান মার্কেটের কনজিউমাররা সেন্সিটিভ। তারা অনেকসময় বলে যে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ দেখলে পণ্য কিনো না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সাপ্লাইয়ে অনেক সমস্যা। ডেলিভারি ঠিকমতো দিচ্ছে কিনা, নির্ভর করছে ফ্যাক্টরি ঠিকভাবে চলছে কিনা, তার ওপর।
তিনি বলেন, শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রাখলে ফ্যাক্টরি চলবে না এবং শ্রমিক অসন্তোষের সুযোগ অনেকেই নেয়। কারণ, বাংলাদেশকে অস্থির করতে পারলে বায়াররা বাংলাদেশ থেকে অন্য কোথাও চলে যাবে।
যদিও তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, জাতীয় কাঠামো অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরপর মজুরি বাড়ানো হয়।
তিনি উল্লেখ করেন, এখানে ‘ট্রান্সশিপমেন্ট ট্যারিফ’ রয়েছে। অর্থাৎ, কোনো দেশ যখন অন্য দেশ থেকে কাঁচামাল এনে তার নিজের দেশে পণ্য উৎপাদন করে মার্কিন বাজারে রপ্তানি করে, তাহলে সেগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র ৪০ শতাংশ ট্রান্সশিপমেন্ট ট্যারিফ আরোপ করবে।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এই বিষয়টিতে জোর দেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেক পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল চীন থেকে আসে। কিন্তু চীন থেকে পণ্য আমদানি করতে হলে ৩৫ শতাংশের পাশাপাশি ওই ট্রান্সশিপমেন্ট ট্যারিফও বাংলাদেশকে দিতে হবে।’
‘ট্রান্সশিপমেন্ট ট্যারিফ আরোপ হলে প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় চাপ পড়বে,’ মত তার।
কোথায় ছাড় দিল বাংলাদেশ?
নতুন এই শুল্ক নীতি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই বলেছেন, যারা আমেরিকান পণ্যের ওপর অসম শুল্ক আরোপ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রও তাদের ওপর এই পাল্টা শুল্ক আরোপ করছে। অর্থাৎ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোই তার মূল উদ্দেশ্য।
আর বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে গিয়েই বিভিন্ন দেশ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বা দিয়েছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রও দেশভেদে নানা রকম শর্ত দিয়েছে।
বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দেশটি থেকে আমদানি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে গম ও তুলা আমদানি এবং ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।
তবে চীনের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনা কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তা কেনার শর্ত ছিল। এ ধরনের স্পর্শকাতর শর্তের ব্যাপারে শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কী অবস্থান নিয়েছে, চুক্তিতে কী রাখা হয়েছে- তাএখনো স্পষ্ট করা হয়নি।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলছিলেন, অন্য দেশগুলোও এমন প্রস্তাব দিয়েছে যে, এটা আমদানি বাড়াবো, এটা কিনবো। আমরাও তাই করেছি। যদিও আমরা সব বিস্তারিত জানি না। কিন্তু সামগ্রিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো বলে মনে হয় না। কতটা লাভ হবে, সেটা প্রশ্ন।
এদিকে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছিলেন, ট্রেড নেগোসিয়েশনের বাইরে এখানে অন্যান্য নেগোসিয়েশনও হয়েছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে। বিনিয়োগ সংক্রান্ত হতে পারে, অশুল্ক বাধা নিয়ে হতে পারে, কৌশলগত পণ্য ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে হতে পারে...সরকারের উচিত পূর্ণাঙ্গ চুক্তিটি প্রকাশ করা। কূটনৈতিক বিষয়গুলো এখানে একেবারেই পরিষ্কার না। বাংলাদেশ কী কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলো প্রকাশ করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্য একক দেশ নির্ভর নয়। সুতরাং, চুক্তিতে বাংলাদেশের অন্যান্য বাণিজ্য অংশীজনের সঙ্গে থাকা বাণিজ্য স্বার্থ, বিনিয়োগ স্বার্থ, ঋণ স্বার্থ বা রেমিট্যান্স সংক্রান্ত স্বার্থের বিষয়ে বড় কোনো ছাড়ের বিষয় থাকলে তা জানানো দরকার।
