মহামারির ঋণে মহাপাপ
জনগণের সঙ্গে এ প্রতারণা দুঃখজনক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডামিক প্রিপায়ার্ডনেস’ প্রকল্পটির লক্ষ্য ছিল জনস্বাস্থ্য রক্ষা। কিন্তু পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডির ‘নিবিড় পরিবীক্ষণ’ প্রতিবেদন যে চিত্র উন্মোচন করেছে, বলতেই হবে, তা কেবল ব্যর্থতার নয়, জাতির সঙ্গে এক ভয়াবহ প্রতারণা! শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, জনগণের জীবন রক্ষার্থে বিশ্বব্যাংক ও এআইআইবির ঋণে নেওয়া ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ের এ প্রকল্পটি এখন জনগণের কাঁধে চাপানো এক অমার্জনীয় ঋণের বোঝা, যার বিপরীতে সুফল শূন্য।
জানা যায়, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের ৫০টি সরকারি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) স্থাপন করা; কিন্তু বাস্তবে মাত্র ১৩টি জেলায় নামমাত্র আইসিইউ বসানো হয়েছে, যেখানে আবার রয়েছে দক্ষ জনবলেরও অভাব। দেখা গেছে, ১৮টি পিআইসিইউ এবং ১৫টি অবস-আইসিইউ স্থাপনের কথা থাকলেও একটিও স্থাপিত হয়নি। অর্থাৎ, করোনা মোকাবিলা ও ভবিষ্যতে মহামারি মোকাবিলার প্রস্তুতি-কোনো ক্ষেত্রেই লক্ষ্য অর্জনে সফলতা আসেনি। অথচ এই ব্যর্থতার পরও প্রকল্পের জন্য খরচ হয়েছে ৪ হাজার ৭১৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, যা এখন জনগণের অর্থে শোধ করতে হবে। খরচের এ অর্থের অডিট আপত্তি, সরকারি ক্রয় আইন লঙ্ঘন এবং অনভিজ্ঞ সরবরাহকারীকে কাজ দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগগুলো প্রমাণ করে, মহামারির জরুরি অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে বিগত সরকারের আমলে কিছু মহল দুর্নীতির মহাসড়ক বানানোর সুযোগ করে নিয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিবের পক্ষ থেকে প্রকল্পে নির্মাণকারী গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং পণ্য সরবরাহকারী প্রকল্প অফিসের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকে ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এই সমন্বয়হীনতার চূড়ান্ত দায়ভার তো কর্তৃপক্ষেরই। অ্যাকাউন্ট জটিলতা বা ডলারের অবমূল্যায়ন আংশিক কারণ হতে পারে; কিন্তু লক্ষ্য পূরণে এমন চরম ব্যর্থতা কেবল অব্যবস্থাপনা, জবাবদিহিতার অভাব এবং দায়িত্বশীলদের উদাসীনতাকেই নির্দেশ করে। জনগণের ঘাড়ে চাপানো এই ব্যর্থ ঋণের বোঝা অবশ্যই শোধ করতে হবে। কিন্তু তার আগে এই মহাপাপের জন্য কে বা কারা দায়ী, তা চিহ্নিত করতে হবে। যে অর্থ জনগণের জীবন রক্ষায় ব্যয় হওয়ার কথা ছিল, সেই অর্থের অপচয় ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা কর্তব্য বলে মনে করি আমরা। কঠোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যতে প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পই জনগণের জন্য কেবল ঋণের বোঝা আর হতাশার গল্প হয়ে থাকবে। সরকার অবিলম্বে তদন্ত করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবে, এটাই প্রত্যাশা।
