Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

ভূমিকম্প মোকাবিলা

আগাম প্রস্তুতির উদ্যোগ কোথায়

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভূমিকম্প মোকাবিলা

ফাইল ছবি।

শুক্রবার সকালে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় শক্তিশালী ভূকম্পন অনুভূত হওয়ার পর ভূমিকম্প মোকাবিলার প্রস্তুতির বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। রিখটার স্কেলে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। গত ৩০ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো দেশে এ মাত্রার ভূমিকম্প হলো। এর উৎপত্তিস্থল ঢাকার খুব কাছে হওয়ায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ নগরীতে বড় আকারের ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন অনেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ ভবন বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এর অন্যতম কারণ, অধিকাংশ ভবন তৈরির ক্ষেত্রে জাতীয় ভবন নির্মাণ কোড অনুসরণ করা হয়নি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকার আশপাশে বেশি ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে। কাজেই এখানে একটি বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বস্তুত দেশের একটি বড় অংশ ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা ও সিলেট বিভাগ সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে রেড জোনে অবস্থান করছে। এছাড়া দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের কিছু এলাকা মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এসব এলাকায় যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। বস্তুত এ অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার মতো অবস্থা ভূগর্ভেই তৈরি হয়ে আছে। তাছাড়া এ অঞ্চলে প্রতি ১০০-১৫০ বছর পরপর ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। আর প্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ বছর পরপর সংঘটিত হয় ৮ মাত্রার ভূমিকম্প। সে হিসাবে বাংলাদেশে ৬-৭ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা খুবই জোরালো বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ভূমিকম্পের হারও বেড়েছে। গত ২ বছরে এ অঞ্চলে অন্তত ১৫টি ভূমিকম্প হয়েছে।

উদ্বেগের বিষয় হলো, এত জোরালো আশঙ্কার পরও ভূমিকম্প মোকাবিলায় আমাদের তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই। অথচ পূর্বপ্রস্তুতিই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। ভূমিকম্প মোকাবিলার যথেষ্ট অভিজ্ঞ ও উন্নত প্রযুক্তির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও জাপানের মতো দেশে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সে তুলনায় আমাদের প্রস্তুতি ও ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সামর্থ্য অতি নগণ্য। এ বাস্তবতায় বড় মাত্রার কোনো ভূমিকম্প হলে আমাদের কী দশা হবে, তা ভাবলে গা শিউরে ওঠে। ভূমিকম্পের সম্ভাব্য বিপদ ও ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে হলে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হওয়া উচিত। এখানে যেভাবে অপরিকল্পিত উপায়ে ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে, তাতে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পও একটু বেশি সময় স্থায়ী হলে ঘটে যেতে পারে প্রলয়ংকরী ধ্বংসলীলা। কাজেই এ ব্যাপারে অবহেলা করার সুযোগ নেই। সবার আগে ভেঙে ফেলতে হবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো। দ্বিতীয়ত, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে নিয়মিত মহড়া ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। ভূমিকম্পসংক্রান্ত প্রশিক্ষণের বিষয়টি এখন থেমে আছে। এটি চলমান রাখতে হবে। আর প্রতিবছরই মহড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। মোট কথা, প্রশিক্ষণ, মহড়া, ভূমিকম্প সহনীয় স্থাপনা-এসবই হচ্ছে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির রক্ষাকবচ। আমরা আশা করব, আরও একটি ভূমিকম্প আঘাত হানার আগেই তা মোকাবিলার প্রস্তুতি গ্রহণের পদক্ষেপ নেবে সরকার। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপও কাম্য।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম