জনবহুল নগরীর অভিধা, গৌরবের, নাকি ভবিষ্যৎ সংকটের ইঙ্গিতবাহী?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক ‘ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্টস ২০২৫’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল নগরী। এ তথ্য নিঃসন্দেহে এক নতুন ভাবনার জন্ম দিয়েছে। একসময়ের নবম স্থান থেকে এমন উল্লম্ফন ঢাকার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বিষয়টিকেই নির্দেশ করে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ৩ কোটি ৬৬ লাখ মানুষ বসবাস করে এই মহানগরীতে। এই ‘উল্লম্ফন’ কি আমাদের জন্য গৌরবের, নাকি এক গভীর সংকটের ইঙ্গিত, তা ভেবে দেখা জরুরি বৈকি।
সুযোগ ও কাজের সন্ধানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, অর্থনীতি, কর্মসংস্থান-সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এ শহর। কিন্তু একইসঙ্গে এই জনবিস্ফোরণ শহরের ওপর অকল্পনীয় চাপ সৃষ্টি করছে। যানজট, আবাসন সংকট, সীমিত নাগরিক পরিষেবা, পরিবেশ দূষণ-প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঢাকা আজ জর্জরিত। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অতিরিক্ত বায়ু দূষণ, জনসংখ্যার অতি ঘনত্ব ইত্যাদি কারণে নগরীর পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর ক্রমাগত পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। একদিকে গাছপালা কেটে নতুন নতুন দালানকোঠা নির্মাণ, অন্যদিকে সংখ্যাতিরিক্ত যানবাহন এ নগরীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করছে। জীবনযাত্রার মান ক্রমাগত নিম্নগামী, যা একে বিশ্বের সবচেয়ে বাস-অযোগ্য শহরগুলোর একটিতে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, যে গতিতে ঢাকার জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে ২০৫০ সালের মধ্যে এ নগরী বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল নগরীতে পরিণত হতে পারে। এটি এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। যদি এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে এই জনসংখ্যা একসময় আমাদের জনশক্তি বা মানবসম্পদ না হয়ে উলটো বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
এ পরিস্থিতিতে প্রয়োজন টেকসই ও সমন্বিত পরিকল্পনা। শুধু রাজধানীতে যেন জনবল কেন্দ্রীভূত না হয়, সেজন্য দেশের অন্যান্য শহরেও কর্মসংস্থান ও জীবনযাত্রার সুযোগ বৃদ্ধি করা জরুরি। বিকেন্দ্রায়ন, উন্নত গণপরিবহণ ব্যবস্থা, আধুনিক বর্জ্য ও পানি ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসনকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।
জনসংখ্যার আধিক্য একটি শক্তি হতে পারে, যদি সেই মানবসম্পদকে কাজে লাগানো যায়। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সেটাই হয়ে ওঠে সবচেয়ে বড় সংকট। তাই ঢাকার এই জনবিস্ফোরণকে কেবল একটি পরিসংখ্যান হিসাবে না দেখে এর পেছনের কারণ ও ভবিষ্যতের পরিণতি নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে এবং সময় থাকতে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
