উদ্বেগজনক ডেঙ্গু পরিস্থিতি
ফি-বাৎসরিক এ নিয়তি কে খণ্ডাবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সংগৃহীত ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নভেম্বর এখনো শেষ হয়নি, তাতেই এ মাসে এই রোগে এখন পর্যন্ত মৃত্যু ও আক্রান্তের সর্বোচ্চ সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে। এ মাসে মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা ৯৪ এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২ হাজার ৯১২ জন। স্মরণ করা যেতে পারে, অক্টোবরে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৮০। আরেকটি হিসাবে এ বছর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯০ হাজার ৭৮৪। মৃত্যু হয়েছে ৩৭৭ জনের।
প্রশ্ন হচ্ছে, ডেঙ্গু রোগের এই যে বিস্তার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর কি বিষয়টিতে যথেষ্ট সচেতন? ডেঙ্গু একটি ফি-বাৎসরিক রোগ এবং এ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা কমছে না। অথচ দীর্ঘদিন এ রোগের আক্রমণ ঠেকাতে ফলপ্রসূ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, হচ্ছে না। এ অব্যবস্থার শিকার হচ্ছি আমরা প্রতিবছর। ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। লক্ষ করা গেছে, সিটি করপোরেশনের কর্মকাণ্ড শুরু হয় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের পরে। অথচ এডিস মশা নিধনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা দরকার ছিল নাগরিকদের রোগাক্রান্ত হওয়ার অনেক আগেই। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে এক সময় ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ দেখা যেত। প্রশাসনের কর্মদক্ষতার ফলে সেখানে এডিসের আক্রমণ আর সেভাবে হয় না।
এডিস মশার আচরণেও পরিবর্তন এসেছে। এই মশা আগে দিনের আলোয় কামড়াতো, এখন রাতেও এরা আক্রমণ করে। আবার আগে যেখানে স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ত এডিস, এখন ময়লা পানিতেও ডিম পাড়ছে। এডিস নিধনে যে কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা কতটা কার্যকর, তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। এই মশার বংশবিস্তার যেহেতু রোধ করা যাচ্ছে না, তাই ডেঙ্গুও আমাদের পিছু ছাড়ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, তথা দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে ডেঙ্গুর বর্তমান ভয়াবহতা সম্যক উপলব্ধি করে জোর তৎপর হতে হবে অবশ্যই। ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার ঘাটতিগুলোও দূর করতে হবে। একটা খবর পাওয়া গেছে, ব্রাজিলে ডেঙ্গুর এক ডোজের টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, এটা এক ঐতিহাসিক অর্জন। এক ডোজের এই টিকা আমাদের দেশে কীভাবে ব্যবহার করা যাবে, তা নিয়ে ভাবতে হবে অবশ্যই। এক কথায়, প্রতিবছর ডেঙ্গুতে বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা যাবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। এই অভিশাপ থেকে আমরা মুক্তি চাই।
