টেক্সটাইল শিল্পের জন্য অশনিসংকেত
এফওসি সীমা বৃদ্ধি কোনোভাবেই কাম্য নয়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অন্তর্বর্তী সরকার তৈরি পোশাকশিল্পের এফওসি (ফ্রি অফ কস্ট তথা বিনামূল্যে কাপড় ও অ্যাকসেসরিজ আমদানির সুযোগ) সীমা বাড়ানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা দেশীয় টেক্সটাইল অ্যাকসেসরিজ শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এমনিতেই ঋণের উচ্চ সুদ, জ্বালানি স্বল্পতা ও সীমান্ত পথে অবাধে ভারতীয় সুতা প্রবেশের কারণে টেক্সটাইল ও অ্যাকসেসরিজ শিল্প চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এর ওপর তৈরি পোশাকশিল্পের এফওসি সীমা বাড়ানো হলে তা দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় ও রপ্তানি-সহায়ক এ শিল্পকে চরম সংকটের মুখে ঠেলে দেবে। তাই সরকারের উচিত বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা এবং এফওসি সীমা না বাড়িয়ে বরং দেশীয় অ্যাকসেসরিজ শিল্পকে আরও শক্তিশালী করার দিকে মনোনিবেশ করা। যেমন, তাদের উৎপাদন খরচ কমাতে নীতিগত সহায়তা দেওয়া, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক সুবিধা দেওয়া।
তৈরি পোশাকশিল্পের প্রধান সহযোগী হিসাবে টেক্সটাইল অ্যাকসেসরিজ শিল্প দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বাটন, জিপার, লেবেল, হ্যাংট্যাগ থেকে শুরু করে পোশাক রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব উপকরণের জোগানদাতা এই শিল্পটি দেশের পোশাক রপ্তানিকে দ্রুত ও সাশ্রয়ী করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগের ভেতরের প্রায় সব উপকরণই আজ দেশীয় কারখানা থেকে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। এ শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা, আর কর্মসংস্থান হয়েছে বহু মানুষের। এফওসি সীমা বৃদ্ধির অর্থ হলো, দেশীয় পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি পরিমাণে অ্যাকসেসরিজ বিদেশ থেকে বিনামূল্যে আমদানি করার সুযোগ পাবে। এতে পোশাক কারখানাগুলোর আপাত সুবিধা হলেও দেশীয় অ্যাকসেসরিজ সরবরাহকারীরা তাদের প্রধান ক্রেতাদের হারাবে। যখন কোনো ক্রেতা তার প্রয়োজনীয় উপকরণ বিনামূল্যে আমদানি করতে পারে, তখন সে দেশীয় পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকবে-এটা খুব স্বাভাবিক ব্যবসায়িক প্রবণতা। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে তা দেশীয় শিল্পের বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করবে। বর্তমানে বহু দেশীয় উদ্যোক্তা বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের লক্ষ্য নিয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছেন। এফওসি সীমা বাড়লে তাদের উৎপাদিত পণ্য অব্যবহৃত থাকবে এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।
ভুলে গেলে চলবে না, দেশীয় অ্যাকসেসরিজ শিল্প শুধু সরবরাহকারীই নয়, এটি পোশাকশিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক-আপ। স্থানীয় জোগান থাকার কারণেই ‘লিড টাইম’ কমেছে এবং জরুরি চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে। যদি দেশীয় শিল্পে ধস নামে, তাহলে যে কোনো আন্তর্জাতিক সংকটের সময় পোশাকশিল্পকে পুরোপুরি আমদানির ওপর নির্ভর করতে হবে, যা শেষ পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদে পোশাকশিল্পের উৎপাদন খরচ বাড়াবে এবং ঝুঁকি তৈরি করবে। তাই এফওসি সীমা বৃদ্ধির মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত এড়িয়ে সরকারের উচিত দেশীয় টেক্সটাইল অ্যাকসেসরিজ শিল্পকে সুরক্ষা দিয়ে পোশাক শিল্পের ‘ব্যাকবোন’ হিসাবে তাদের ভূমিকা আরও জোরদার করা। অন্যথায় একটি ভুল সিদ্ধান্তে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই সরকার অবিলম্বে এ উদ্যোগ স্থগিত করে খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে আসবে, এটাই কাম্য।
