সন্দ্বীপের আয়তন বৃদ্ধি : নতুন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সন্দ্বীপ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। সন্দ্বীপে তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষের বসবাসের তথ্য পওয়া যায়। একসময়ের সমৃদ্ধ এ জনপদের মানুষ এখন বছরব্যাপী নানারকম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বর্তমানে সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রামে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। উন্নত চিকিৎসার অভাবে এ দ্বীপের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের বিষয়টি আলোচনায় এলেও দ্বীপে বসবাসকারীদের অন্য দুর্ভোগের কথা বিস্তারিত জানা যায় না।
গত ৩৬ বছরে দেশের অন্যতম দ্বীপাঞ্চল সন্দ্বীপের আয়তন বেড়েছে ৪৭৫ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে জেগে ওঠা ভূমির পরিমাণ প্রায় চারশ (৩৯৮) বর্গকিলোমিটার এবং পলল ভূমি ৭৭ বর্গকিলোমিটার। সাগর এই জমি একসময় কেড়ে নিয়েছিল। এখন আবার তা ফেরত দিচ্ছে। ১৯৫৫ সালের জরিপে সন্দ্বীপের মোট আয়তন ছিল ৬০৩ বর্গকিলোমিটার। কিন্তু বঙ্গোপসাগর গ্রাস করায় এর মূল ভূখণ্ডের আয়তন দাঁড়িয়েছে ৮২ বর্গকিলোমিটার। নতুন করে চর জাগলেও কাগজপত্রে বিলীন হয়ে যাওয়া সন্দ্বীপের সঙ্গে তা যোগ হয়নি। ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের আমলে খোদ দ্বীপের একটি সিন্ডিকেট নতুন চরগুলোর বেশির ভাগ অংশ নোয়াখালীর সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর সন্দ্বীপ-নোয়াখালীর এ সীমানাবিরোধ ফের আলোচনায় আসে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে দ্রুত সীমানাবিরোধ নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, দ্রুত এ বিরোধের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে। নতুন সন্দ্বীপের বর্তমান মোট আয়তন ৭২১ বর্গকিলোমিটারের বেশি হতে পারে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর বদলে গেছে পুরো সন্দ্বীপের চিত্র। এ দ্বীপের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি নৌরুটে ফেরি যুক্ত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের নেতৃত্বে মাত্র সাত মাসের কম সময়ে সীতাকুণ্ড-গুপ্তছড়া রুটে জেটি নির্মাণ করে ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে। একসময় মানুষকে কোমর পানিতে নেমে কাদায় একাকার হয়ে সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম যাতায়াত করতে হতো। যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে বা মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে সন্দ্বীপবাসীকে দশকের পর দশক কী অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ায় মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান হলো। এই সার্ভিস নিয়ে সন্দ্বীপবাসীর মধ্যে বিপুল উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন করার সময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সন্দ্বীপকে একটি ‘রিসোর্ট দ্বীপ’ হিসাবে গড়ে তোলার কথা বলেছেন।
বস্তুত সন্দ্বীপের বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ এক জনপদ হিসাবে বিকশিত হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগানো হলে সন্দ্বীপকেন্দ্রিক পর্যটন, অর্থনীতি ও শিক্ষার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। ফেরি চলাচল শুরু হওয়ার আগে ট্রলারে করে পণ্য আনা-নেওয়া হতো দ্বীপটিতে। এ কারণে সন্দ্বীপে এতদিন যে কোনো পণ্যের দাম ছিল আকাশছোঁয়া। বস্তুত এ দ্বীপকে কেন্দ্র করে কী ধরনের শিল্পকারখানা বিকশিত হওয়া সম্ভব, তা খতিয়ে দেখে সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য দ্বীপাঞ্চলকেন্দ্রিক পর্যটন, অর্থনীতি ও শিক্ষা খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। দেশের দ্বীপাঞ্চলে এমনভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে সেখানকার পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি কোনোভাবেই বিঘ্নিত না হয়।
