ফারাক্কার বিপজ্জনক প্রভাব
বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ কী?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ফারাক্কা যে কত বড় মরণবাঁধ, তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ থেকে খারাপতর হয়ে পড়ছে। উল্লেখ্য, দেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫৩টি নদনদী পদ্মার পানি প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল। ফারাক্কা বাঁধের কারণে এই পানির প্রবাহ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হওয়ায় এককালের খরস্রোতা নদনদীগুলো শুকিয়ে গেছে প্রায়। সেগুলো এখন নালা বা খালে রূপ নিয়েছে। কোনো কোনোটির অস্তিত্বই বিলীন হয়ে পড়েছে। বলা বাহুল্য, এসব নদনদীর ওপর নির্ভরশীল কয়েক কোটি মানুষের জীবন-জীবিকাও পড়েছে হুমকির মুখে, বন্ধ হয়ে গেছে অনেক সেচ প্রকল্প। নদনদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে নৌ-চলাচলের পথ। শুধু তাই নয়, উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৬টি জেলা ভূ-প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এসব জেলায় পানির স্তর নেমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। ফারাক্কার প্রত্যক্ষ প্রভাবে এখন বন্ধ হওয়ার পথে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প। ওদিকে সুন্দরবন অঞ্চলের নদনদীতে বেড়েছে লবণাক্ততা।
স্মরণ করা যেতে পারে, ১৯৭৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে একতরফা ফারাক্কা বাঁধ চালু করেছিল ভারত। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সরসেরগঞ্জ থানার একটি গ্রাম ফারাক্কা। এখানেই গঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত ১১৯টি লকগেটবিশিষ্ট যে বাঁধ দেওয়া হয়, সেটাই ফারাক্কা বাঁধ। ফারাক্কা থেকে ১৮ কিলোমিটার ভাটিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাকা পয়েন্টেই গঙ্গা হয়েছে পদ্মা।
১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি মোতাবেক পানির যে হিস্যা পাওয়ার কথা আমাদের, তা আমরা পাচ্ছি না। গত বছর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ১৫ হাজার কিউসেক পানির প্রবাহ কমেছিল। বর্তমানের অবস্থা আরও খারাপ। প্রতিবেশী দেশ হিসাবে ভারতের এ আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। উজানের দেশ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ভাটির দেশে পানির প্রবাহ অন্যায়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আমরা চাইব, বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে পানিশূন্য করার ভারতীয় অপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ নিয়ে সরকার গভীরভাবে ভাববে। ভারতের সঙ্গে এ ব্যাপারে একটি ইতিবাচক কূটনৈতিক সম্পর্কে না আসা গেলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি বিপজ্জনক অবস্থায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
