Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

সহপাঠী যখন খুনি

সমাজ এত অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে কেন?

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সহপাঠী যখন খুনি

কী এক বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি আমরা! সপ্তম শ্রেণির ছাত্র হয়ে গেছে খুনি। সেই খুনও আবার ক্লাসের বেঞ্চে বসা নিয়ে তুচ্ছ কথা কাটাকাটির জেরে! বুধবার সকালে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার হামিদচর এলাকায় কর্ণফুলী নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র, ১২ বছর বয়সি রাহাত খানের লাশ। আগামী মৌসুমে অনূর্ধ্ব-১৪ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় খেলার জন্য বাছাই করা হয়েছিল তাকে। খেলতে পারল না সে। তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তারই চার সহপাঠী। প্রশ্ন উঠতেই পারে, এই কিশোরদের মধ্যে জিঘাংসার জন্ম হলো কীভাবে? কেন এই অসহিষ্ণুতা? কী সেই মনস্তত্ত্ব, যার কারণে এই অল্প বয়সে সহপাঠী, যার সঙ্গে রয়েছে অনেক অভিজ্ঞতার স্মৃতি, তাকে হত্যা করা সম্ভব হলো? দ্বিতীয় কথা, পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে মানে, অনেক সময় নিয়েই তাকে পেটানো হয়েছে। এতটা সময় ধরে চার কিশোর কীভাবে সহ্য করল তাদেরই এক সতীর্থের আর্তনাদ? ভাবতে গেলে কূলকিনারা পাওয়া যায় না।

সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ছাত্রছাত্রীদের আসলে কী শিক্ষা দেওয়া হয়? নাকি শিক্ষকরা শুধু ক্লাসে ঢুকে কিছু মুখস্থ কথা আউড়ে ঘণ্টা বাজলেই চলে যান আরেক ক্লাসে? তাদের কি ছাত্রছাত্রীদের একজন আদর্শ, মানবিক নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার কোনোই তাগিদ নেই? পরিবারগুলোর অভিভাবকরাই বা কতটা শৃঙ্খলার সঙ্গে প্রতিপালন করেন তাদের সন্তানদের? এ এক অসম্ভব বৈরী সমাজ তৈরি করেছি আমরা। এভাবে চলতে থাকলে এই সমাজে শত শত, হাজার হাজার খুনি তৈরি হতে আর বেশি দেরি হবে না। জন্ম নেবে উদ্ধত, বেপরোয়া, অমানবিক একটা শ্রেণি। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এ প্রক্রিয়াকে কী বলে? অথবা এটা কি রাজনীতির দোষ, নাকি সামাজিক মূল্যবোধের অভাব? রাজনৈতিক খেলায় যখন প্রায় নিত্যদিন খুন হচ্ছে প্রতিপক্ষ, তখন সেখান থেকে কী শিক্ষা নিচ্ছে অরাজনৈতিক সমাজের বৃহত্তর অংশ? প্রকৃত প্রস্তাবে মানুষের এই মনোকাঠামো এখন গবেষক, চিন্তাবিদ, মনোবিজ্ঞানীদের গবেষণার উপজীব্য হয়ে পড়েছে। নিছক উপদেশে আর কাজ হবে বলে মনে হয় না। রাহাতকে হত্যার দায়ে তার চার সহপাঠীকে আটক করা হয়েছে। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে বুঝতে হবে তাদের চিন্তা-পদ্ধতি। লেখাপড়ার অতিরিক্ত তাদের মাথায় আর কী ঘুরপাক খায়, জানতে হবে সব। তাদের শুধু শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দিলে চলবে না। এই চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বুঝতে হবে কিশোর মনস্তত্ত্ব।

সহপাঠী কর্ণফুলী নদী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম