Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

নিখোঁজ ১৪শ শহিদ পরিবার, সন্ধানের উদ্যোগ সফল হোক

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নিখোঁজ ১৪শ শহিদ পরিবার, সন্ধানের উদ্যোগ সফল হোক

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পেরিয়ে গেছে ৫৪ বছর। মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে এর মধ্যে অনেকবার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। অসংখ্যবার এ তালিকা হয়েছে কাটছাঁটও। বিগত সরকারের সময় বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধার প্রলোভনে অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাও তালিকায় নাম লিখিয়েছেন।

দলীয় বিবেচনায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েও অনেককে দেওয়া হয়েছে বিশেষ সুবিধা। তবে চমকে যাওয়ার মতো বিষয় হচ্ছে, স্বাধীনতা অর্জনের এত বছরেও রণাঙ্গনে সম্মুখযুদ্ধে শহিদ প্রায় ১৪শ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের খোঁজ কেউ রাখেনি। নিখোঁজদের এ তালিকায় ২ বীরশ্রেষ্ঠ, ৫ বীরবিক্রম ও ২ বীরপ্রতীকেরও নাম আছে। জানা গেছে, গেজেট অনুযায়ী শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৬ হাজার ৭৫৭। এর মধ্যে ভাতা গ্রহণ করছেন ৫ হাজার ৩৫৮ জনের পরিবার। বাকি ১ হাজার ৩৯৯ জনের পরিবারের হদিস নেই।

বর্তমানে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে তালিকাভুক্ত শহিদ, খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে মাসিক ৩০ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা, বছরে ২৩ হাজার টাকা হারে দুটি উৎসব ভাতা এবং ২ হাজার টাকা নববর্ষ ভাতা সুবিধা দেওয়া হয়। এছাড়া চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটা, সামাজিক সুরক্ষা, শহিদ পরিবার বিবেচনায় বীরোচিত সম্মান ও শ্রদ্ধা পেয়ে থাকেন। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের সম্মানিত করা হয়।

রণাঙ্গনে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের খোঁজখবর না রাখা যে স্বাধীন জাতি হিসাবে আমাদের জন্য চরম গ্লানিকর, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পরিতাপের বিষয়, রাষ্ট্রক্ষমতায় যারাই এসেছেন, তাদের অধিকাংশই শহিদ পরিবারগুলোর যথাযথ খোঁজখবর নেয়নি। বিশেষ করে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার পদে পদে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করলেও তা যে ছিল নিছকই লোকদেখানো ও ক্ষমতা ধরে রাখার স্বার্থে, তা এই একটি ঘটনাই প্রমাণ করে দেয়।

আশার কথা, অন্তর্বর্তী সরকার এসব নিখোঁজ শহিদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিয়েছে। তালিকা তৈরির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় তাদের খুঁজতে মাঠ প্রশাসনকে কাজে লাগাতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বিভাগ, জেলা, উপজেলাভিত্তিক নিখোঁজ শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। দ্রুত এসব তালিকা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনে পাঠানো হবে। এরপর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি, শহিদের সহযোদ্ধা ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন প্রকৃত ওয়ারিশ নির্ধারণ করবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই আমরা। শুধু মনে করিয়ে দিতে চাই, নিখোঁজ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় থাকা বেশির ভাগই গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। যাদের পরিবারের কাছে শহিদ মুক্তিযোদ্ধার সনদ কিংবা গেজেট পর্যন্ত নেই। কাজেই সঠিকভাবে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত বীরদের বংশধরদের খুঁজে বের করা চ্যালেঞ্জের কাজ। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের এ পদক্ষেপ সফল হলে তা শহিদদের পরিবারের জন্য যেমন সম্মানের হবে, তেমনি জাতি বহন করবে দায়িত্বের পরিচয়। একই সঙ্গে এ উদ্যোগ গ্রহণের ফলে বিশ্বে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।

শহিদ পরিবার

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম