তলানিতে বেসরকারি ঋণপ্রবাহ
রপ্তানি খাতের উত্তরণে কার্যকর পদক্ষেপ কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১০ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ প্রবৃদ্ধির হারে স্থবিরতা বিরাজ করছে। শুক্রবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-অর্থবছরের হিসাবে ঋণের প্রবাহ এখন তলানিতে পৌঁছেছে। জানা যায়, চলতি অর্থবছরের শুরুর দিকেও এ হার ছিল নেতিবাচক। সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাহ কিছুটা বাড়লেও তা ২ শতাংশের ঘর অতিক্রম করতে পারেনি। গত অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে বেড়েছিল ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের ওই সময়ের তুলনায় এখন প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৩ শতাংশ কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত চারটি কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ প্রত্যাশিত হারে বাড়েনি। এগুলো হচ্ছে, বৈশ্বিক ও দেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের অনিশ্চয়তা, অর্থবছরের শুরুর দিকে ডলারের তীব্র সংকটে আমদানি বাধাগ্রস্ত হওয়া, ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটের কারণে ঋণ বিতরণের সক্ষমতা হ্রাস এবং সরকার পতনের পর দেশে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতা।
তবে প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়েছে, বেসরকারি খাতে অর্থবছরের শুরুর দিকে যে অনিশ্চয়তা ছিল, তা এখন অনেকটাই কেটে গেছে। রপ্তানি বাড়ছে। ডলার সংকট কেটে যাওয়ায় আমদানিও অবাধ করা হয়েছে। ফলে আমদানিও বাড়ছে। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহও আগের চেয়ে বাড়তে শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী দিনে এ হার আরও বাড়বে। তবে যত আশার বাণীই শোনানো হোক না কেন, পরিস্থিতি সন্তোষজনক অবস্থায় না পৌঁছালে এ হার আদৌ বাড়বে কি না, আশঙ্কা থেকেই যায়। যুগান্তরেরই অপর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিগত সরকারের লুটপাটের প্রভাবে ব্যাংক খাতের মূলধন স্মরণকালের সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। বিগত সরকার পতনের ৯ মাস পরও পরিস্থিতি যদি এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, তাহলে সামগ্রিক অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা থাকাটা অমূলক নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বলছে, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণ করায় টাকার প্রবাহ কমানো হচ্ছে, বাড়ানো হচ্ছে ঋণের সুদের হার। এ কারণে ইচ্ছা করলেও ঋণপ্রবাহ বাড়ানো যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক প্রভাব যে পড়বে না, তা বলাই বাহুল্য। ভুলে গেলে চলবে না, চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে বাজারই নির্ধারণ করে ব্যাংক ঋণের সুদহার কত হবে। আমদানি অবাধ করায় তা বাড়লেও রপ্তানি খাতেও যাতে ইতিবাচক প্রবাহ বজায় থাকে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্বার্থে সেদিকেও নজর দেওয়া বাঞ্ছনীয়। অর্থনীতির এমন পরিস্থিতিতে করণীয় কী, তা নিয়ে নানা মহল থেকে আগে একাধিকবার পরামর্শ এসেছে। এ বিষয়ে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
