নির্যাতিতার নীরব আর্তনাদ
প্রতিটি ঘটনাই দ্রুত বিচারের আওতায় আসুক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আমাদের সমাজে নারীরা প্রতিদিন বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ঘরের বাইরে, এমনকি ভেতরেও নির্যাতনের আশঙ্কায় থাকছে নারী। সামাজিক এ সমস্যায় রাজনীতি জড়িয়ে পড়লে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে, এর জ্বলন্ত উদাহরণ সুবর্ণচর। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, নোয়াখালীর সুবর্ণচরের এক গৃহবধূকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। শুধু তাই নয়, ওই নারীর হাত-পা ভেঙে সারা শরীরে ছুরি-ব্লেড দিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। তার ‘অপরাধ’ তিনি বিএনপি করেন, ধানের শীষে ভোট দেন। এই গৃহবধূ সুবিচারের আশায় প্রায় ৭ বছর ধরে আর্তনাদ করলেও তা তার ভাগ্যে মেলেনি। বর্বর সেই নির্যাতনের ট্রমায় এখনো মাঝরাতে আতঙ্কে তার ঘুম ভাঙে। জানা যায়, শুধু ওই গৃহবধূই নয়, সেই রাতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আরও অনেক নারীর ওপর নির্যাতন চালিয়েছিল। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, সংসদ নির্বাচনের রাতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি তথা বিরোধীদের পরিবারের নারীদের টার্গেট করে নির্যাতন চালায়। এমনকি কোন কোন নারীকে ধর্ষণ করা হবে, এ রকম একটি লিস্টও করে তারা।
দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা, বিশেষ করে ধর্ষণ, হত্যা ও যৌন নিপীড়নসহ পারিবারিক নির্যাতনের বিষয়টি যে উদ্বেগজনক, তা বলাই বাহুল্য। আমরা দেখেছি, অতীতে সব সরকারই নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধ কঠোর হাতে দমনের উদ্দেশ্যে আইন প্রণয়ন কিংবা সংশোধন করেছে; কিন্তু সমাজ থেকে এই ক্ষত কখনোই যায়নি। কেবল অন্তর্বর্তী বর্তমান সরকারের সময়ে শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচারকাজ দ্রুততর সময়ের মধ্যে হতে আমরা দেখেছি। আলোচিত হত্যার ঘটনার মাত্র ২ মাস ১১ দিনের মাথায় সব বিচারিক কার্যক্রম শেষ করে আদালতের তরফে রায় এসেছে। দ্রুততর সময়ের মধ্যে রায় প্রদান একটি দৃষ্টান্ত অবশ্যই; কিন্তু দেশে আছিয়ার মতো শত শত শিশু ও নারী প্রতিনিয়ত ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সেসব ঘটনা গণমাধ্যমে কমই আসে। উল্লেখ্য, বিগত সরকারের আমলে তনু ধর্ষণ ও হত্যা মামলা আলোচিত হলেও এখনও বিচার কাজ শেষ হতে দেখিনি আমরা। শুধু তনু হত্যাকাণ্ডই কেন, নারীদের ওপর অতীতে সংঘটিত আলোচিত অনেক নির্যাতন ও হত্যার ঘটনারই বিচার কাজ দূরে থাক, সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়ার নজিরই বেশি।
সুবর্ণচরের সেই গৃহবধূ তো বটেই, আমরা চাই এ ধরনের প্রতিটি ঘটনাই বিচারের আওতায় আসুক এবং দ্রুত বিচার হোক। এ জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সংস্থাকে তৎপর হতে হবে। সমাজে নারীর অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নারীর অবস্থান নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারে বলেও মনে করি আমরা। লিঙ্গ, বৈষম্য, অশিক্ষা, অপুষ্টি বিভিন্ন কারণে এ দেশের নারীরা নিরাপদ নয়; এই নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে না পারলে সুশাসনের অঙ্গীকার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
