গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা এবং জনসংখ্যার ওপর যুদ্ধ
যোশেফ মাসাদ
প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গাজা উপত্যকায় চলমান গণহত্যায় প্রায় ৫৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। সেই সঙ্গে এখনো বেঁচে থাকা ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে বহিষ্কারের নানা পরিকল্পনা চলছে। এসবের মূল লক্ষ্য একটাই : ইহুদিদের হারানো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসরাইলের ইহুদি বসতি স্থাপনকারী উপনিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
জায়নবাদীরা ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শুরুতেই বুঝতে পেরেছিল, ফিলিস্তিনিদের বহিষ্কার করে ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠার মধ্যেই রয়েছে বসতি স্থাপনকারী-ঔপনিবেশিক প্রকল্পটির টিকে থাকার একমাত্র সম্ভাবনা। ১৯৪৮ সালের যুদ্ধের প্রাক্কালে ফিলিস্তিনে ইহুদি ছিল ছয় লাখ (মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ)। আর ওই সময় ফিলিস্তিনির সংখ্যা ছিল সাড়ে ১৩ লাখ।
আর ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৭ সময়কালে হত্যা এবং জাতি নির্মূল অভিযানের মাধ্যমে ইসরাইলে ইহুদি জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ সময় ইহুদি উপনিবেশকারী জনসংখ্যা বেড়ে হয় সাত লাখ ১৬ হাজার। ইহুদিদের সংখ্যা রাতারাতি ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৮১ শতাংশে।
ইসরাইলের ১৯৬৭ সালে তিনটি আরব দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় দেশটির মোট জনসংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। এদের মধ্যে ২৪ লাখই ছিল ইহুদি উপনিবেশবাদী এবং তাদের বংশধর।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধে দখলের পর ব্যাপক হারে বহিষ্কার চলে। গোলান ও সিনাই থেকেও ব্যাপকভাবে বহিষ্কার চলে। ইসরাইল ১৯৬৮ সালের ডিসেম্বরে গাজা থেকে ৭৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে বহিষ্কার করে। এছাড়া কাজের সন্ধানে, পড়াশোনা করতে কিংবা ভ্রমণে মিসরে যাওয়া আরও ৫০ হাজার ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়িতে ফিরতে দেয়নি। এতকিছু করার পরও কিন্তু ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা নিয়ে ইসরাইল দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকে। ১৯৭০-এর দশকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ার ফিলিস্তিনিদের সন্তান বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করতে থাকেন। এ সময় ইসরাইলে নিয়ন্ত্রণে থাকা মোট ফিলিস্তিনির সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ৯৭ হাজার। ফলে ইহুদি জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৫৮ শতাংশ। ১৯৬৭ সালের চেয়ে (৫৬ শতাংশ) সামান্য বেশি।
তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে ইহুদি সংখ্যায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে অনেক ইহুদি ইসরাইলে চলে যায়। তবে ইহুদিদের এমন আগমনও ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি।
২০০০ সালে ইসরাইলের জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৬৪ লাখ। এদের মধ্যে ৫০ লাখ ইহুদি এবং প্রায় ১২ লাখ ফিলিস্তিনি। আর পশ্চিম তীরের জনসংখ্যা ছিল ২০ লাখ, গাজায় ১১ লাখ। এরপর ২০১০ সালে ইসরাইলি জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৭৬ লাখ। এদের মধ্যে ইহুদি ছিল সাড়ে ৫৭ লাখ, ফিলিস্তিনি সাড়ে ১৫ লাখ। আর পশ্চিম তীরে প্রায় ২৫ লাখ, গাজায় ১৫ লাখ। এতে করে ১৯৪৮ সালের পর প্রথমবারের মতো ইহুদি জনসংখ্যা ৫০ শতাংশের নিচে নেমে দাঁড়ায়।
বর্ণবাদী রাষ্ট্রটির কাছে এটি ছিল অসহ্যকর। এ প্রেক্ষাপটেই ইসরাইলি পার্লামেন্ট ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ‘বেসিক ল : ইসরাইল অ্যাজ দি নেশন-স্টেট অব দি জিউশ পিপল’ নামে প্রস্তাব পাশ করে। এতে ইসরাইলকে ইহুদিদের আবাসভূমি দাবি করে জনসংখ্যাগত ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০২০ সালে ইসরাইলের জনসংখ্যা হয় ৯২ লাখ। এদের মধ্যে ৪৮ লাখ ইহুদি, ১৯ লাখ ফিলিস্তিনি। পশ্চিম তীরের জনসংখ্যা ছিল ৩০ লাখ, গাজার ২০ লাখ। ইহুদির সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশে নেমে আসে।
এ প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনি জনসংখ্যা কমাতে বহিষ্কারের নীতি জোরদার করা হয় ইসরাইলে। ইসরাইলি আদালত সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। এখন ইসরাইলের নীতি কেবল গাজা থেকেই নয়, সব ফিলিস্তিনিকেই নিশ্চিহ্ন করা।
মিডল ইস্ট আই থেকে অনূদিত
যোশেফ মাসাদ : জর্ডানের শিক্ষাবিদ
