Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

শিল্পে গ্যাসের জন্য হাহাকার

জরুরি ব্যবস্থা অত্যাবশ্যক

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শিল্পে গ্যাসের জন্য হাহাকার

গ্যাসের জন্য হাহাকার চলছে দেশের প্রায় প্রতিটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে। অত্যাবশ্যক এ উপাদানটির অভাবে চালু রাখা যাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। পণ্য রপ্তানির টাইম শিডিউলও ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পমালিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তারা জানিয়েছেন, গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি নাজুক অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। একটি টেক্সটাইল মিল চালাতে প্রতিদিন ১৫-২০ পিএসআই গ্যাসের প্রয়োজন হলেও দিনের বেশির ভাগ সময় পাওয়া যায় মাত্র এক থেকে দেড় পিএসআই। ফলে বেশির ভাগ সময় কারখানা বন্ধ রাখতে হয়। অনেকে শ্রমিকদের বাড়তি অর্থ দিয়ে রাতে কাজ করাতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে পরিচালন ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে। অনেক শিল্পমালিক আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এভাবে চলতে থাকলে কুরবানির ঈদের পর অর্ধেকের বেশি টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে যাবে। শিল্পমালিকদের এই অভিযোগের পর এক প্রতিক্রিয়ায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দাবি করা হয়, গত বছরের তুলনায় এবার এপ্রিলে ক্যাপটিভ ও শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এ অবস্থায় ব্যবসায়ী মহলে প্রশ্ন উঠেছে-তাহলে এত গ্যাস যাচ্ছে কোথায়?

বাংলাদেশ নিটপণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, গ্যাস সংকটের কারণে শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। শিল্পের চাকা সচল না থাকলে দেশের অর্থনীতি থমকে যাবে। যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সহসভাপতি শামীম ইসলাম যুগান্তরকে জানিয়েছেন, শিল্পে গ্যাসের সরবরাহ পরিস্থিতি খুবই নাজুক। এর ফলে উৎপাদন ভয়াবহভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অথচ দিন দিন পরিচালন ব্যয় বেড়েই চলেছে। গ্যাসের অভাবে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হলেও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ঠিকই গুনতে হচ্ছে।

গ্যাস সংকট এখনকার নয়। দীর্ঘদিন ধরেই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো এর সমাধানের দাবি করে আসছে। কিন্তু সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করা না হলে আগামী দিনগুলোতে জটিলতা আরও বাড়বে। শিল্পে তখন হয়তো গ্যাসই থাকবে না। আর গ্যাস না পেলে শিল্পমালিকদেরকে এবং এর জের ধরে পুরো দেশকেই চড়া মূল্য দিতে হবে। সরকারকে স্বল্প ও দীর্ঘ উভয় মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কারখানাগুলোর ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে জরুরি ভিত্তিতে গ্যাস আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া এখনই নতুন কূপ খননে মনোযোগ দেওয়া উচিত। তাছাড়া ভোলার গ্যাস ঢাকায় আনতে পাইপলাইন স্থাপন এবং অফশোর গ্যাস কূপ খননে মনোযোগ দিতে হবে। সিস্টেম লসে ১৪ শতাংশ গ্যাসের অপচয় রোধে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। কারণ, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পুলিশ ও তিতাস কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এর দায়ভার শিল্পকে বহন করতে হচ্ছে। বাংলাদেশে শিল্পের ভিত্তি হলো সস্তা শ্রম এবং কম দামের গ্যাস। এখন শ্রমের দাম বাড়ছে। আর গ্যাসও হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে। কোনোভাবেই এই বিপদকে আর বাড়তে দেওয়া যাবে না। আমরা আশা করছি, সরকার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম