বন্যা ও জলাবদ্ধতা
জবাবদিহিতা ছাড়া সমাধান মিলবে না
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় টানা বর্ষণে বৃদ্ধি পেয়েছে নদ-নদীর পানি। সতর্কতার কারণে নৌচলাচল বন্ধ রয়েছে অনেক জেলায়। ভারি বর্ষণজনিত কারণে রয়েছে বন্যার আশঙ্কাও। এদিকে বৃহস্পতিবার কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানীর অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গলি থেকে রাজপথ পানিতে তলিয়ে যায়। এতে নগরজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়; গণপরিবহণ, ব্যক্তিগত গাড়িগুলোকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বৃষ্টির পানি ও ড্রেনের বর্জ্য একাকার হয়ে যাওয়ায় চলাচলের সময় চরম দুর্ভোগে পড়ে নগরবাসী।
রাজধানীকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে শতবর্ষেরও বেশি সময় আগে বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ স্যার প্যাট্রিক গেডিস ঢাকা শহর ও এর আশপাশের নদী, খাল, জলাধারগুলো সংস্কার ও সংরক্ষণে গুরুত্ব আরোপের কথা বলেছিলেন। শতবর্ষ পরও কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ ঢাকা শহরকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে স্যার প্যাট্রিক গেডিসের পরিকল্পনাকেই গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছেন। ঢাকা শহর ও এর আশপাশে জালের মতো যেসব নদী, খাল, জলাধার রয়েছে-সেগুলো সংস্কার ও সংরক্ষণে গুরুত্ব প্রদান করা হলে বৃষ্টির পানি খাল দিয়ে নদীতে গিয়ে পড়বে।
ইতিহাসবিদদের মতে, ঢাকায় খালের সংখ্যা অর্ধশতেরও বেশি; যার বেশকটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন। ফলে এখনো যেগুলো সচল এবং যেগুলোকে সচল করা সম্ভব; সেগুলোর সংস্কার ও সংরক্ষণে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করা হলে রাজধানীর জলাবদ্ধতা অনেকটাই কমবে, এমনটি আশা করাই যায়। পরিতাপের বিষয়, এদেশের প্রকল্প বাস্তবায়নে লুটপাট আর দুর্নীতির কারণে অর্থের অপচয়ই শুধু নয়, কখনো কখনো পুরো টাকাটাই লোপাট হয়ে যায়। বিগত সরকারের আমলে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে এবং বন্যামুক্ত করতে খাল-নালার সংস্কারসহ বিভিন্ন প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও কাজের কাজ যে তেমন কিছু হয়নি, সাম্প্রতিক জলাবদ্ধতাই এর প্রমাণ। এহেন কর্মে কবির সেই কথাটাই বারবার সত্য প্রমাণিত হয়-বাঙালি শুরু করে; কিন্তু শেষ করতে পারে না। বন্যা রোধ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে এতসব প্রচেষ্টা কেন ভেস্তে গেছে, কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর আমরা পাইনি। সরকারি টাকার অপচয় হলে কার কী সমস্যা, এমন মনোভাব যদি থাকে প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের, তাহলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে, যা বলাই বাহুল্য।
আমাদের কথা হলো, শহরগুলোকে বন্যা ও জলাবদ্ধতামুক্ত করতেই হবে। গেল কদিনের বৃষ্টিতে যে জলাবদ্ধতার অভিজ্ঞতা হলো নগরবাসীর, তাতে একটি কথাই বলতে হচ্ছে-এ অবস্থা বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ চলতে পারে না। বাস্তবানুগ প্রকল্প গ্রহণ করে বরাদ্দকৃত টাকার সদ্ব্যবহার করতে হবে। প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিও নিশ্চিত করতে হবে। বস্তুত রাজধানীর জলাবদ্ধতা সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করার প্রধান কারণ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ের অভাব। কাজেই সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে।
