৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের প্রশ্ন
ঐকমত্যের ভিত্তিতেই নেওয়া হোক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ শর্তসাপেক্ষে সংশোধনের বিষয়ে বিএনপিসহ রাজনেতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে, এটি আশাব্যঞ্জক। শর্তের মধ্যে রয়েছে অর্থবিল, আস্থা ভোট ও সংবিধান সংশোধন; এ তিনটি বিষয় ছাড়া সংসদ-সদস্যরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারবেন-দলের বিরুদ্ধেও ন্যায়সংগত কথা বলতে কোনো বাধা থাকবে না বলে একমত হয়েছে দলগুলো। উল্লেখ্য, বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ-সদস্যরা নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না। সেখানে বলা আছে, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসাবে কোনো ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন বা সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে। এ অনুচ্ছেদের সমালোচনায় বলা হয়ে থাকে, এর মাধ্যমে ব্যক্তিচিন্তা বা ব্যক্তিগত মতকে অস্বীকার করা হয়। আবার এ অনুচ্ছেদ না থাকলে সংসদে ‘হর্স ট্রেডিং’ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বলা বাহুল্য, হর্স ট্রেডিংয়ের সুযোগ থাকলে সরকারের স্থায়িত্ব হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। তাই ঐকমত্যের ভিত্তিতেই ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন হওয়া প্রয়োজন।
বস্তুত এ বিধানে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করেছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন। তাদের প্রস্তাব ছিল, অর্থবিল ছাড়া অন্য যে কোনো বিষয়ে সংসদের নিুকক্ষের সদস্যদের নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে। মঙ্গলবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন প্রশ্নে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে বিএনপির মত হচ্ছে, ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আস্থা ভোট না থাকলে সরকার পরিচালনায় স্থায়িত্ব থাকবে না, প্রতিনিয়ত সরকার পরিবর্তন হতে থাকবে। আস্থা ভোট, অর্থবিল এবং সংবিধান সংশোধন ছাড়া সংসদ-সদস্যরা স্বাধীনভাবে মতামত প্রদান করবেন, এ বিষয়ে বিএনপি একমত। তবে দলটি এতে জাতীয় নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। এর বাইরে সব বিষয়ে দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন সংসদ-সদস্যরা। অন্যদিকে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে অর্থবিল, আস্থা ভোট ও সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত বিষয় ছাড়া সব বিষয়ে সংসদ-সদস্যদের দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। আর এনসিপির মত হচ্ছে, অর্থবিলের পাশাপাশি আস্থা ভোট থাকতে হবে, কারণ সংসদ-সদস্যদের স্বাধীনতা যেমন দরকার, তেমনই দরকার সরকারের স্থিতিশীলতা। কাজেই দেখা যাচ্ছে, ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান কাছাকাছি। এ বিষয়ে একরকম ঐকমত্য রয়েছে। আর ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা।
