Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

এসব কেমন মামলা!

খালাসের হার বিস্ময়কর

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এসব কেমন মামলা!

প্রতীকী ছবি

সারা দেশে, বিশেষ করে ঢাকায় দায়েরকৃত মামলার বিপরীতে আসামি খালাসের যে পরিসংখ্যান মিলেছে, তা এক কথায় উদ্বেগজনক। বুধবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-ঢাকার অধস্তন আদালতে গেল মে মাসে ফৌজদারি অপরাধের ৮৮ শতাংশ মামলায়ই আসামিরা খালাস পেয়ে গেছেন। অপরদিকে সাজা হয়েছে মাত্র ১২ শতাংশ মামলায়। ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে-ধর্ষণ, হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই, নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো স্পর্শকাতর অপরাধের সঙ্গে জড়িতরাও পার পেয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের ফৌজদারি মামলার রায়সংক্রান্ত মাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। আইনজীবী ও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, মামলার তদন্তে দুর্বলতা, সাক্ষীর অভাব, দীর্ঘ প্রক্রিয়া, নানাভাবে সময়ক্ষেপণ ও প্রসিকিউশনের দুর্বল ভূমিকার কারণে এমনটি হচ্ছে। তাদের শঙ্কা, এ ধারা অব্যাহত থাকলে বিচারব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষ আস্থা হারাবে এবং অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে।

ডিএমপির এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মে মাসে বিচার প্রক্রিয়া শেষে নিষ্পত্তিকৃত ১,৬৫৬টি মামলার মধ্যে ১,৩৯৩টিতেই আসামিরা খালাস পেয়েছেন। অপরদিকে সাজার রায় হয়েছে মাত্র ১৯৩টি মামলায়। অন্যান্যভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে ৭০টি মামলা। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে ধর্ষণ, হত্যা, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, এমনকি পুলিশ আক্রমণের মতো মামলায়ও সাজার হার আশঙ্কাজনকভাবে কম। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এটাও বলছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি খালাস পাওয়ার অর্থ সবসময় এই নয় যে, মামলাটি মিথ্যা। তদন্তে দুর্বলতা, ময়নাতদন্ত কিংবা সুরতহাল প্রতিবেদনের মতো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সময়মতো জমা না দেওয়া, আলামত নষ্ট হওয়া, বাদী ও বিবাদীপক্ষের গোপনে আপস, গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর অনুপস্থিতি ইত্যাদি কারণেও মামলা প্রমাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রসিকিউশনের দুর্বলতার কারণেও আসামি খালাস পান।

তবে যত ব্যাখ্যাই দেওয়া হোক, সব মামলায় ঢালাও নির্দোষ প্রমাণের এ চিত্র পুলিশের মামলা গ্রহণ ও তদন্ত কার্যক্রমকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। কোনো অপরাধে মামলা দায়েরের সময় বিস্তারিত জানা পুলিশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পরবর্তীকালে পুলিশের তদন্তকাজে তা প্রয়োজন হয়। গোড়ায় যদি গলদ থাকে, সেক্ষেত্রে অপরাধের মেরিট বিচারে অপরাধীকে বিচারের কাঠগড়ায় দোষী প্রমাণ করা বাদীর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা মনে করি, মামলা গ্রহণ ও পরিচালনার ক্ষেত্রে কোথায় দুর্বলতা রয়েছে, তা খুঁজে বের করা জরুরি। সামান্য কারণে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া কিংবা মিথ্যা মামলা দায়েরের মাধ্যমে কোনো নাগরিককে হয়রানির শিকার করাও কাঙ্ক্ষিত নয়। অপরাধ দমন এবং বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা ধরে রাখতে সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে, এটাই প্রত্যাশা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম