আশুলিয়া হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন : বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গত বছরের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য কী নৃশংস আচরণ করেছেন, তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে স্পষ্ট হচ্ছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্টেও সারা দেশে আন্দোলনকারীদের কঠোরভাবে দমনের চেষ্টা করা হয়েছে। সেদিন ঢাকার আশুলিয়ায় ঘটে এক নারকীয় হত্যাকাণ্ড। ছয়জনের নিথর দেহ গাড়িতে উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলে পুলিশ। এদের মধ্যে একজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। লাশ পোড়ানোর সেই ভিডিও দেখে আঁতকে উঠেছিল গোটা দেশ। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। ওই ঘটনার লোমহর্ষক তথ্য উঠে এসেছে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদনে। মামলায় সাবেক সংসদ-সদস্য সাইফুল ইসলাম ও ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফীসহ ১৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে তদন্ত সংস্থা। এটি এ বিষয়ক তৃতীয় কোনো মামলা, যার তদন্ত সম্পন্ন হলো।
গত ১৯ জুন চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি জমা দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। যাচাই-বাছাই শেষে এটি ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ হিসাবে দাখিল করবে প্রসিকিউশন। আগামী ২ জুলাই দিন নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানি ১ জুলাই নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এদিকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সংঘটিত গুম, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আরও দুই মাস বাড়ানো হয়েছে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার পৃথক এ আদেশ দেন।
আশুলিয়া হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর বাইরে একজন গুলিতে গুরুতর আহত ছিলেন। সবাইকে প্রথমে একটি ভ্যানে এবং পরে পুলিশের একটি গাড়িতে তোলা হয়। পরে জীবিত একজনসহ ছয়জনকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে সাজ্জাদ হোসেন (সজল), আস সাবুর, তানজীল মাহমুদ সুজয়, বায়েজিদ বুসতামি, আবুল হোসেন ও অজ্ঞাত একজন মারা যান। ৫ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পুলিশ, স্থানীয় এমপি সাইফুল ইসলাম ও তার ক্যাডার বাহিনী ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুলিতে আশুলিয়ায় নিহত হন অন্তত ৩১ জন। পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১৫ জন মারা গেছেন। এছাড়া আশুলিয়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন দেড় হাজারের বেশি মানুষ; যাদের অনেকেই পঙ্গু হয়ে গেছেন। গত বছরের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে সারা দেশে অনেক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। সেসব অপরাধ নিয়ে ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। একইসঙ্গে জোরালো হচ্ছে অপরাধীদের বিচারের দাবি। দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের স্বার্থে গত বছরের জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে সারা দেশে যত অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। সেসব অপরাধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যে বা যারাই জড়িত ছিল, সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে, দেশবাসী এটাই দেখতে চায়।
