Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

এর নাম পরিকল্পিত ট্যানারি!

চামড়া খাতের প্রতি নজর দিন

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এর নাম পরিকল্পিত ট্যানারি!

ট্যানারিশিল্প আগে ছিল রাজধানীর হাজারীবাগে। সেখান থেকে এই শিল্প স্থানান্তর করা হয়েছে সাভারে। তখন বিসিকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, পরিবেশবান্ধব শিল্পনগরী নিশ্চিত করা হয়েছে। বলা হয়েছিল, সাভারের হেমায়েতপুরে ট্যানারি স্থানান্তর করা হলে ইউরোপের ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা যাবে। পাওয়া যাবে এলডব্লিউজির সনদ। চামড়ার দামও বেশি পাওয়া যাবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। এসব কথার ওপর ভিত্তি করেই ট্যানারির মালিকরা কারখানা স্থানান্তর করেছিলেন। কিন্তু এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়নি। বরং জানা যাচ্ছে অনেক দুঃসংবাদ।

জানা গেছে, সাভারের ট্যানারিশিল্পে সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। পরিমাণটা অকল্পনীয়। এ খাত থেকে প্রায় ৪৭৬ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। সিইটিপি প্রকল্পে ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ১২ দফায় এবং নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৫৪৭ কোটি টাকা। এ টাকা থেকে ৪৭৬ কোটি টাকা লোপাট হলে লুট হয়েছে ৮৭.২ শতাংশ টাকা। অন্যদিকে, সিইটিপির ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার কিউবিক মিটার হলেও বাস্তবে তা ১৪ হাজার কিউবিক মিটার। স্বাভাবিকভাবেই ১১ হাজার কিউবিক মিটার ক্রোমিয়ামযুক্ত তরল পদার্থ সরাসরি ফেলতে হচ্ছে ধলেশ্ব^রী নদীতে। ট্যানারির তরল বর্জ্যে আশপাশের পরিবেশ ও নদীদূষণের ফলে ট্যানারির মালিকরা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ পাচ্ছেন না।

আমাদের কথা হলো, সাভারের কথিত শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যারা বিপুল অর্থ লুটপাট করেছেন, সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। গত রেজিমে আমরা দেখেছি, প্রায় প্রতিটি মেগা প্রকল্পে দফায় দফায় ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে শুধুই দুর্নীতি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য। সাভারের ট্যানারিশিল্প এর ব্যতিক্রম নয়। এই শিল্পের পুরো আর্থিক চিত্রটি পরিষ্কার হওয়া দরকার। দ্বিতীয়ত, দূষিত তরল বর্জ্য নদীতে ফেলার ফলে পরিবেশ ও নদীর যে ক্ষতি হচ্ছে, এই দায় কে নেবে? ধলেশ্বরী নদীর জীববৈচিত্র্য এখন আর দৃষ্টিতে আসে না। প্রতিটি কারখানায় যে ড্রেনেজ সিস্টেম রয়েছে, সেগুলোও অপরিকল্পিত। অর্থাৎ পুরো প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়েছে হেলাফেলায়। উদ্দেশ্য ছিল টাকা কামানো। চামড়াশিল্প আমাদের একটি বড় রপ্তানি খাত। এ খাতকে শক্তিশালী করার প্রয়োজন ছিল যেখানে, সেখানে এ শিল্পকে দুর্বল করা হয়েছে। ট্যানারিশিল্পের বর্তমান করুণ দশা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়, তা নিয়ে সরকারকে গভীরভাবে ভাবতে হবে। এ শিল্পের বর্তমান ত্রুটিগুলো কাটিয়ে উঠে বাঁচাতে হবে চামড়া খাত এবং একইসঙ্গে পরিবেশ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম