যাদের খবর কেউ রাখে না : বস্তিবাসীর জীবনমান উন্নয়নে নজর দিন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অতীতে রাজধানীর বস্তিবাসীর জীবনমান উন্নয়নে অনেক আলোচনা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, রাজধানীর বস্তিবাসী সব ধরনের মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত। উপকূলীয় এলাকার জলবায়ু উদ্বাস্তুদের একটি বড় অংশ রাজধানীতে এসে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের প্রধান ঠিকানা রাজধানীর বস্তি। এ ছাড়া আরও নানা কারণে রাজধানীর বস্তিবাসীর সংখ্যা বাড়ছে। বস্তিতে বসবাসকারী দিনমজুর ও গরিব মানুষকে নিয়ে জমজমাট ব্যবসা করে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা, বিদ্যুৎসহ সেবা খাতের কিছু অসাধু লোক। বস্তিকেন্দ্রিক অপরাধের সঙ্গে জড়িতরা পায় সুবিধাভোগী প্রভাবশালীদের আশকারা। এ ধারা চলছে দশকের পর দশক ধরে। এক গবেষণায় জানা যায়, শহরে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে। বস্তিতে বাস করা অর্ধেক পরিবার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটায়। বস্তির শিশুদের প্রায় ৫০ শতাংশ খর্বাকৃতির। তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া দরকার।
কোনো কোনো গবেষকের মতে, অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে শহরের প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বাস করে। কিন্তু স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের ফাঁকে পড়ে তারা মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত। সমাজতাত্ত্বিকরা বলেন, বস্তিবাসীদের বাঁকা চোখে দেখা হয়, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়েছে। কিন্তু এ জীবনের আড়ালে একই দেশে জন্ম নেওয়া কিছু মানুষ কীভাবে নাগরিক হয়ে উঠতে পারেননি, তা নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। এ জীবন থেকে বের করে তাদের সুস্থধারার জীবন দেওয়ার জন্য কেউ কাজও করেনি।
রাজধানীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষই বস্তিতে বসবাস করেন। ঢাকার বস্তিবাসীর জীবন কত দুর্ভোগে ভরা, তা বহুল আলোচিত। বস্তিতে বসবাসকারী মানুষের জীবন-সংগ্রাম নিয়ে এত আলোচনা হলেও তাদের জীবনমানে কেন পরিবর্তন আসেনি, তা খতিয়ে দেখা দরকার। যেহেতু বস্তিতে বসবাসকারী বিশাল জনগোষ্ঠী রাজধানীর অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে, সেহেতু তাদের জীবনমানের পরিবর্তনে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। আমাদের মনে রাখা দরকার, বস্তিবাসীও আমাদের অংশ। তাদের সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা প্রদানে আমাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া রাজধানীর বস্তিবাসীর জীবনমানে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে কিনা সন্দেহ। দেশের টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নের বিকল্প নেই।
