রক্ষকই যখন ভক্ষক
দুদকের অভিযুক্ত চেয়ারম্যানদের বিচার হবে কি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অতীতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যে দুর্নীতি দমনের চেয়ে দায়মুক্তি দেওয়ার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল, তা বহুল আলোচিত। দুদকের আইন, সুযোগ, ক্ষমতা সব থাকলেও সংস্থাটির যোগ্যতা ও দক্ষতার অভাব ছিল-এটিও বহুল আলোচিত। বস্তুত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বড় বড় দুর্নীতির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার ‘কারিগর’ ছিলেন দুদকের সাবেক তিন চেয়ারম্যান-এম বদিউজ্জামান, সৈয়দ ইকবাল মাহমুদ এবং মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লা। তাদের ইশারায় আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী-এমপিদের রক্ষা করা হতো। শুধু তাই নয়, মামলার জালে ফাঁসানো হতো সরকারবিরোধী নেতা ও ব্যবসায়ীদের। আবার তাদের বিরুদ্ধে ব্যাংক-বিমা লোপাটকারী অলিগার্কদের ছেড়ে দিয়ে অঢেল অর্থ উপার্জনের অভিযোগও রয়েছে। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী সরকারের ইশারায় দুদককে রীতিমতো হাতিয়ারে পরিণত করেছিলেন দুদকের উল্লিখিত সাবেক তিন চেয়ারম্যান। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতীতে দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্বে যারা ছিলেন, তারা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছিলেন বলেই দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারেননি। অতীতে দায়িত্ব পালনকারী দুদকের চেয়ারম্যান-কমিশনারদের কোন প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান বদিউজ্জামানের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অভিযোগ হচ্ছে-তার আমলে পদ্মা সেতু দুর্নীতির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। তার তত্ত্বাবধানে এ মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হলো, সরষের ভেতরে যদি ভূত থাকে, তাহলে ভূত তাড়াবে কে?
জানা যায়, দুদককে সবচেয়ে কলঙ্কিত করেছেন সৈয়দ ইকবাল মাহমুদের কমিশন। এ কমিশনের সময় (২০১৬ সালের ১০ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত) তৎকালীন সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নই ছিল সংস্থাটির মূল কাজ। এ কমিশনের আমলে বড় বড় অনেক দুর্নীতিবাজকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আবার দুদকের আওতাভুক্ত নয়-এমন অভিযোগে বিরোধী দলের নেতা ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হয়েছিল। অভিযোগ আছে, এ কমিশনের বিদায়ের আগে শত শত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মামলা ও অনুসন্ধান নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এ কমিশনের আমলে গণহারে অভিযুক্তদের দায়মুক্তির রহস্য উদ্ঘাটন করা দরকার। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুদককে ধ্বংস করার দায়ে এবং দুর্নীতিবাজদের রক্ষার অভিযোগে দুদকের উল্লিখিত সাবেক চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ভবিষ্যতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
