Logo
Logo
×

ঈদ কেনাকাটা

সাক্ষাৎকার

ভার্চুয়াল মুদ্রার প্রচলন অচিরেই শুরু হবে

তৌহিদুল আলম, হেড অব কার্ডস, সিটি ব্যাংক পিএলসি

Icon

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জীবনের মৌলিক চাহিদা অথবা যে কোনো আনন্দ-বিনোদন বা সখ-স্বপ্ন পূরণে প্রথমেই যে উপাদানটির কথা মাথায় আসে তা হলো টাকা, মুদ্রা বা অর্থ। পৃথিবীতে মুদ্রা আসার আগে প্রচলন ছিল বিনিময় প্রথা। খ্রিষ্টপূর্ব কয়েক হাজার বছর ধরে চলা এ সিস্টেমের পর খ্রিষ্টপূর্ব ৩ হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়ার শহরগুলোতে প্রথম চালু হয় মুদ্রা ব্যবস্থা। সেখানে কৃষক তার পণ্য জমা রেখে একটা ধাতব টোকেনের বিনিময়ে সে তার ঋণ পরিশোধ করত। এরপর এ মেসোপটেমিয়ায়ই প্রথম চালু হয় ইতিহাসের প্রথম মুদ্রা শেকেল। সেই থেকে কালের বিবর্তনে রুপা, ব্রোঞ্জ, স্বর্ণের মুদ্রার পর কাগুজে নোটের আবির্ভাব হয় গত শতাব্দীতে যা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পায়। এখন সামনের দিনগুলোতে হয়তো ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সেই কাগুজে নোটও আস্তে আস্তে কমে গিয়ে ভার্চুয়াল মুদ্রার প্রচলন খুব অচিরেই শুরু হয়ে যাবে। গত শতাব্দীর শেষ দিকে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সূচনা হয়, যা এ শতাব্দীর প্রথম দশকে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এবং দ্বিতীয় দশকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আধুনিক রূপ লাভ করে। আমাদের সৌভাগ্য হলো যে, আমরা ফিজিক্যাল কারেন্সি থেকে ডিজিটাল কারেন্সিতে মানুষের লেনদেনের অভ্যাস পরিবর্তন হতে সচক্ষে দেখছি।

সিটি ব্যাংক বহু বছর ধরে কার্ড ইস্যু করার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক হিসাবে বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে। প্লাস্টিক মানিকে মানুষের কাছে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে সিটি ব্যাংক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সিটি ব্যাংক বাংলাদেশে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডকে শুধু লেনদেনের মাধ্যম হিসাবে নয়, একটি জীবনধারা হিসাবেও প্রতিষ্ঠিত করেছে। বর্তমানে মানুষ শুধু ক্রেডিট ব্যবহারের জন্য বা প্লাস্টিক মানির সুবিধার কথা ভেবেই এসব কার্ড ব্যবহার করে না, বরং বিভিন্ন প্রিমিয়াম সার্ভিসের জন্যও এগুলো ব্যবহার করে থাকে। দেশ ও বিদেশে বিভিন্ন আকর্ষণীয় অফার এবং সার্ভিসের মাধ্যমে সিটি ব্যাংক অনন্য স্থান দখল করে আছে।

জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৮ম এবং অর্থনীতির দিক থেকে ৩৫তম। এত বিশাল জনগোষ্ঠী থাকা সত্ত্বেও, দেশে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ২৬ লাখের কিছু বেশি, যার মধ্যে প্রাথমিক কার্ডের সংখ্যা ১৫ লাখের সামান্য বেশি। যেহেতু একজন ব্যক্তির কাছে একাধিক কার্ড থাকে, তাই প্রকৃত প্রাথমিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮-৯ লাখের বেশি নয়। এশীয় দেশগুলোর মান অনুযায়ী, প্রায় ১৭-১৮ কোটি জনসংখ্যার এবং ৭.৩৪ কোটি শ্রমশক্তির দেশে কমপক্ষে ১ কোটি মানুষের হাতে ক্রেডিট কার্ড থাকা উচিত। বর্তমানে দেশে প্রায় ১ কোটি কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) থাকলেও, ২০২২ সালের জুলাই থেকে অর্থ আইন ২০২২ অনুযায়ী ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার যোগ্য জনসংখ্যা ৮৫ লাখ থেকে কমে ৩০ লাখে নেমে এসেছে। এর কারণে ক্রেডিট কার্ডের বাজার সম্প্রসারণ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া অপ্রতুল গ্রাহক চাহিদা, ক্রেডিট কার্ডের প্রতি সাধারণ মানুষের ভীতি, অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োযিত পেশাজীবীদের প্রতি ক্রেডিট কার্ড প্রদানে ব্যাংকের অনীহা, অতিরিক্ত প্রতিযোগিতা ইত্যাদিও ক্রেডিট কার্ডের বাজারে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। সার্বিকভাবে দেশের মানুষের লেনদেন ব্যংকিং চ্যানেলে আনার জন্য এবং সত্যিকারের ক্যাশলেস সোসাইটি নির্মাণের পথে ক্রেডিট কার্ডের বাজার সম্প্রসারণের কোনো বিকল্প নেই। তাই এই ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা প্রয়োজন। এ ছাড়া কঠোর ক্রেডিট পলিসি অনুযায়ী ছাত্র এবং নিম্নমধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীর কাছে ক্রেডিট কার্ড পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমি আশাবাদী যে, ক্রেডিট কার্ড ধীরে ধীরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মানুষ কিন্তু ক্রেডিট কার্ড নিতে চায় এবং ব্যবহার করতে চায়। এমনকি বিদেশ ভ্রমণে মানুষের কাছে এখন ক্যাশ বহন করার চেয়ে ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ড বেশি পছন্দ। এর মধ্যে যেহেতু ক্রেডিটে খরচ করা যায় সেক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডই মানুষের বেশি পছন্দ। যারা আসলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সঠিকভাবে জানে তারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে বছরে যা বার্ষিক ফি দেন তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লাভ করতে পারেন। ২০২২ সালে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকরা বিদেশে খরচ করেন ৩,২২২ কোটি টাকা যা ২০২৪ সালে গিয়ে দাঁড়ায় ৪,৭৮০ কোটি টাকায়! অর্থাৎ ২ বছরে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে খরচ ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এই ডেটা থেকে সহজেই বুঝা যায় যে বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে মানুষ এখন ক্রেডিট কার্ডের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি অনুভব করছেন।

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সার্ভিস যাত্রার কথা বলতে গেলে, ২০০৪ সালে ভিসা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা প্রথম ক্রেডিট কার্ড সার্ভিস চালু করি। এরপর ২০০৯ সালে আমরা বাংলাদেশে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকারী এবং অ্যাকোয়ারার হিসাবে যাত্রা শুরু করি এবং ব্যাংক হিসাবে আমরাই প্রথম বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক লাউঞ্জ সার্ভিস চালু করি। এভাবে আরও কিছু আকর্ষণীয় স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে পথ চলতে চলতে আজ বেশ কয়েক বছর হলো কার্ড ব্যবসায় বাংলাদেশে আমরা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়ে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ, যা বাজারে সর্বোচ্চ এবং ডেবিট কার্ডের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। দেশীয় ৪৪টি ব্যাংকের ইস্যু করা ক্রেডিট কার্ডের মোট লেনদেনের প্রায় ২৫ শতাংশ সিটি ব্যাংক একাই দখল করে আছে। গ্রাহক চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেওয়া, বেস্ট ইন ক্লাস কাস্টমার সার্ভিস ও লয়্যালটি প্রোগ্রাম, কম্পিটিটিভ ভ্যালু পিলার, বিস্তৃত মার্চেন্ট নেটওয়ার্ক, সর্বাধিক কাস্টমার টাচপয়েন্ট, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপিত দেশের প্রথম ব্যাংক পরিচালিত লাউঞ্জ, স্টেট অফ দি আর্ট সিটিটাচ ইন্টারনেট ব্যাংকিং অ্যাপ, সুদক্ষ সেলস টিম, ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং সব থেকে বড় কথা গ্রাহক সন্তুষ্টি আমাদের এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। আমরা যেহেতু আমেরিকান এক্সপ্রেসের (অ্যামেক্স) একমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যাংক, তাই আমাদের প্রডাক্ট অফারিং-এর সবচেয়ে বড় অংশই হলো এ নেটওয়ার্কের। অ্যামেক্স সেঞ্চুরিয়ন লাইনে আমাদের HNW গ্রাহকদের জন্য রয়েছে অ্যামেক্স প্লাটিনাম কার্ড, এরপর Super Affluent গ্রুপের জন্য রয়েছে অ্যামেক্স গোল্ড কার্ড, আর Upper Mass সেগমেন্টের জন্য রয়েছে অ্যামেক্স ব্লু কার্ড। অ্যামেক্স সেঞ্চুরিয়ন বাদে আমাদের অ্যামেক্স ব্লু বক্স লাইনে আছে নারীদের জন্য স্পেশালাইজড কার্ড সিটি আলো অ্যামেক্স কার্ড, গ্রোসারি শপারদের জন্য অ্যামেক্স আগোরা কোব্র্যান্ড কার্ড, ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লাইয়ারদের জন্য বিমান অ্যামেক্স কোব্র্যান্ড কার্ড এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলামনাই ও শিক্ষকদের জন্য ডিইউ অ্যামেক্স কোব্র্যান্ড কার্ড। আর ভিসা নেটওয়ার্কে আমাদের রয়েছে ভিসা ইনফিনিট ও ভিসা প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড। ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ডটি আমরা গত বছর Super Affluent গ্রাহকদের জন্য সংযোজন করেছি। আমরা ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট যেমন- RFCD, ERQ অ্যাকাউন্টের বিপরীতেও ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে থাকি। এ ছাড়া আমাদের ইস্যু করা প্রায় ১০ লাখ ডেবিট কার্ডের মধ্যে আছে ভিসা, অ্যামেক্স, মাস্টারকার্ড যার সবই ডুয়েল কারেন্সি।

সারা বছর আমরা বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি উৎসব-পার্বণেও গ্রাহকদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকি। যেমন-ঈদের আনন্দ যাতে আরও বেশি প্রাণবন্ত ও সাশ্রয়ী হয় সে বিবেচনায় আমরা কার্ডের অফারে স্বকীয়তার দিক দিয়ে যেমন চমক রাখার চেষ্টা করি ঠিক তেমনি এ রমজান ও ঈদ উপলক্ষ্যেও গ্রোসারি ও নতুন জামা-কাপড়সহ সব ধরনের কেনাকাটায় ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডধারীদের জন্য নানা চমক রেখেছি। আর এ ঈদে অফারগুলো শুধু ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ না রেখে সারা দেশেই বিস্তৃত করেছি যার মধ্যে রয়েছে ৫০০-এর অধিক মার্চেন্ট এবং ৩,৩০০-এর অধিক আউটলেট।

এই ঈদ ক্যাম্পেইনে আমরা প্রধান যে অফারগুলো দিচ্ছি তা হলো-

▶ দেশের শীর্ষস্থানীয় লাইফস্টাইল ও গ্রোসারি আউটলেটে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক।

▶ ৪৫০টিরও বেশি রিটেইল স্টোরে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট, যা সারা দেশে বিস্তৃত।

▶ ১০০টিরও বেশি রেস্টুরেন্টে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট।

▶ বিভিন্ন জনপ্রিয় অনলাইন মার্চেন্ট ও ফুড ডেলিভারিতে ২৫ শতাংশ পর্যন্তডিসকাউন্ট।

▶ ৪০টিরও বেশি রেস্টুরেন্টে BOGO ইফতার ও ডিনার অফার, যার মধ্যে রয়েছে ৫-স্টার হোটেলের অভিজাত ডাইনিং।

এ ঈদে সিটি ব্যাংকের অফারগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে এ লিংক থেকে : citybankplc.com/ramadan2025।

নিয়মিত কার্ডের সুবিধাগুলো পর্যালোচনা করে বাজারে প্রতিযোগিতামূলক রাখার মাধ্যমেই আমরা বহু বছর ধরে শীর্ষস্থানে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। ভবিষ্যতেও এর ব্যতিক্রম হবে না। তবে এটুকু নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমাদের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ অবশ্যই প্রতিযোগিতামূলক, আকর্ষণীয় এবং চমকপ্রদ হবে। আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতিমালা অনুসরণ করে সর্বোচ্চ নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার এবং গ্রাহকসেবা যতটা সম্ভব ডিজিটাল চ্যানেলে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। অদূর ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগত চমকও অপেক্ষা করছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, অন্য দেশের জন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়াক এবং সার্বিকভাবে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আর্থিক খাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে আমরা বদ্ধপরিকর।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম