Logo
Logo
×

বিনোদন

গানের মাধ্যমে তরুণদের হৃদয়ে নবীপ্রেম জাগাতে চান মুছলেহ

তানজিল আমির

তানজিল আমির

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২৫ পিএম

গানের মাধ্যমে তরুণদের হৃদয়ে নবীপ্রেম জাগাতে চান মুছলেহ

ইসলামি সংগীত শিল্পী মুছলেহ উদ্দিন আকন্দ।

ইসলামি সংগীত শিল্পী মুছলেহ উদ্দিন আকন্দ মুছলেহ নামে পরিচিত। মুছলেহ’র কণ্ঠে প্রকাশ হয়েছে একাধিক বাংলা ও আরবি গান। ‘ফিদাকা কালবি’, ‘ওয়া রাফানা লাকা জিকরাক’, ‘হৃদয়ের গহীনে’, ‘ইয়া হাবিবি’সহ অনেকগুলো হৃদয়স্পর্শী আরবি নাতে রাসূল গেয়েছেন। 

তার গানগুলো ইউটিউবে লাখ লাখ বার দেখা হয়েছে। রাসুলকে নিয়ে গাওয়া এসব গানে সব শ্রেণির শ্রোতার কাছে ভালোবাসা পাচ্ছেন মুছলেহ। তার সংগীত সাধনা নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- তানজিল আমির

* গানের বিষয়বস্তু দিয়ে শুরু করি। আপনার গানের বেশিরভাগই ভক্তিমূলক। এর কারণ কী?

** আমি গান করি মনের আনন্দে, হৃদয় তাজা রাখতে। এ কারণে গানে ফুটে উঠে সেই আকুলতা- যা মানুষের আরাধ্য বিষয়। আরাধ্য মানে এমন কিছু যা ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্র। আমাদের ভালোবাসার পাত্র নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমার সবকিছু প্রিয় নবীর জন্য উৎসর্গকৃত। তাই গানের কথা ও চিত্রায়নে এটাই প্রকাশ পায়। গানের মাধ্যমে আমি চাই, ইসলাম ও নবীজীর প্রতি ভালোবাসা এবং তরুণদের হৃদয় জাগ্রত হোক।

আমার গানগুলো ইসলামি বিশ্বাস ও মূল্যবোধকেন্দ্রিক। আমি গানের কথা এবং ভিডিওতে ইসলাম ও আধুনিকতার সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা করি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আধুনিকতা ইসলামের পথে বাঁধা নয়। আমি ইউরোপে বড় হয়েছি। ফলে আমার গানে আরব, মুসলিম এবং ইউরোপীয় এই তিন পরিচয়ের প্রতিফলন চোখে পড়ে। ভিডিওর পোশাক, গানের কথা ও গল্পের ইসলামি ঐতিহ্য ফুটে ওঠে। 

* নিজেকে শিল্পী হিসেবে তৈরির লক্ষ্য?

** আমি নিজেকে শুধু একজন ‘গায়ক’ ভাবি না, গায়ক হিসেবে দেখি না, নিজেকে পথ দেখানো আর্টিস্ট বা শিল্পী হিসেবে ভাবি। আমার মূল লক্ষ্য হলো, আজকের তরুণ প্রজন্ম। যারা কখনো কখনো অন্ধকারে হারিয়ে যায়। নেশা আর অবসাদে জড়িয়ে পরিচয় সঙ্কটে ভোগে। তাদের কাছে আধুনিক ভাষা, অত্যাধুনিক ভিজ্যুয়াল ও উচ্চমানের সাউন্ড দিয়ে আল্লাহর দয়ার কথা ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। আমি চাই, আমার কাজ দেখে বা শুনে একজন তরুণ মনে করুক- ‘হ্যাঁ, আমি ভুল করেছি, কিন্তু আমার জন্য তওবার দরজা এখনও খোলা আছে।’ শিল্পী হিসেবে হিসেবে পূর্ব-পশ্চিমের দূরত্বটা কমাতে চাই, সেই সঙ্গে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে চাই।

এখনকার সংগীত তো শুধু শূন্যতায় পরিপূর্ণ। গানের বিষয় ভালোবাসা আর প্রেমের ব্যর্থতাজনিত আঘাত। কিন্তু এর বাইরেও তো জীবনে অনেক কিছু রয়েছে। সেই উপলব্ধি থেকে, ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গা অটুট রেখে, ইসলামি অনুশাসন মেনে জীবনযাপন করে, অন্তরে রাসুল প্রেম জাগ্রত রেখে ভালো কিছু করার চেষ্টা করছি। 

* কতদিন যাবৎ গান করছেন?

** শিশুকাল থেকেই আমি হামদ–নাত গাইতাম। শখের বশে মাদ্রাসার বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে গান গেয়েছি। তবে কয়েক বছর ধরে আমি পেশাদার শিল্পী হিসেবে গান করছি। গানের সঙ্গে সিনেমাটিক ভিজ্যুয়াল, কনসেপ্টচুয়াল স্টোরি, বিদেশের বিভিন্ন লোকেশনে চিত্রায়ন এবং টিমওয়ার্ক সংযুক্ত করেছি। যেন নাশিদ শুধু শোনা না যায়, দেখা যায়; হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। 

এক কথায়, শৈশব থেকে গানের সঙ্গে আছি, সাম্প্রতিক সময়ে গানকে পূর্ণ সময়ের মিশন বানিয়ে ফেলেছি। আমার জীবনের সঙ্গে গান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জীবনকালজুড়ে গান নিয়ে, গানের সঙ্গেই থাকতে চাই।

মুছলেহ’র কণ্ঠে প্রকাশ হয়েছে একাধিক বাংলা ও আরবি গান।

* ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? বর্তমানে কী কাজ করছেন?

** আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমার নতুন একটি গান মুক্তি পাবে। এছাড়া আমি ধারাবাহিকভাবে নতুন নতুন নাশিদ প্রজেক্ট, শর্টফিল্ম, স্টাইল ভিজ্যুয়াল, ডকুস্টোরি এবং কনসেপ্টচুয়াল ভিডিও নির্মাণ করতে চাই। যেগুলো তরুণদের বাস্তব জীবন, মানসিক লড়াই, তওবা, আশা আর আল্লাহর রহমতের গল্প বলবে। আগামী ‘রাহমান Rahman’ প্রজেক্ট তার একটি বড় উদাহরণ। এর পর সিরিজ আকারে আরও বড় কাজ করার ইচ্ছা আছে।

ইচ্ছা আছে, ভবিষ্যতে তরুণদের জন্য ট্রেনিং কোর্স, ওয়ার্কশপসহ ভিন্ন একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার। যেখানে তারা হালাল আর্ট, নাশিদ, ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং ও ইসলামি কনটেন্ট ক্রিয়েশনে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে।

দেখুন, ব্যবসা আমাকে আর্থিক স্বাধীনতা দিয়েছে। আর নাশীদ ও আর্ট আমাকে মিশন দিয়েছে। ভবিষ্যতে আমি এই দু’টোকে একসঙ্গে নিয়ে আল্লাহর রাহে এবং উম্মাহর তরুণদের জন্য আরও বড় পরিসরে কাজ করতে চাই।

* এই সময়ে যখন অন্যরা ভিউ, টিকটক, রিলস মাথায় রেখে জাঁকজমক মিউজিক ভিডিওসহ গান প্রকাশ করছে, সেখানে আপনি ভিন্ন ধাঁচে গানের ভিডিও প্রকাশ করছেন। এই আত্মবিশ্বাস আসল কোথা থেকে?

** এটা অনেকটা বিশ্বাসের বিষয়। আমার মনে হয়, গান শুধু কানে শুনে অনুভব করার বিষয় নয়, প্রতিটি গানই একেকটা গল্প। আর এই গল্প বলার প্রয়োজনে ভিডিও দরকার। আর ভিডিওতে লোকেশন, কোরিওগ্রাফ ভালো হলে শ্রোতারা আরও বেশি কানেক্ট হয়। সেক্ষেত্রে বাজেটের বাধা কাটিয়ে আমি ভিন্ন ও ভালো কিছু করতে চেয়েছি। 

* গানের চিত্রায়ন ও মিউজিক নিয়ে অনেকেই আপনার সমালোচনা করে, বলে টাকার জোরে শিল্পী হয়েছেন, এটাকে কীভাবে দেখেন? 

** সমালোচনাগুলোকে আমি খুব একটা নেগেটিভভাবে দেখি না। অডিয়েন্সের প্রতিটি ফিডব্যাক আমাকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। পৃথিবীর সবকিছুই নিজস্ব গতিতে চলে। আমি বা আমার গান চাইলেও জোর করে কারও কাছে পৌঁছাতে পারব না। আবার অডিয়েন্স যদি আমাকে খুঁজে নেয় তখন লুকিয়ে রাখাও সম্ভব হবে না। তাই এমন সমালোচনা নিয়ে খুব একটা ভাবি না। এই যে আমাদের মেইনস্ট্রিম মিডিয়া ইসলামি সংগীতের প্রচারণার সুযোগ কম। তাই বলে কাজ হচ্ছে না, এমন নয়। আমি ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে গান বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। ইউটিউবে আমার গান মিলিয়নেরও বেশি হিট পেয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম