ইউক্রেন ভূখণ্ডে রাশিয়ার রাজত্ব
ইউক্রেন ভূখণ্ডে রাশিয়ার রাজত্ব
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৫, ১০:১০ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের কয়েকটি প্রধান অঞ্চল দখলে নিয়েছে রাশিয়া। পশ্চিম ও কেন্দ্রীয় ইউক্রেন এখনো কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে এখন রাশিয়ার রাজত্ব। রুশ সেনা শক্তি সেখানে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। এই দখলকৃত এলাকা ইউক্রেনের রাজনৈতিক, মানবিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এপি।
২০২২ সালের শেষ দিকে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলে অবৈধ গণভোট আয়োজন করে রাশিয়া এবং পরে সেগুলোকে সংবিধানের মাধ্যমে নিজেদের অংশ বলে ঘোষণা করে। এই অঞ্চলগুলো হলো: দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া। যদিও পুরো নিয়ন্ত্রণ এখনো তাদের হাতে নেই। তবে ২০২৫ সালের শুরুতে রাশিয়া জানিয়েছে, তারা এই চারটি অঞ্চলের পূর্ণ দখল না করা পর্যন্ত যুদ্ধ থামাবে না।
এর আগে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া। বর্তমানে ইউক্রেনের মোট ১,১৪,৪৪৩ বর্গ কিলোমিটার (৪৪,১৮৭ বর্গ মাইল) জমি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। যা ইউক্রেনের মোট জমির প্রায় ১৯ শতাংশ (ক্রিমিয়াসহ)। ২০২২ সালের আগে দখলে নেয় ৪৩,৯৬৯ বর্গ কিলোমিটার (১৬,৯৭৭ বর্গ মাইল) যা মোটের ৭.২৮ শতাংশ। ২০২২ সালের পরে দখল করে ৭০,৪৭৪ বর্গ কিলোমিটার (২৭,২১০ বর্গ মাইল) যা মোট ভূখণ্ডের ১১.৬৭ শতাংশ।
খারকিভ অঞ্চল (৪ শতাংশ)
খারকিভ অঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক দখল সীমিত এবং পুরো অঞ্চলের মাত্র চার শতাংশের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে। দখলকৃত অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে, ওলিনকোভ (৮২.৬ বর্গ কিলোমিটার), ভোভচানস্ক (১১৪.৪ বর্গ কিলোমিটার)। এছাড়া লুহানস্ক সীমান্ত বরাবর প্রায় হাজার বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল দখল করে রেখেছে। যেখানে কুপিয়ানস্ক ও লাইমান শহরগুলো রয়েছে। যা ইউক্রেনীয় সেনাদের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা স্থল। সীমান্তের জেলেনে গ্রামেও খুব ছোট এক এলাকা দখলে নিয়েছে রাশিয়া। মোট দখলকৃত এলাকা প্রায় ১,২৭১ বর্গ কিলোমিটার। যা পুরো খারকিভ অঞ্চলের তুলনায় খুব কম।
জাপোরিঝিয়া অঞ্চল (৭৩ শতাংশ)
ইউক্রেনের দক্ষিণে অবস্থিত জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলের বৃহৎ অংশ এখন রাশিয়ার দখলে। মোট ২৭,১৮৩ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চলের মধ্যে প্রায় ১৯,৭৫০ বর্গ কিলোমিটার দখল করেছে রাশিয়া। অঞ্চলটিতে থাকা এনারহোদার শহর, যেখানে ইউরোপের সবচেয়ে বড় জাপোরিঝিয়া নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট রয়েছে, সেটিও রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জাপোরিঝঝিয়া ফ্রন্ট প্রায় স্থির অবস্থায় রয়েছে।
লুহানস্ক অঞ্চল (৯৯ শতাংশ)
লুহানস্ক অঞ্চলের প্রায় পুরো অংশই রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা অংশগুলোর পরিমাণ খুবই সীমিত। খারকিভ অঞ্চলের নিকটবর্তী নোভোইহোরিভকা ও হ্রেকিভস্কা এলাকায় কিছু ছোট এলাকা এখনো ইউক্রেনের হাতে রয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর, ডোনেটস নদীর উত্তর দিকে একটি সীমিত এলাকায় কিয়েভের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। মোটের ওপর, লুহানস্ক অঞ্চলের প্রায় ৯৯ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার দখলে আছে।
খেরসন অঞ্চল (৬৯ শতাংশ)
জাপোরিঝিয়ার মতোই খেরসনেরও বেশ কয়েকটি শহর ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যদিও রাশিয়া পুরো অঞ্চলের দাবি করে আসছে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে পালটা হামলা চালিয়ে শহর এবং কিছু অংশ মুক্ত করতে সক্ষম হয় ইউক্রেন। এরপর থেকে প্রতিদিন রাশিয়ার হামলা চলছে সেখানে। মোট ২৮,৪৬১ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চলের মধ্যে প্রায় ১৮,৫১০ বর্গ কিলোমিটার এখনো রাশিয়ার দখলে রয়েছে। যা অঞ্চলটির প্রায় ৬৯ শতাংশ।
দোনেৎস্ক অঞ্চল (৭৫ শতাংশ)
ইউক্রেনের শিল্পকেন্দ্র হিসাবে পরিচিত দোনেৎস্ক অঞ্চলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়ার আক্রমণ তীব্র হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে পোকরভস্ক শহরেও রাশিয়ার আক্রমণ বেড়েছে। শহরটি অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক কেন্দ্র এবং ক্রমাগত রাশিয়ার অগ্রগতির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা স্থল হিসাবে কাজ করছে। দোনেৎস্ক শহর রাশিয়ার দখলে যাওয়ায় ক্রামাতোর্স্ক বর্তমানে অঞ্চলটির প্রশাসনিক রাজধানী হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মোট ২৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চলের মধ্যে প্রায় ১৯,৯০০ বর্গ কিলোমিটার এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যা অঞ্চলটির প্রায় ৭৫ শতাংশ।
সুমি অঞ্চল (এক শতাংশ)
ইউক্রেনের উত্তরপূর্বে অবস্থিত সুমি অঞ্চলে রাশিয়ার দখল খুবই সীমিত। রাশিয়ার সামরিক বাহিনী কুর্স্ক সীমান্ত বরাবরের মাত্র ২১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা দখল করেছে। যা সুমি অঞ্চলের মোট ২৩,৮০০ বর্গ কিলোমিটারের তুলনায় খুবই ছোট অংশ।
