ঈদ আসলে বাড়ে প্রবাসীর চিন্তা, মিথ্যে ভালো থাকার অভিনয় করে প্রবাসীরা
সাদেক রিপন, কুয়েত থেকে
২৬ আগস্ট ২০১৯, ১৩:১৬:৫৬ | অনলাইন সংস্করণ
ঈদ আসলে মন খারাপ হতে শুরু করে প্রবাসীদের। রাত পোহালেই সকাল বেলা ঘুম ভেঙে আশপাশে যখন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না তখন নিজের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসে। মনে পড়ে যায় চিরচেনা গ্রামে ঈদ উদযাপনের স্মৃতিগুলো।
ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্য মায়ের বকুনি, মা-বাবাকে সালাম করে ঈদের নামাজ আদায় করতে যাওয়া, পশু কোরবানি করা, বাড়ি বাড়ি সেমাই, পায়েস, চটপটি খাওয়া, তারপর দিনভর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা এসব স্মৃতি মনে করে চোখের কোনটা ভিজে আসে।
এ নিয়ে প্রায় আটটি ঈদ বাবা মা আত্মীয়-স্বজনদের ছেড়ে দূর প্রবাসে করতে হচ্ছে। সকাল বেলা নামাজে যাওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে কথা বলে দোয়া নিয়েছি। নামাজ শেষে রুমমেট সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ভুলে থাকার চেষ্টা করেছি নিজের কষ্টগুলো। এক একজন প্রবাসীর এক এক রকম কষ্ট। কেউ পাঁচ বছর কেউ আরো দেশে যান না।
ভিসা জটিলতা, আর্থিক সমস্যা নানা কারণে ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই দেশে যেতে পারেন না। এমন লাখো প্রবাসী রয়েছেন পৃথিবীর নানাপ্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে, যারা বছরের পর বছর দেশের স্মৃতি নিয়ে প্রবাসে ঈদ উদযাপন করছেন। প্রতিনিয়ত কষ্টে থেকেও স্বজনদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলে যাচ্ছেন।রমজানের ঈদের পরিবারের সবার জন্য নতুন জামা কাপড় নিলেও পুরাতন জামায় ঈদের জামাতে ও ঈদ পালন করেন বেশির ভাগ প্রবাসী।
কুরবানীর ঈদের যে যার সাধ্যমত পছন্দের গরু অথবা ছাগল কুরবানী করে থাকে সেই কুরবানীর টাকা জোগাড় করতে রাতদিন পরিশ্রম করেন প্রবসীরা। কিভাবে আগে টাকা পাঠানো যায় সে চিন্তায় ব্যস্ত থাকে প্রয়োজনে বন্ধু বান্ধব অথবা পরিচিতজনদের কাছ থেকে ধার নিয়ে অগ্রিম দেশে টাকা পাঠায় যাতে পরিবারের সবার মুখে হাসি থাকে। কারো মন যাতে বেজার না হয়।দেশে ফোনে মা, বাবা, প্রিয়জন যখন জানতে চায় ঈদ কেমন টেকেছে উত্তরে বলে খুব ভাল।
নানা রকমের খাবার রান্না করেছি বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বের হবো অথবা পরিচিত কেউ থাকলে দেখা করতে যাবো এমন মিথ্যা সান্তনা দেয় প্রবাসীরা মূল পরিবার প্রিয় ছাড়া খাচাবিহীন কারাগারে আনন্দহীন অথবা কাজে সময় কাটে ঈদ ও এখানে ঈদের আনন্দ মানে হল লবন ছাড়া তরকারি যেমন তেমন প্রবাসীর ঈদ।
আরাফত ও রিয়াদ নামে একাধিক প্রবাসী কথা বলতে বলতে আবেগআপ্লুত হয়ে পড়লেন। বলেন, আমরা প্রবাসীরা শুধু দিতে জানি নিতে জানি না। বছরের পর বছর এই কাজটি আমরা হাসিমুখে করে যাচ্ছি। দেশ থেকে স্বজনরা একটু হাসিমুখে কথা বললেই আমরা ভুলে যাই প্রবাসের সব কষ্ট।
কুয়েতের বাঙালি অধ্যষিত হাসাবিয়া, জাহারা,আবদালি ও কুয়েত সিটির মুরগাবে বাংলাদেশিদের আনাগোনা। ঈদের দিন আর একটু বেশিই। নামাজ শেষে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে কিছু সময় কাটালাম দেশীয় আমেজ নেয়ার জন্যই। দূর-দুরান্ত থেকে এখানে অনেক প্রবাসীরা এসেছেন একই উদ্দেশ্যে। দেশীয় পোশাকে বাংলাদেশিদের পদচারণায় মুখরিত ঈদের পরের দিন ও ঈদের পরের শুক্রবার অনেকের কাজ থাকে না আবার কারো কাজ থাকলেও ছুটি নিয়ে মনের দুঃখ হালকা করতে মিলিত হন এই স্থানগুলোতে একে অন্যে চেষ্টা করেন ভুলে থাকতে মনের গভীরের কষ্ট হালকা করতে মুখে হাসি দিয়ে বুঝাতে চান আমিও সুখে আছি।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ঈদ আসলে বাড়ে প্রবাসীর চিন্তা, মিথ্যে ভালো থাকার অভিনয় করে প্রবাসীরা
ঈদ আসলে মন খারাপ হতে শুরু করে প্রবাসীদের। রাত পোহালেই সকাল বেলা ঘুম ভেঙে আশপাশে যখন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না তখন নিজের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসে। মনে পড়ে যায় চিরচেনা গ্রামে ঈদ উদযাপনের স্মৃতিগুলো।
ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্য মায়ের বকুনি, মা-বাবাকে সালাম করে ঈদের নামাজ আদায় করতে যাওয়া, পশু কোরবানি করা, বাড়ি বাড়ি সেমাই, পায়েস, চটপটি খাওয়া, তারপর দিনভর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা এসব স্মৃতি মনে করে চোখের কোনটা ভিজে আসে।
এ নিয়ে প্রায় আটটি ঈদ বাবা মা আত্মীয়-স্বজনদের ছেড়ে দূর প্রবাসে করতে হচ্ছে। সকাল বেলা নামাজে যাওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে কথা বলে দোয়া নিয়েছি। নামাজ শেষে রুমমেট সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ভুলে থাকার চেষ্টা করেছি নিজের কষ্টগুলো। এক একজন প্রবাসীর এক এক রকম কষ্ট। কেউ পাঁচ বছর কেউ আরো দেশে যান না।
ভিসা জটিলতা, আর্থিক সমস্যা নানা কারণে ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই দেশে যেতে পারেন না। এমন লাখো প্রবাসী রয়েছেন পৃথিবীর নানাপ্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে, যারা বছরের পর বছর দেশের স্মৃতি নিয়ে প্রবাসে ঈদ উদযাপন করছেন। প্রতিনিয়ত কষ্টে থেকেও স্বজনদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলে যাচ্ছেন।রমজানের ঈদের পরিবারের সবার জন্য নতুন জামা কাপড় নিলেও পুরাতন জামায় ঈদের জামাতে ও ঈদ পালন করেন বেশির ভাগ প্রবাসী।
কুরবানীর ঈদের যে যার সাধ্যমত পছন্দের গরু অথবা ছাগল কুরবানী করে থাকে সেই কুরবানীর টাকা জোগাড় করতে রাতদিন পরিশ্রম করেন প্রবসীরা। কিভাবে আগে টাকা পাঠানো যায় সে চিন্তায় ব্যস্ত থাকে প্রয়োজনে বন্ধু বান্ধব অথবা পরিচিতজনদের কাছ থেকে ধার নিয়ে অগ্রিম দেশে টাকা পাঠায় যাতে পরিবারের সবার মুখে হাসি থাকে। কারো মন যাতে বেজার না হয়।দেশে ফোনে মা, বাবা, প্রিয়জন যখন জানতে চায় ঈদ কেমন টেকেছে উত্তরে বলে খুব ভাল।
নানা রকমের খাবার রান্না করেছি বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বের হবো অথবা পরিচিত কেউ থাকলে দেখা করতে যাবো এমন মিথ্যা সান্তনা দেয় প্রবাসীরা মূল পরিবার প্রিয় ছাড়া খাচাবিহীন কারাগারে আনন্দহীন অথবা কাজে সময় কাটে ঈদ ও এখানে ঈদের আনন্দ মানে হল লবন ছাড়া তরকারি যেমন তেমন প্রবাসীর ঈদ।
আরাফত ও রিয়াদ নামে একাধিক প্রবাসী কথা বলতে বলতে আবেগআপ্লুত হয়ে পড়লেন। বলেন, আমরা প্রবাসীরা শুধু দিতে জানি নিতে জানি না। বছরের পর বছর এই কাজটি আমরা হাসিমুখে করে যাচ্ছি। দেশ থেকে স্বজনরা একটু হাসিমুখে কথা বললেই আমরা ভুলে যাই প্রবাসের সব কষ্ট।
কুয়েতের বাঙালি অধ্যষিত হাসাবিয়া, জাহারা,আবদালি ও কুয়েত সিটির মুরগাবে বাংলাদেশিদের আনাগোনা। ঈদের দিন আর একটু বেশিই। নামাজ শেষে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে কিছু সময় কাটালাম দেশীয় আমেজ নেয়ার জন্যই। দূর-দুরান্ত থেকে এখানে অনেক প্রবাসীরা এসেছেন একই উদ্দেশ্যে। দেশীয় পোশাকে বাংলাদেশিদের পদচারণায় মুখরিত ঈদের পরের দিন ও ঈদের পরের শুক্রবার অনেকের কাজ থাকে না আবার কারো কাজ থাকলেও ছুটি নিয়ে মনের দুঃখ হালকা করতে মিলিত হন এই স্থানগুলোতে একে অন্যে চেষ্টা করেন ভুলে থাকতে মনের গভীরের কষ্ট হালকা করতে মুখে হাসি দিয়ে বুঝাতে চান আমিও সুখে আছি।