নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশি সমাজসেবী
রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:১৫ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মডারেট, (Moderate) সৃজনশীল এবং উদীয়মান সমাজসেবী তারকা যারা শুরু থেকে কাজ করছে বাংলাকে সোনার বাংলা করার জন্য, আজ আমি তাদের কথা শোনাবো। সেই ছোটবেলা থেকেই নেতৃত্ব দেয়ার প্রবণতা দেখেছি তাদের মধ্যে স্কুল এবং কলেজ জীবনে।
গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলার ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি স্বপ্নের জাল বুনেছে কিভাবে দেশের সর্বাঙ্গীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন করা যায়। চাকরীর পাশাপাশি তারা মানুষের বিপদে সবার আগে এগিয়ে আসতে দ্বিধা করে না। তার প্রমাণ আমি, কারণ যখন তারা দূরপরবাসে যোগাযোগ করে কারো বিপদে, তখনই বুঝতে বাকি থাকে না তাদের যোগাযোগের উদ্দেশ্য।
বঙ্গবন্ধুকে কেউ জোর করে রাজনীতিতে আনেননি, তিনি ছোটবেলা থেকেই দেশের স্বার্থে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এরাও ঠিক একই পথের পথচারী।
নহাটা ইউনিয়ন ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (NUDS), মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা ইউনিয়নে অবস্থিত একটি সামাজিক উন্নয়নমূলক সংগঠন; যা এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষদেরকে নিয়ে কাজ করে।
সংগঠনটির শুরু থেকেই দায়িত্ব নিয়ে যারা কাজ করছে তাদের মধ্যে রয়েছে মো. শাহজাহান মিয়া, মো. আসাদ্দুজ্জামান, মো. ফারুক হোসেন (লুলু মৃধা) এবং আরও অনেকে। ৩০ আগস্ট, ২০১৯ নহাটা ইউনিয়ন ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির আগামী দুই বছরের জন্য সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন (লুলু মৃধা) এবং মোস্তাক আহমেদ কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের উভয়ের প্রতি আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এ সংগঠনের সফলতায় সকলের অবদানের কথাও স্মরণ করছি। হাঁটি হাঁটি পা পা করে এটি নহাটা এবং মাগুরায় একটি পরিচিত নাম হয়ে উঠেছে।
সৎচিন্তা ও পরোপকারিতার মধ্যদিয়ে কাজ করে চলছে তারা সমাজের উন্নয়নে; নেগেটিভ চিন্তা পরিহার করে পজিটিভ চিন্তা নিয়ে এদের মতো করে নিশ্চয়ই বাংলাদেশে আরও অনেকে ভাবছে তাদের নিজ নিজ এলাকাকে নিয়ে।
ফারুক হোসেনকে আমি সেই ছোটবেলায় দেখেছি বহু বছর আগে, তবে তার নানা কর্মের খবরাখবর দূরপরবাস থেকেই পেয়ে থাকি। NUDS-এর যে জিনিসটা আমাকে আপ্লুত করেছে তা হলো, তাদের সংঘবদ্ধতা। তারা সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকে। তারা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার কাজে সাহায্য করে যাতে করে কেউ মাঝপথে ঝরে না পড়ে। তারা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসবের আয়োজন করে, খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরির পদ্ধতি তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
তারা নবগঙ্গা নদীর দূষণ নিয়ে আলোচনা করে এবং স্মৃতিচারণ করে অতীতের সেই প্রাণপ্রিয় নবগঙ্গাকে নিয়ে। তারা কাশফুলের বনে বাংলার রূপ দেখে, গ্রাম বাংলাকে পরিস্কার রাখার জন্য ঝাড়ু দেয় রাস্তাগুলোতে। তারা মাদক এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি করে। তারা শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে।
তারা সমাজের দুস্থ রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা দেয়, ছাত্রছাত্রীদের পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে পাঠাগারের ব্যবস্থা করে। এ সংগঠনের সবাই ব্যক্তিজীবনে কর্মজীবী তবে নেশায় এরা সমাজসেবী। যে কাজগুলো করার জন্য রীতিমতো সরকারি বেতনভুক্ত কর্মচারী নিযুক্ত রয়েছে কিন্তু তারা তা করছে না। আর সে কাজগুলোই এরা মিলেমিশে সমাধান করছে।
সমাজে নানা জটিলতা রয়েছে স্বত্বেও এরা প্রতিনিয়ত বাঁধাবিঘ্ন উপেক্ষা করে মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে চলেছে। NUDS সংগঠনের অনেককেই আমি চোখে দেখিনি তবে তাদের কর্মস্পৃহা (Spirit ) দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
হাবিবুল্লাহ, মুক্ত মেজবাহুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান, কাফি বিল্লাহ, রাকিব মিয়া, আশরাফুর রহমান আরও অনেক অপরিচিত উদীয়মান তারকা, যারা সত্যিকার তারকার মতো জ্বলে উঠছে বাংলাকে সোনার বাংলা করার জন্য। আমার বিশ্বাস এরা পারবে দেশের দায়িত্ব নিতে। কারণ এরা শুরু থেকে দেশের সঙ্গে, দেশের মানুষের সঙ্গে জড়িত, তাদের ভালোমন্দে।
সরকারি চাকরি করে হয়তো সচিব, আইজিপি, নয়তো জেনারেল হয়েছেন অনেকে, তারা নিশ্চয় তাদের দায়িত্ব ভালোভাবেই পালন করেছেন, নইলে শীর্ষ পদটি পেতেন না। তাদের কন্ট্রিবিউশন (contribution) যা হোক না কেন নিজ এলাকা বা দেশের জন্য সেটা আমার জানা নেই, তবে রাজনীতি যারা করবে তাদের রুট (root) রাজনৈতিক বাকগ্রাউন্ড (background) থেকেই হওয়া উচিত যা বিশ্বের সর্বত্রই দেখা যায়।
সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ভালোমন্দের সঙ্গে লতার মতো জড়িয়ে থাকা নেতার প্রয়োজন বাংলাদেশে। বঙ্গবন্ধুর জীবনী জানলে তেমনটিই আমরা দেখতে পাই। মডারেট এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত আদর্শ দেশপ্রেমিক মানুষের বড্ড প্রয়োজন দেশের রাজনীতিতে। যারা ধ্বংসাত্মক মনোভাব নিয়ে, অর্থ দিয়ে, মামা ভাগ্নের সম্পর্কে, ক্ষমতার জোরে দেশের রাজনীতিতে ঢুকছে তাদেরকে দিয়ে দেশের অবকাঠামোর সঠিক পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি, হবেও না।
যারা কথায় নয় কর্মে মানুষের মধ্যে বিশ্বস্ততার সেতু তৈরি করেছে, এমন সুযোগ্য নেতৃত্বই আমাদের সর্ব সময় দরকার। তাহলেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
যারা নিরলসভাবে কাজ করছে নিস্তব্ধ নীরবে তার প্রিয় জন্মভূমির জন্য ভালোবাসার হৃদয় দিয়ে, তাদেরকে আমরা দেখতে চাই;- বাংলাদেশের সংসদ ভবন, বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং গ্রাম প্রশাসন পরিচালনায়, দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে, বাংলাদেশকে সোনার বাংলা গড়ার স্বার্থে।
