লসঅ্যাঞ্জেলসের সেদিনের ঘটনা এখনও নাড়া দেয়
রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০১৯, ০৪:৪৭ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আমেরিকা এক মজার দেশ। সারা বিশ্বের এক মিলনায়তন। সবার জায়গা রয়েছে এখানে। যারা রিয়েল ড্রিমার (dreamer) তারা তাদের ড্রিম কামস ট্রু করে এখানে এসে। তবে সবার স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরিত হয় না।
অনেক বাংলাদেশি এখানে পাড়ি দিয়েছে, কেউ ভালো করছে কেউ আশানুযায়ী ভালো করতে পারেনি। তবে খারাপ কেউ নেই এখানে। মস্ত বড় একটি দেশ। তুলনা করা যেতে পারে ওয়েস্ট ইউরোপের সঙ্গে।
যদি শুধু ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যকে একটি দেশ হিসেবে চিন্তা করি তবে পৃথিবীর ধনী দেশগুলোর প্রথম সারিতে পড়বে সব দিক দিয়ে। দেশটিতে নেই এমন কিছু বলা মুশকিল। মজার ব্যাপার হলো এতবড় দেশ নানা রকমের সুবিধা-অসুবিধা থাকা স্বত্বেও তারা এ পর্যন্ত বলেনি যে, তারা আলাদা হয়ে নিজেদের মত করে সোভিয়েত ইউনিয়নের মত ভেঙ্গেচোরে ছোট ছোট দেশে পরিণত হতে চায়।
কি কারণ থাকতে পারে এর পেছনে? কারণ একটাই তাহলো ইউনাইটেড স্টেট অব আমেরিকা। সব ধর্ম এবং সব বর্ণের মানুষের বাস তারপরও আছে সবাই মিলে আছে বেশ। অথচ দেখুন আমরা বাংলাদেশি স্বত্ত্বেও মিলেমিশে থাকতে বেশির ভাগ সময়ই ব্যর্থ হতে চলেছি। বেশ আশ্চর্য হবারই কথা!
আজ আমি ক্যালিফোর্নিয়ার ওপর কিছু তথ্য তুলে ধরব সুইডিশ দৃষ্টিভঙ্গিতে। কিভাবে সুইডিশ জাতি এদেরকে দেখে এবং সঙ্গে আমার ব্যক্তিজীবনের কিছু আনপ্লেজেন্ট অভিজ্ঞতা।
সুইডিশ জাতি সংখ্যায় কম হলেও এদেরকে বিশ্বের সর্বত্রই দেখা যায়। এরা দেখতে সুন্দর, বিভিন্ন ভাষার ওপর বেশ ভালো দক্ষতা বিশেষ করে ইংরেজিতে এরা পাকা বিধায় হলিউডে বেশ জায়গা করে নিয়েছে। যেহেতু ভাষার উপর দক্ষতা তাই গানের জগতেও এরা বিশ্ব পরিচিতি লাভ করে আসছে।
এদেরকে হলিউডের আশেপাশে এবং লস অ্যাঞ্জেলসে দেখা যায়। সুইডিশ জাতি বাইরের ন্যাচারাল পরিবেশে চলাচল করতে পছন্দ করে স্বত্বেও লসঅ্যাঞ্জেলসে এরা বেশ মানিয়ে নিয়েছে। জিমে যায় ঠিকই তবে পাহাড়ের ওপর হাইকিং করতে এরা এক্সপার্ট। গত বছর লসঅ্যাঞ্জেলসে আমি ১০ দিন ছিলাম। এমন কোনো দিন ছিলো না যে আমি পাহাড়ের ওপর দিয়ে হাঁটাহাঁটি করিনি। কি যাদু রয়েছে এই দেশে যে সবাই আমেরিকা যেতে পাগল। হলিউডের স্টার? প্যাসিফিক ওশান? আমেরিকান ডলার? নাকি সব কিছুর মিশ্রণ?
হলিউডের গ্ল্যামার জীবন হয়তবা সুইডিশদের জন্য একটি বড় কারণ তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য “America, the country is for opportunities”. যাই হোক না কেন সবাই বেশ ভালো আছে এখানে।
“পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।”
১৯৯৬ সালের কথা, আমার একটি কোর্সে দুই সপ্তাহের জন্য সান ডিয়েগোতে (San Diego) যেতে হবে। আমার স্ত্রী মারিয়া মাত্রিকালীন (মেটার্নিটি) ছুটিতে আমাদের প্রথম সন্তান জনাথানকে নিয়ে বাড়িতে আছে। এদিকে আমার ছোটবোন জলি এবং তার স্বামী লস অ্যাঞ্জেলসের লং বিচে (Long Beach) থাকে। প্ল্যান করলাম পুরো পরিবার মিলে আমেরিকা যাওয়ার। যে কথা সেই কাজ। মারিয়া এবং জনাথানকে জলিদের বাসায় রেখে আমি সান ডিয়েগোতে চলে গেলাম। সপ্তাহ পার হয়ে গেলো। আমার কোর্স শেষে ফিরে এলাম লসঅ্যাঞ্জেলসে।
বেশ ভালো একটি গাড়ি ভাড়া করেছি। সবাই মিলে আনন্দের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করছি। তিনদিন লং বিচ, আর্টিসিয়া, মালিব্যু বিচ, সান্তা মনিকা এবং হলিউড ঘুরেছি। এখন প্ল্যান করলাম সানসেট বুলেভার্ড (Sunset Boulevard) পরে বেভিরলি হিলসে ঘুরব। সানসেট বুলেভার্ডে ঢুকতেই পুলিশ এসে হাজির। কোথায় যাব, কি করব নানা ধরনের প্রশ্ন কারণ ভাড়ার গাড়ি তাই গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেখে বুঝেছে আমারা এখানকার স্থানীয় নই।
মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। পুরো ঘুরে দেখা হলো না। ফিরে চলে এলাম বেভারলি হিলসে। হঠাৎ জনাথান ডায়াপারে মলত্যাগ করেছে, গাড়ির ভেতর বেশ গন্ধ হয়েছে। আমরা গাড়ি থামিয়েছি একটি বিশাল রাজকীয় বাড়ির পাশে। মারিয়া জনাথনের ডায়াপার চেঞ্জ করে তাকে রেডি করছে। আমি ডাইপারটি রাগ করে ছুড়ে ফেলেছি বাড়ির পাশে ডাস্ট বিনে। ডায়াপার ফেলছি আর সুইডিশ ভাষাই বলছি ‘বাইছা পো বেভারলি হিলস (bisa på beverly hills)”।
হঠাৎ বাড়ির মালি এসে হাজির। পুলিশে ফোন করতে মারিয়া স্প্যানিশ ভাষায় তার সঙ্গে কথা বলে ম্যানেজ করল। বাড়ির মালি তখন বলেছিল যে সে সিসি ক্যামেরায় সব দেখতে পেরেছে আমরা এখানে কি করছি। যাইহোক ‘হাগু মারি তোর বেভারলি হিলসে’ বলেছিলাম সেদিন। বয়স কম, রক্ত গরম, তারপর সানসেট বুলেভার্ডে পুলিশ ঢুকতে দেয়নি, সব মিলে রাগ বেশ চড়া ছিল সেদিন তাই রাগের মাথায় কিছু করলে যা হয়। ভাগ্য ভালো ছিল সেদিন মারিয়া স্প্যানিশ ভাষায় সব ম্যানেজ করেছিল নইলে ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলি বিলসের হাজতের ভাত হয়তো খেতে লাগত কিছুদিন। পরে বাড়ির মালি পরিচয়ে জানিয়েছিল “ডায়াপার ছুড়ে ফেলেছ হলিউডের সুপার স্টার উইলিয়াম স্মিথের বাগান বাড়িতে”! শুনতেই গা শিউরে উঠেছিল এই কারণে যে তখনকার বিশ্বখ্যাত উদীয়মান তারকার বাড়ি দেখতে বেভারলি হিলসে আসা আর কি কাজটি করলাম এসে এবং ধরা খেলাম! সেদিনের সেই ঘটনা স্মৃতি হয়ে আছে যা আজও ভুলিনি।
