Logo
Logo
×

পরবাস

ভন্ডদের ভন্ডামি থেকে দূরে থাকতে হবে

Icon

রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২০, ১১:৪৭ এএম

ভন্ডদের ভন্ডামি থেকে দূরে থাকতে হবে

যা কিছু রটে তার কিছু ঘটে। রটানোর জন্য নানা ধরনের মাধ্যম রয়েছে যেমন বিজ্ঞাপন, লেখা, মুখে প্রচার, স্যোশাল মিডিয়া, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টেলিফোনের নানা ধরনের অ্যাপ্লিকেশন তাদের মধ্য অন্যতম। গত কয়েকদিন আগে লিখেছি কৌতুহলের ওপর। কৌতুহল থাকা ভালো তবে তার সীমা থাকা উচিত।

কৌতুহলের ছলে উল্টা পাল্টা বলা, গুজব রটানো বা ভন্ডামি করা অপরাধ। বিশেষ করে ধর্মের ওপর ভন্ডামি করা গুরুতর অপরাধ। কারণ প্রতিটি ধর্মে নিজস্ব দলিল রয়েছে যেমন ইসলাম ধর্মে আমাদের কোরআন, খ্রীষ্ট ধর্মে বাইবেল, হিন্দু ধর্মে বেদ ইত্যাদি।

বর্তমানে অনেকে ইসলাম ধর্মের নামে ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে সত্য, মিথ্যা, জানা এবং অজানা তথ্য ঢুকিয়ে দিনে দুপুরে তা প্রচার করছে। আমরা দিব্যি তা শুনছি, জানছি এবং অন্যকে জানাচ্ছি। এখন প্রশ্ন আমরা কি শুনছি আর বলছি তা কি সবসময় খেয়াল করি? কখনও করি কখনও করিনা। যার কারণে গুজবের আবির্ভাব ঘটছে।

এখন বেশি পরিমানে ভন্ডামি শুরু হয়েছে আগের তুলনায়। কি কারনে এবং কেন এর প্রচলন বেশি হচ্ছে বর্তমানে তাকি আমরা জানতে চেষ্টা করছি? আমরা জানি সাপ্লাই এবং ডিমান্ড বলে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত রয়েছে অর্থনীতিতে।

সেক্ষেত্রে কি ধরতে পারি সবাই গুজব বা ভন্ডামি শুনতে পছন্দ করে! কারণ চাহিদা না থাকলে কেউ ভন্ডামি বা গুজব শুনবে বা জানবে বলে বিশ্বাস করা কঠিন। ভন্ড শব্দের আভিধানিক অর্থ ভানকারী বা ধূর্ত ব্যক্তি। আর ভন্ডামি শব্দের আভিধানিক অর্থ প্রতারণা বা চাতুরী করা। আরবীতে ভন্ডের আভিধানিক অর্থ মুনাফিক। ইসলাম ধর্মে আল কোরআনের শতাধিক আয়াতে মুনাফিকদের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

মুসলমানদের জন্য তাদের শত্রুদের তুলনায় মুনাফিকদেরকে অধিক বিপজ্জনক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। চারটি স্বভাব যার মধ্যে বিদ্যমান তাকে মুনাফিক বলা হয়ে হয়। যার মধ্যে এর কোনো একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তাকে মুনাফিক বলা হয়। ইসলামের ব্যাখ্যায় মুনাফিক হলো: ১) আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে। ২) কথা বললে মিথ্যা বলে। ৩) অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে এবং ৪) বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল গালি দেয়। আল্লাহ তাআলা সুরা বাকারার ৮ থেকে ২০ পর্যন্ত মোট ১৩টি আয়াত মুনাফিকদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে নাজিল করেছেন।

এ ছাড়াও বিভিন্ন সুরায় আরও ৩৮টি আয়াতে মুনাফিকদের সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। মুনাফিক শুধু মৌখিকভাবে ঈমানের স্বীকৃতি দান করে, কিন্তু অন্তরে মোটেও বিশ্বাস করে না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আর মানুষের মধ্যে এমন কতিপয় লোক আছে, যারা বলে আমরা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান এনেছি, অথচ তারা মুমিন নয়। (সুরা বাকারা, আয়াত : ৮)। এখন মূল বিষয়ে আসি। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমান ওয়াজ মাহফিলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং জনস্রোতের ঢেউ বয়ে চলেছে।

এ ধরণের ওয়াজ মাহফিল অতীতকাল থেকে হয়ে আসছে। প্রযুক্তি এবং সুশিক্ষার যুগে যদি কেউ ভন্ডামির পরিচয় দেয় তার বক্তব্যে তাহলে কি তা মেনে নেয়া ঠিক হবে? যদি আল্লাহ এবং তার নির্দেশ সম্পর্কে সত্যি সত্যিই আমরা জানতে চাই, তবে কেন একটু সময় নিয়ে নিজ জ্ঞানে সে দলিল সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করছিনা। দলিল অনুবাদ করার জন্য আমাদের নিজেদের যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে। ভন্ডদের ভন্ডামি যা সত্যিকার দলিলের সঙ্গে কোনো রকম মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। যার সত্যিকার কোনো দলিল নাই,তা শুনে সময় নষ্ট করা এবং পুণ্যের পরিবর্তে পাপের বোঝা ভারি করা কি ঠিক হচ্ছে? পৃথিবীতে আমাদের জন্মের কারণ স্রষ্টার এবাদত করা। তার মানে এই নয় যে মিথ্যা এবং সত্যের মিশ্রণে গুজব রটানো বা ভন্ডামি করা।

পৃথিবী মানব কল্যাণে ভালো কাজ করা স্রষ্ঠার এবাদতের সামিল। কোরআনের ১১৪ টি সুরা পড়ে এবং তার মানে বুঝলে এটাই বোঝা যাবে। নতুন প্রজন্মদের প্রতি আমার অনুরোধ শিক্ষার সন্ধানে ভন্ডের ভন্ডামি শুনে সময় নষ্ট না করে বরং ধর্ম নিয়ে নিজে চর্চা করাই হবে এর বেষ্ট প্রাক্টিস। সত্যের সন্ধানে বিশ্বের সব দেশ ঘুরে সত্যকে যাচাই বাছাই করা দরকার। দলিল ছাড়া কোন কিছুতে সময় ব্যয় না করা এবং সর্বোপরি ভালো করে সন্ধান করে সরল এবং সঠিক পথে চলা হোক আমাদের উদ্দেশ্য।

ভন্ডদের ভন্ডামি থেকে দূরে থাকা হোক আমাদের ২০২০ সালের নতুন অঙ্গীকার। স্রষ্ঠার কাছে প্রার্থনা হোক আমরা যেন ভন্ডদের থেকে দূরে থাকতে পারি।

বর্তমানে আমাদের ভালো মন্দ যাচাই বাছাই করার মত তৌফিক এবং সুযোগ হয়েছে তাই আমি মনে করি সত্যকে জয় করার এখনই এক চমৎকার সময়। সুশিক্ষা, সুচিন্তা এবং সহজ ও সরল পথের মধ্য দিয়ে আমরা যেন চলতে পারি সেই কামনা সবার জন্য রইল। আমরা যেন সেই পথে চলি যে পথে ভালো মানুষের সন্ধান পাওয়া যাবে। সেই পথ নয় যে পথে দুষ্ট মানুষে ভরা।

ভন্ড

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম