|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আজ ১০ মে, বিশ্ব মা দিবস। কিন্তু আমাদের কাছে মা শুধু বিশেষ দিনে জন্য নন। প্রতি মুহুর্তের অক্সিজেন হলেন মা। আমরা যারা প্রবাসে আছি, তাদের তো মায়ের জন্য প্রাণ আরও বেশি কাঁদে।
মা এমন একজন মানুষ যাকে ছাড়া মনে কোন প্রশান্তি আসে না। জীবনের শুরু থেকে শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তার পাশে থাকা চাই। সেই মা যদি কোনক্রমে পাশে না থাকে তখন কেমন লাগে? এ আর বলার অবকাশ নেই।
সব কিছুই মনে হয় ফাঁকা ফাঁকা। হৃদয়, জগৎ সংসার, পার্থিব সব কিছু হয়ে যায় অন্ধকার। সেই মাকে ছাড়া প্রায় ১৬ বছর কেটে গেল দেশ-বিদেশে।
শুধু তাই নয়, মহাখুশির দিন, মহাআনন্দের দিন পবিত্র ঈদসহ সব আয়োজন এখন তাকে ছাড়া। জীবন থেকে প্রায় দেড় যুগ অতিবাহিত হলো আমার জন্মদাত্রী সেই মায়ের সানিধ্যবিহীন।
প্রতিটি আনন্দক্ষণে ভেসে ওঠে আমার মায়ের প্রতিচ্ছবি। বিষণ্নতায় আমার মন বোবা কান্না করে নিভৃতে। কিন্তু প্রকৃতির কি নির্মম পরিহাস জন্মালে মৃত্যুবরণ করতে হয়। তাইতো আমাকে ছেড়ে মা না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আর কখনো আসবেন না, বলবেন না খোকা আছিস কেমন?
কিছু সুখ যেনো সুখই থেকে যায়। যা কাউকে স্পর্শ করে না। শুধু স্মৃতির পরতে পরতে দুঃখগুলো ভেসে থাকে। এ পৃথিবীতে মায়ের স্নেহ-মমতা ছাড়া বেড়ে ওঠা কতো মর্মপীড়ার বিষয় তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন।
যেখানে মায়ের আদর নেই, সেখানে হাহাকার ছাড়া আর কী আছে। যন্ত্রণার এক সাগর অতিক্রম করছি। তাইতো কিছু আনন্দের মুহূর্ত আমাকে দারুণভাবে পীড়া দেয়। যেন এই সুখ আমার জন্য নয়। আমার কিশোরকালে মায়ের অকালমৃত্যু ঘটে।
লিভার সিরোসিস নামক মারাত্মক ব্যধি আমার প্রিয় মাকে না ফেরার দেশে নিয়ে যায়। আমাকে ছেড়ে চলে যান অচিনপুরে, আমাকে একা করে। মায়ের অপূর্ণতা আমাকে এখনও কাঁদায়। জননীর ভালোবাসা ত্রিভুবনে আর কারো কাছে মিলবে না।
কারণ মায়ের ভালোবাসা কারো কাছ থেকে পেতে স্বার্থের বলি হতে হয়। তাই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা একমাত্র মা ছাড়া এই দুনিয়ায় পাওয়া যায় না। স্বার্থের শেষ চূড়ায় থাকে গভীর ভালোবাসা। কিন্তু মায়ের বেলায় থাকে সীমাহীন নিঃস্বার্থ। জন্মের পর বেশ কয়েক বছর মাকে ডাকতে পেরেছি বটে, কিন্তু সে ডাকে মায়ের প্রতি যতটুকু ভালোবাসা থাকা দরকার সেটা হয়ে ওঠেনি শুধু বয়স কম থাকার কারণে।
আর যখন বয়স বাড়লো, বুঝতে শিখলাম ঠিক তখন মৃত্যুদূত এসে হাজির হল আমার প্রিয় মায়ের কাছে। মাকে আর তৃপ্তি ভরে ডাকার সৌভাগ্য আমার হয়নি। এটি ভাগ্য নাকি মায়ের ভালোবাসার সাথে জন্ম-জন্মান্তরের দেয়াল। যা ভেদ করে সেই ভালোবাসাকে অনন্তকালেও পাওয়া সম্ভব নয়। স্বার্থহীন শুভাকাঙ্ক্ষী অন্ধকার জগৎ থেকে আলোতে এনেছেন সেই প্রিয় মাকে স্রষ্টা কেন দূরে নিয়ে গেলেন?
প্রবাসে এমনিতেই একা সময় কাটাতে হয়। বিষণ্নতার ছোঁয়া প্রতিটি মুহূর্তে হৃদয়ে আঘাত হানে নীরবে। কাউকে বোঝাবার মতো ভাষা নেই। একি এক যন্ত্রণা মনে, হৃৎপিণ্ডে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরে। তবু নীরবে সহ্য করতে হয়।
সৃষ্টি কর্তার কাছে বড়ই অসহায় আমরা সবাই। তবু তিনি আমার সৃষ্টিকর্তা, পরম করুণাময়। একটি সংসারের অন্যতম নিয়ামক হলো মাতা-পিতা। কিন্তু এর মধ্যে একজন যদি না থাকেন, তবে সেই সংসার মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়ে। আর ঝরেপড়া মানুষটি যদি হয় প্রিয় মা, তবে ওই সংসার শুধু ছন্দই হারায় না, হয়ে উঠে নিরানন্দের।
এমনিতেই প্রবাসে থাকার কষ্ট, তার ওপর আবার মা নেই। নিজেকে খুব এতিম এতিম লাগে। প্রবাস মানেই একাকী জীবন। সব থেকেও যেন কেউ নেই।
যার মা নেই এ পৃথিবীতে কেবল তিনিই জানেন মা হারানো ব্যথা। মায়ের কথা মনে হলে হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে বোবা কান্নায়। রাতে আকাশের তারার মধ্যে খুঁজে ফিরি মাকে। একাকীত্ব গ্রাস করে আমাকে, তখন ভীষণ কান্না পায়। আমি কাঁদি।
লেখক: ইতালি প্রবাসী সংবাদকর্মী।
