ব্রিফিংয়ে বিমানবাহিনী প্রধান
মৃত্যুর সংখ্যা লুকানোর কিছু নেই
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘অনেক গুজব, এতে কান দেবেন না। প্রতিদিন হতাহতের যে আপডেট আসছে, তা সঙ্গে সঙ্গে আইএসপিআরের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছি। এখানে লুকানোর বা গোপন করার কিছু নেই। কার কাছ থেকে লুকাব? আপনারা আমাদের দেশের মানুষ। আমরাও এই দেশের মানুষ। দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। আমরা চেষ্টা করছি সেটাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে’, মঙ্গলবার বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি বীর-উত্তম একে খন্দকার প্যারেড গ্রাউন্ডে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামের ফিউনারেল প্যারেড শেষে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন। আইএসপিআরের এক ভিডিও বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিমানবাহিনী প্রধান বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) রাষ্ট্রীয় শোক। গতকাল (সোমবার) দুপুর ১টার দিকে আমাদের একটি জঙ্গিবিমান প্রশিক্ষণের সময় বিধ্বস্ত হয়েছে রানওয়ের খুব কাছে মাইলস্টোন স্কুল ভবনে। এতে আমরা অনেক কোমলমতি ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকসহ অনেককে হারিয়েছি। আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আহত অনেকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আমি সিএমএইচে আহতদের দেখে এসেছি, বার্ন ইউনিটেও যাব। সবাই চিকিৎসাধীন এবং আহতদের আমরা যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধার করে হেলিকপ্টারে হাসপাতালে স্থানান্তর করেছি। ফায়ার ব্রিগেডসহ অন্যদের রেসপন্স ছিল ভালো।’
তিনি বলেন, ‘পাইলট আপনারা জানেন, অনেক মিডিয়ায় অলরেডি এসেছে যে, আপনারা দেখেছেন পাইলট যখন বিমানটা তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল, সে তার সর্বোপরি চেষ্টা করেছে একটি খালি জায়গায়, বিশেষ করে ওই মাঠটাই পেয়েছিল, যেখানে সে নামানোর চেষ্টা করেছিল; কিন্তু তারপরও তার শেষ চেষ্টা সফল হয়নি বলব। কারণ, বিমানটা আছড়ে পড়েছিল ভবনের ওপরে। বিমানটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা বা দিকনির্দেশনায় যাওয়ার জন্য যে মূল্যবান সময় দিয়েছে, এজন্য তার যে ইজেকশন বলি আমরা, বিমান থেকে বের হওয়ার যে পদ্ধতি, সেটা বিলম্বিত হয়ে যায়। এর ফলে সে তার নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে। সে আজ আমাদের মাঝে নেই। এজন্য একটু আগে আমরা তার ফিউনারেল প্যারেড বা জানাজা করলাম। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
বিমানবাহিনী প্রধান বলেন, ‘আপনারা অলরেডি দেখেছেন গতকাল (সোমবার) থেকেই দেশের এই বিপদের সময় আমাদের প্রধান উপদেষ্টা, অন্যান্য উপদেষ্টা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, চিকিৎসক, ফায়ার সার্ভিস, স্বেচ্ছাসেবী, বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থা, সাধারণ ছাত্র-শিক্ষক ও সাধারণ জনগণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। অবশ্যই সেনাবাহিনী এবং বিমানবাহিনী প্রথমদিকে গিয়েছিল এবং তাদের বিশেষ উদ্ধারকারী যেসব যন্ত্রপাতি আছে, বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে তারা ফার্স্ট রেসপন্ডার হিসাবে আহত এবং নিহতদেরও নিয়ে এসেছিল ওখান থেকে।
আমি আপনাদের জানাতে চাই, প্রধান উপদেষ্টা প্রথমেই বলেছেন আহতদের সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে হবে। সব ধরনের চিকিৎসাব্যবস্থা তাদের করা হবে। সরকারের পাশাপাশি বিমানবাহিনীও সব সময় হতাহতের পাশে থাকবে এবং থাকছে। আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে যা যা করণীয়, আমরা সবকিছু করব। ইতোমধ্যে গতকাল (সোমবার) আমরা একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত টিম গঠন করে দিয়েছি। তারা শিগ্গিরই তদন্ত করে বের করবে যে কী ঘটনা ঘটেছিল এবং এর ভিত্তিতে আমরা ভবিষ্যতে যদি কোনো কিছু ভুলত্রুটি থাকে, তার অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
তিনি বলেন, দেশবাসীকে একটা বিশেষ অনুরোধ করতে চাই। সেটা খুব জরুরি। একটি শক্তিশালী বিমানবাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য অপরিহার্য। দয়া করে গুজব ছড়িয়ে দেশের সার্বভৌমত্বের এই স্তম্ভকে দুর্বল করে দেবেন না। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আপনাদের সবার মতো আমারও হৃদয় ভেঙে গেছে। আপনারা জানেন, আমি মাত্র সফরে বেরিয়েছিলাম। এটা জরুরি সফর ছিল। আমি ওই বিমানবন্দর থেকেই সরাসরি ফিরে এসেছি আজ (মঙ্গলবার) সকালে। যখন সংবাদ পেয়েছি, বাক্রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। সারা বিশ্বে বিমানবাহিনীতে বা বিমান দুর্ঘটনা হতেই পারে। কিছুদিন আগেও আমাদের প্রতিবেশী দেশে এ ধরনের একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা খুব সচরাচর হয় না। আহতদের সুচিকিৎসাই এখন সবচেয়ে জরুরি। আমি আপনাদের সবারই সহযোগিতা কামনা করছি।’
