প্রবাসী ফুটবলারদের নিয়ে বাফুফেতে বসেছে হাট—ছবি: বাফুফে
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আমি ঠিক জানি না বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতির মাথাব্যথা আজ সারবে কিনা, তবে এটুকু বলতে পারি—সম্ভাবনা আছে। কারণ যেভাবে মৃত ফুটবলকে জাগাতে উনি উঠেপড়ে লেগেছেন, তাতে সম্ভাবনা পুরোপুরি না হলেও ৯০ শতাংশ সফল হবেন। এতে তার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা স্বস্তির প্রকাশ ঘটবে বৈকি।
আজ থেকে আগামী ৩০ জুন চলবে ‘বিএফএফ নেক্সট গ্লোবাল স্টার’-এর ট্রায়াল উৎসব। ১৫ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে রাখা হয়েছে বয়সের সীমাবদ্ধতা। এ ট্রায়ালে অংশ নিচ্ছেন ১৪ দেশ থেকে উড়ে আসা ৫২ ফুটবলার। এর মধ্যে ইংল্যান্ড থেকে এসেছেন ২০ জন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৪, সুইডেন থেকে পাঁচ, কানাডা থেকে এসেছেন দুজন। বাকিরা অন্যান্য দেশ থেকে এসেছেন।

বাফুফের ট্রায়ালে আসা ফুটবলারের মানদণ্ড বিচার করছে দেশের সেরা কোচিং প্যানেল। এ মুহূর্তে পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত তারা। ফুটবলারদের মানদণ্ড বিচার করা কোচিং প্যানেল কমিটির প্রধান হচ্ছেন সাইফুল বারী টিটু। তার তত্ত্বাবধানেই নির্বাচন করা হচ্ছে খেলোয়াড়। ফুটবলারদের পারফরম্যান্স পর্যবেক্ষণে সাইফুল বারী টিটু ছাড়াও মাঠে আছেন জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু, আলফাজ আহমেদ, মারুফুল হক, সাইদ হাসান কানন, গোলাম রব্বানী ছোটন, মাহবুব হোসেন রক্সি এবং জাতীয় দলের কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা। তবে কোচ থাকছেন পর্যবেক্ষকের ভূমিকায়।
গত বুধবার (২৫ জুন) রাওয়া ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বাফুফের সহসভাপতি ও ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী এ কথা জানান। আমরা ফুটবলকে নানাভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সবাই চেষ্টা করছি। এমনকি ট্রায়ালে আসা ফুটবলারদের চুক্তি করার সুযোগও পাবে পেশাদার লিগের ক্লাবগুলো বলেও জানান তিনি।
আজ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রবাসী ফুটবলদের বাজার বসেছে ঢাকা স্টেডিয়ামে। এ পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ও কাজই হচ্ছে— অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-২৩ এবং জাতীয় দল শক্তিশালী গঠন করা। কিন্তু পারবেন কি বাফুফে সভাপতি?
এদিকে কাজী সালাউদ্দিন সরে যাওয়ার পর ফুটবলের হাল ধরেন তাবিথ আউয়াল। জেগেছে ফুটবল। প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বাফুফের সভাপতিসহ কর্মকর্তারা। বিশ্ব ফুটবলমঞ্চে দেশকে দাঁড় করানো যেন তাদের পণ—এমন চিন্তাভাবনাই যেন তাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
বাফুফের সভাপতির দায়িত্ব নিয়েই তাবিথ আউয়াল ফুটবলে আলোড়ন সৃষ্টি করে চলেছেন ইউরোপ খেলা ইংল্যান্ড প্রবাসী হামজা দেওয়ান চৌধুরীকে বাংলাদেশ জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করে। এরপর একে একে দলে ভিড়িয়েছেন ফাহামেদুল, শমিত সোমকে। দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন কিউবা মিচেল।

কিন্তু এই প্রবাসী কয়েকজনকে দলে অন্তর্ভুক্ত করে শক্তি বৃদ্ধি করে ভারত, ভুটান ও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ খেললেও মাঠের পারফরম্যান্সে যেন ভাটা পড়েছে। দল শক্তিশালী হলেও মাঠের পারফরম্যান্সের চিত্র গত ১৫ বছরের আগের মতোই। যে স্বপ্ন নিয়ে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন, ওই তিন ম্যাচের পর দুশ্চিন্তা তার মাথায় আরও জেঁকে বসেছে। আর এই মাথাব্যথার যন্ত্রণায় তিনি ছুটে বেড়াচ্ছেন দেশ-বিদেশে। কিন্তু থেমে যাননি; ডান-বামে না তাকিয়ে এগিয়ে চলেছেন দুরন্তগতিতে।
শুধু খেলার মধ্য দিয়েই ছুটে চলেছেন তিনি। সভাপতির পরিকল্পনায় শুধু খেলা। তার এ পরিকল্পনায় এবার—'বিএফএফ নেক্সট গ্লোবাল স্টার'। প্রবাসী ফুটবলারদের নিয়ে বসিয়েছেন হাট। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন নতুনরূপে দল গোছাতে। তাই সেখান থেকে বাছাই করে পুরো ফুটবলের ধাপ বদলে দেবেন তিনি, যেই পণ সেই কাজ।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রবাসী ফুটবলদের বাজার বসেছে ঢাকা স্টেডিয়ামে। এ পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ও কাজই হচ্ছে— অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-২৩ এবং জাতীয় দল শক্তিশালী গঠন করা। কিন্তু পারবেন কি বাফুফে সভাপতি?

জাতীয় দল শক্তিশালী হলেও ফল যে আগের মতোই এসেছে; আমরা যখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি, তখন কেউ কেউ যেন টেনে ধরার পণ করে বসে আছেন। কারণ আমাদের ধর্মই যে কাউকে এগিয়ে যেতে দিতে নেই। কোন মনীষী দেশ স্বাধীনের পরই এ দেশের মানুষের চরিত্র বুঝে জাতীয় খেলা ফুটবল না করে কাবাডি করেছিলেন, তাকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারি না। কারণ বাঙালির চরিত্র বোঝার তার যে মাহাত্ম্য, তা সত্যি সত্যি প্রমাণ করে দিয়েছে কাবাডি। আর সে কারণে এই কাবাডিকে করা হয়েছে আমাদের জাতীয় খেলা। আর আপনি যত দ্রুতই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন না কেন, আপনার অক্টোপাসে জড়িয়ে থাকা দোসর আপনাকে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামানোর চেষ্টায় রত থাকবে। এখানেই প্রশ্ন? যে খেলা শুরু করেছেন সভাপতি, সেটি যে আরও কঠিন। খেলাটা যে ফুটবল; সমস্যা তো এখানেই।
- ফিনিশারের অভাবে আমরা বারবার ম্যাচ জিততে ব্যর্থ হচ্ছি, সেই ফিনিশারের অভাব আজ দূর হতে পারে
তারপরও আমরা আশাবাদী—আজকের প্রবাসী ফুটবলারদের বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাঁতে পারব। বিশেষ করে, যে ফিনিশারের অভাবে আমরা বারবার ম্যাচ জিততে ব্যর্থ হচ্ছি, সেই ফিনিশারের অভাব আজ দূর হবে। আমাদের সর্বোচ্চ লক্ষ্য থাকবে বেশ কয়েকজন স্ট্রাইকারকে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করা। এটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েই আমাদের জাতীয় দলকে শক্তিশালী করাই হবে আজকের বড় এজেন্ডা।

