Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

উপদেষ্টা পরিষদে চূড়ান্ত

চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর

প্রত্যাখ্যান ৩৫ প্রত্যাশীদের

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর

সরকারি চাকরিতে সরাসরি প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে ৩২ বছর নির্ধারণ করেছে সরকার। একই সঙ্গে একজন চাকরিপ্রার্থী তিনবারের বেশি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না-এমন বিধি সংযোজন করা হচ্ছে।

তবে প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগগুলো ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষেত্রে স্ব স্ব নিয়োগ বিধিমালা বহাল থাকবে। অর্থাৎ ওইসব বাহিনীর বর্তমান নিয়োগ বিধির আলোকে নিয়োগ কার্যক্রম চলবে। বৃহস্পতিবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উল্লিখিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তবে সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ এবং বিসিএস পরীক্ষায় ন্যূনতম আটবার অংশ নেওয়ার সুযোগ রেখে ৩ দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির আলটিমেটাম দিয়েছে প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা। অন্যথায় আবারও আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ ঘোষণা দেন।

এদিকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকসংক্রান্ত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, সরকারি চাকরিতে সিভিল সার্ভিসে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিসিএস-এর মতো পরীক্ষায় কেউ তিনবারের বেশি অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। আর বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নিজস্ব নিয়ম মেনে নিয়োগ দেবে। বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয়েছে। এখন এটি প্রক্রিয়ার ব্যাপার।

নতুন করে রুলস হবে। সেখানে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করলে গেজেট জারি হবে। সবমিলিয়ে তিন থেকে চারদিন সময় লাগবে। তবে এ সিদ্ধান্ত আর পরিবর্তন করা হবে না। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যানসিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলো সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) সব ক্যাডারের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারিত হবে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের আওতাবহির্ভূত সব সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারিত হবে। স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ক্ষেত্রে স্ব স্ব নিয়োগ বিধিমালা প্রয়োজনীয় (সংশোধন) অভিযোজন করে এই বিধি সংযোজন করবে।

তবে প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগগুলো ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষেত্রে স্ব স্ব নিয়োগ বিধিমালা বহাল থাকবে। অর্থাৎ ওইসব বাহিনীর বর্তমান নিয়োগবিধির আলোকে নিয়োগ কার্যক্রম চলবে। কোনো বাহিনীর কমিশন্ড অফিসার পদে ৩২ বছর বয়সি প্রার্থীকে ঢুকানো হয় না। অতএব তাদের ক্ষেত্রে আগের বয়সসীমা থাকছে। এছাড়া সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৫৯-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা, ২০১৪ পুনর্গঠন করবে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস)পরীক্ষায় একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ তিনবার অবতীর্ণ হতে পারবে-এমন বিধান সংযোজন করা হবে।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন চলে আসছে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণের দাবিতে অবস্থান নেয় চাকরিপ্রত্যাশীরা। এ সময় তারা চাকরিতে প্রবেশের বিষয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলার দাবি তোলেন। এক পর্যায়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শেষ পর্যন্ত ওইদিনই প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে সাবেক সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে প্রধান করে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

কমিটির কাজ ছিল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা। কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা মেয়েদের ৩৭ বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ৩৫ বছর নির্ধারণের জন্য সুপারিশ পেশ করেন। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ নির্ধারণের জন্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।

কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা কত তা উল্লেখ না থাকায় প্রস্তাবটি ফেরত পাঠানো হয়। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর চূড়ান্ত করা হয়। এর আগে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স প্রাথমিকভাবে দুই বছরের জন্য ৩৫ বছর করে পরবর্তী বছর থেকে স্থায়ীভাবে ৩৩ বছর নির্ধারণের প্রস্তাব করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

এছাড়া অবসরের সময়সীমা ৬২ করার প্রস্তাব জানায় দলটি। সেই সঙ্গে সরকারি চাকরিপ্রার্থীরা যেন বিনামূল্যে আবেদন করতে পারে সে দাবিও জানিয়েছে জামায়াত। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়স ৬৫ বছর করার দাবি জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয়।

সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এ চিঠিটি ১৮ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেন।

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা : বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বয়সসীমা ৩৫-প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক শরিফুল হাসান শুভ বলেন, আমরা সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩৫ করার জন্য দীর্ঘ ১২ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছি। ৩০ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত যে সুপারিশ কমিটি করেছিল, সেখানে আমাদের দাবির প্রতিফলন ঘটেছিল। কিন্তু সরকার জানিয়েছে, বয়সসীমা ৩২ বছর করা হয়েছে।

এতে আমাদের দাবি-দাওয়ার প্রতিফলন ঘটেনি। তিনি বলেন, আমরা সরকারের এ সিদ্ধান্তকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি। আশা করি, দ্রুত সরকারের বোধোদয় হবে এবং চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করবে। নতুন কর্মসূচির বিষয়ে শুভ বলেন, আমরা শিগগির আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেব।

এদিকে ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটির সুপারিশ আমলে না নিয়ে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩২ করার প্রতিবাদ’ শিরোনামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সাংবাদিক সমিতির কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা তিন দিনের আলটিমেটাম ছুড়ে দেন। এ সময় তারা বর্তমান প্রশাসনকে এলিট শ্রেণির প্রতিনিধি আখ্যা দেন।

চাকরি বয়স

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম