স্বজন সমাবেশ
গৌরীপুর স্বজন সমাবেশ ঐতিহ্যের একুশ বছর পূর্তি উৎসব
মো. রইছ উদ্দিন
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৫৫ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘শুভ সুন্দর কল্যাণকর কাজে স্বজন’-এ স্লোগানকে আঁকড়ে ধরে একুশ পেরিয়ে ২২তম বর্ষে পা রাখল গৌরীপুর স্বজন সমাবেশ। দেশের শীর্ষ ও পাঠকপ্রিয় জাতীয় দৈনিক ‘যুগান্তর’-এর পাঠক সংগঠন গৌরীপুর যুগান্তর স্বজন সমাবেশ। এ শাখার যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। পাঠক সংগঠন হিসাবে আত্মপ্রকাশ করা এ সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত হয় বহুমাত্রিক কার্যক্রম।
শুরু হয় স্বেচ্ছাশ্রমে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে খাল পরিষ্কার-খনন এবং রাস্তা মেরামত দিয়ে। দুর্গত মানুষের জন্য স্বজনরা ছুটে চলে ত্রাণসামগ্রী ও চিকিৎসাসেবা প্রদানের কার্যক্রম নিয়ে। দুস্থ, অসহায়, প্রতিবন্ধী, সন্তান ও স্বামীহারা মায়েদের মধ্যে ঈদ সামগ্রী বিতরণসহ বহুমাত্রিক ইতিবাচক কাজের ঠিকানা হয়ে উঠেছে গৌরীপুর স্বজন সমাবেশ। সঙ্গে আছে এক ঝাঁক তরুণ স্বজন। শিক্ষা ও সহপাঠ্যক্রমেও এগিয়ে যাচ্ছেন স্বজনরা। মাদক আর বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়মিত প্রচারাভিযান।
এ বছর নতুনভাবে শুরু হয়েছে ‘শুদ্ধ শব্দ উৎসব।’ দেশের নানাপ্রান্তের ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণে গৌরীপুরে মিনিম্যারাথন ১২ বছর সুনামের সঙ্গে সফল করেছে স্বজনরা। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে রাস্তায় বিপদচিহ্ন, গতিরোধক চিহ্নিতকরণ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করছে। ক্রীড়া, সাহিত্য-সংস্কৃতি, মানবিক ও সামাজিক নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত সময় অতিক্রম করেছে এ শাখার স্বজনরা।
এসব কার্যক্রমের জন্য ২০০৯ সালে দেশের সেরা ১০টি পাঠক সংগঠনের মধ্যে সেরা-এক নির্বাচিত হয় গৌরীপুর। এরপর অদ্যাবধি শ্রেষ্ঠত্বের সেরা আসনটি ধরে রাখতে স্বজনরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তার প্রতিশ্রুতিতে প্রতিবছর অর্জন করছে শ্রেষ্ঠত্বের সেরা পদকও। সারথী সংগঠন হিসাবে গৌরীপুরের রক্তদান ফাউন্ডেশন, গণপাঠাগার, লেখক সংঘ, কবিতা পরিষদ, উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ, মফস্বল সাংবাদিক ফোরামসহ একাধিক সংগঠন স্বজন সমাবেশকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছে।
২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত হয় দৈনিক যুগান্তর প্রতিনিধিদের জাতীয় সম্মেলন। সেই সম্মেলনে যমুনা গ্রুপের স্বপ্নদ্রষ্টা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম গৌরীপুর প্রতিনিধির মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন, গৌরীপুর তো ভালো করছে, এগিয়ে যাও, তোমরা পারবে। সেই আর্শীবাদ নিয়েই শুরু হয় স্বজনের বিরামহীন এ শাখার পথচলা। লাখো মানুষের কর্মসংস্থান, কোটি মানুষকে স্বপ্নের সিঁড়িতে হাঁটার সুযোগ করে দেওয়া সেই মানুষটির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
শুরুর গল্পটা ছিল মাত্র ‘তেরো।’ অনেকেই এ সংখ্যাটিকে অশুভ সংখ্যা ধারণা করে থাকেন। তাই কথায় কথায় বলেন আনলাকি থার্টিন! তবে এ তেরো সংখ্যাটিকে স্বজনরা নিজেদের সৌভাগ্যের ঠিকানায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে গৌরীপুর স্বজন সমাবেশের সক্রিয়, নিষ্ক্রিয়, দূরে সরে যাওয়া, কর্মব্যস্ত হয়ে পড়া স্বজনের সংখ্যা চার হাজারের ওপরে। যার সিংহভাগ স্বজন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছেন। আছেন কানাডা, চীন, ভারত ও অস্ট্রেলিয়াতেও ৯ জন স্বজন।
এ স্বজন সমাবেশকে বহুদূরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বৃক্ষপ্রেমিক পৌর স্বজনের সভাপতি মোতালিব বিন আয়েত আর নেই। আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন ছড়াকার আজম জহিরুল ইসলাম, অধ্যাপক আরশাদ আলী, মোটরসাইকেল মেকানিক শামছুল হক, পৌর কাউন্সিলর মোস্তফা কামাল, চিত্রশিল্পী আতাউর রহমান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সেলিম চৌধুরী, মাস্টারপাড়ার নুরুল আমিন, স্বজনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক কাজী এম এ মোনায়েম, গাজীপুরের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীসহ আরও অনেকেই। তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
এ বছর আমাদের অনেকেই সাফল্যের সর্বোচ্চ স্থানে শিরোপা অর্জন করেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে সংগীতে জাতীয় স্বর্ণপদক এবং তা অর্জন করে স্বজন লাবিবা ইসলাম রুদিতা। শুধু তাই নয়, সে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমস্থানও অর্জন করে। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষায় ২০২৫ সালে স্বর্ণপদক পেয়েছে উপস্থিত বক্তৃতায় তাহমিন ইসলাম আদিব ও কাবিংয়ে রামিসা জান্নাত তুলি। কাব স্কাউটের সর্বোচ্চ পদক ‘শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে স্বজন পরিবারের সদস্য গজন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তাহমিন ইসলাম আদিব, গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রিফাহ তাসনিয়া তরী, কাশফিয়া জাহান তৃপ্তি। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে এ বছর ১১ জন স্বজন।
এ সংগঠনটির দীর্ঘ পথচলায় যারা শ্রম, অর্থ, পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ। সেই সঙ্গে যারা আমাদের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছার পথের সন্ধান দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। কৃতজ্ঞতা জানাই জন্মলগ্নে গৌরীপুর পৌরসভার সেই ছাদে বসার সুযোগ ও সহযোগিতা দিয়ে পাশে থাকার জন্য তৎকালীন পৌরসভার মেয়র মো. শফিকুল ইসলাম হবিকে।
‘যুগান্তর স্বজন সমাবেশকে’ নিয়ে উপজেলা স্বজনের সাহিত্য সম্পাদক গীতিকার আমিরুল মোমেনীনের লেখা ও সুরে স্বজন সমাবেশ থিমসং সারাদেশের স্বজনদের মাঝে নূতন এক অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেছে। সে জন্য গীতাকার ও সাংস্কৃতিক টিমের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আজকের এই দিনে বিনম্রচিত্তে শ্রদ্ধা নিবেদন করছি দেশবরেণ্য লেখক অধ্যাপক যতীন সরকারের প্রতি, তিনিও এ সংগঠন এবং সংগঠনের মানুষকে আপন করে নিয়েছিলেন।
অসংখ্য কার্যক্রমের মধ্যদিয়ে এ সংগঠন ১৭ সেপ্টেম্বর বুধবার ‘ঐতিহ্যের একুশ বছর পূর্তি উৎসব’ উদযাপন করতে যাচ্ছে। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি সভায় নেওয়া হয়েছে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি। জন্মদিনের শুভলগ্নে বিকাল ৪টায় থাকছে বর্ণিল শোভাযাত্রা, স্মৃতিচারণ ও কেককাটা।
এছাড়াও রয়েছে ‘বিশুদ্ধ অক্সিজেন-সবুজ পৃথিবী চাই’ স্লোগানে ১০ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে পর্যায়ক্রমে গাছের চারা বিতরণ, হোসেনপুর জমিদারবাড়ি ও কটিয়াদী সত্যজিৎ বিশ্বাসের বাড়ি পরিদর্শন, আড্ডা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বাল্যবিয়ে ও মাদকবিরোধী পথসভা-সমাবেশ এবং ভ্রমণ। আরও আছে ‘মুক্তমনে স্বপ্ন আঁকি’ স্লোগানে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ‘যে মুখে ডাকি মা, সে মুখে মাদক না’ স্লোগানে অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী প্রচারাভিযান, সাংস্কৃতিক উৎসব, ‘অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে, শিশু মা-অপুষ্ঠ শিশু- বাড়ায় দুর্ভোগ’ স্লোগানে প্রচারাভিযান, স্কাউটে স্বজন পরিবারের শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড, প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড, জাতীয় পুরস্কার, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা।

-68c9bfd74732c.jpg)