কবে ফিরছেন সাবেক এমপি অভি, অপেক্ষায় অনুসারীরা
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ০২:০৩ পিএম
সাবেক এমপি অভি। ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
২৩ বছরেরও বেশি সময় কানাডায় বসবাস করছেন সাবেক সংসদ-সদস্য গোলাম ফারুক অভি। দেড় সপ্তাহ আগে আবেদন করলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি কানাডার অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন। সাধারণত ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওই পাশ প্রদানের রীতি থাকলেও অভির ক্ষেত্রে কেন দেরি হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া দেননি ফার্স্ট সেক্রেটারি ও হেড অব চ্যান্সেরি মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার কাছ থেকে কোনো উত্তর মেলেনি।
পরিচয় না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাভেল পারমিট চেয়ে তার (অভি) করা আবেদনটি বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা ডেস্কে রয়েছে। যতদূর জানি, সেটির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
নব্বইয়ের দশকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচিত নাম গোলাম ফারুক অভি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক। দলীয় কোন্দলে জড়িয়ে ১৯৯০ সালে বহিষ্কার হন ছাত্রদল থেকে। বেশ কয়েকটি মামলাও হয় তার বিরুদ্ধে। এরপর জাতীয় পার্টিতে (মঞ্জু) যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে বাইসাইকেল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ-সদস্য হন বরিশাল-২ নির্বাচনি এলাকা থেকে।
সপ্তম জাতীয় সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন তিনি। তখন বরিশালের বাবুগঞ্জ ও উজিরপুর উপজেলা মিলে ছিল এই আসন। পরে অবশ্য আসনটি পুনর্বিন্যাস হয় উজিরপুর ও বানারীপাড়া উপজেলা নিয়ে। সংসদ-সদস্য থাকাবস্থায় নির্বাচনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে দেশব্যাপী আলোচিত হন এই নেতা। তার সময়েই মূলত যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আসে বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন এলাকা নিয়ে গঠিত উজিরপুর উপজেলা। বিপুলসংখ্যক সেতু-কালভার্ট আর সড়ক নির্মাণ করে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন তিনি। যে কারণে এখনো নির্বাচনি এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় অভি। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ২০০২ সালে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন অভি। এরপর একাধিক রাজনৈতিক মামলাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানার কারণে আর দেশে ফিরতে পারেননি। প্রায় দুই যুগ বসবাস করছেন কানাডায়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই অভির দেশে ফেরার গুঞ্জন শুরু হয়। ফিরে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হবেন-এমনটাও ধারণা তার নির্বাচনি এলাকার অনেকের। প্রথমে গুঞ্জন ছিল বিএনপি থেকে মনোনয়ন নেবেন। পরে অবশ্য সেখানে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সরফুদ্দিন সান্টুকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। ধানের শীষের মনোনয়ন না পেলেও অবশ্য হতাশ নন নির্বাচনি এলাকায় থাকা অভির অনুসারীরা।
তারা বলছেন, অন্য যে কোনো দল, নয়তো স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন তিনি। খোদ অভিও উড়িয়ে দেননি এই সম্ভাবনা। তবে সবার আগে তার কাছে জরুরি দেশে ফেরা, এমনটাই বলেছেন যুগান্তরকে। আর দেশে ফেরার জন্য আবারও ট্রাভেল পাশ চেয়েছেন সরকারের কাছে।
তিনি বলেন, ‘দেশে ফেরার জন্য বহু বছর ধরেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বারবার বাধা দেওয়া হয়েছে আমাকে। কানাডায় আসার পর ২০০৬ সালে ফুরিয়ে যায় আমার পাসপোর্টের মেয়াদ। নবায়ন কিংবা নতুন পাসপোর্ট চেয়ে ওই সময়ই আবেদন জমা দিই কানাডায় বাংলাদেশ দূতাবাসে। কিন্তু দেওয়া হয়নি নতুন পাসপোর্ট। একাধিকবার আবেদন করেও ব্যর্থ হওয়ার পর দেশে ফেরার ট্রাভেল ডকুমেন্ট পেতে ২০১৩ সালে আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করি। ওই বছরের ৪ এপ্রিল দেওয়া রায়ে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিতে সরকারকে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। হাইকোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেওয়ার জন্য ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু তারপরও আমাকে দেশে ফেরার অনুমতি বা ট্রাভেল পারমিট দেওয়া হয়নি।’
রাজনৈতিক সরকারগুলোর আমলে নানা হিসাবনিকাশ মিলিয়ে দেশে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা গোলাম ফারুক অভি আবারও সরকারের কাছে চেয়েছেন দেশে ফেরার ট্রাভেল পাশ। অনুমতি পাওয়ার উদ্দেশ্যে ৬ নভেম্বর প্রথম তিনি যোগাযোগ করেন কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে। প্রাথমিক যোগাযোগের পর ১৪ নভেম্বর জমা দেন ট্রাভেল ডকুমেন্ট পাওয়ার আবেদন। ফরম পূরণ করে আবেদন জমা দেওয়ার পাশাপাশি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর একটি আবেদনও করেন। এর দুই সপ্তাহ কেটে গেলেও দেশে ফেরার অনুমতি তথা ট্রাভেল পাশ দেওয়া হয়নি তাকে।
সাধারণত এ ধরনের আবেদনের নিষ্পত্তি ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস। কেননা, দেশে ফেরার ক্ষেত্রে কোনো নাগরিককে বাধা দেওয়ার অধিকার কারও নেই। এমনকি মামলার আসামি হলেও দিতে হয় ট্রাভেল পাশ। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিদেশে অবস্থানরত বহু রাজনৈতিক নেতা এই পদ্ধতিতে খুব সহজেই পেয়েছেন ট্রাভেল পারমিট। কিন্তু গোলাম ফারুক অভির ক্ষেত্রে কেন দেড়ি হচ্ছে, এর কোনো উত্তর নেই কারও কাছে।
এ ব্যাপারে গোলাম ফারুক অভি যুগান্তরকে বলেন, ‘নিজের দেশে যেতে আমাকে কেন এত রেড টেইপের মধ্যে পড়তে হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। সাংবিধানিক অধিকার থেকে আমাকে ডিপ্রাইভ করা হচ্ছে। তবে এসবেরও নিশ্চয়ই শেষ আছে।’


