Logo
Logo
×

ডাক্তার আছেন

সর্দিজ্বর ডেঙ্গু কিংবা চিকুনগুনিয়ার উপসর্গ থাকলে কি টাইফয়েডের টিকা দেওয়া যাবে?

ডা. আয়শা আক্তার

ডা. আয়শা আক্তার

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০৬ এএম

সর্দিজ্বর ডেঙ্গু কিংবা চিকুনগুনিয়ার উপসর্গ থাকলে কি টাইফয়েডের টিকা দেওয়া যাবে?

প্রতীকী ছবি

জ্বর বা ডেঙ্গুর মতো উপসর্গ বা সক্রিয় কোনো রোগ (active disease) থাকলে  টাইফয়েড টিকা বা অন্য কোনো টিকা দেওয়া যাবে না। কেউ যদি অসুস্থ থাকে তাহলে এ অবস্থায় তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ  ক্ষমতাই অনেক দুর্বল থাকে। তাই এই সময়ে টিকা দেওয়া হলে শরীর অতিরিক্ত চাপের মধ্যে পড়ে যায় এবং বেশি অসুস্থ বোধ করতে পারে।

অসুস্থ শরীরে টিকা দিলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন- জ্বর বা ব্যথা না কাশি হতে পারে।

টিকা দেওয়ার সময় টিকার স্থানে ব্যথা হতে পারে বা জ্বর আসতে পারে।তখন সেই টিকা গ্রহীতার আগে থেকে যদি জ্বর থাকে তাহলে রোগ নির্ণয় করতে দেরি হয়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হতে পারে।

অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং পানির মাধ্যমে টাইফয়েড ছড়িয়ে পড়ে। তাই রাস্তার পাশে যে কোনো অস্বাস্থ্যকর খাবার একদম খাওয়া যাবে না এবং বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে।

অনেক রোগি টাইফয়েডের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে যায় না এবং পরামর্শ গ্রহণ করে না। 

টাইফয়েড হলে অন্ত্রে ঘা বা ইনফেকশন হয় যার ফলে আস্তে আস্তে নাড়িটা ফুটো পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে, যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হয়ে থাকে। তখন তাৎক্ষণিকভাবে সার্জারির প্রয়োজন হতে যেতে পারে।

অন্যদিকে লিভারের প্রদাহ ছড়িয়ে যেতে পারে, তখন লিভারের এনজাইম বেড়ে গিয়ে হেপাটাইটিস হয়ে যায়।

টাইফয়েড হলো এক ধরনের জ্বর, যা দুই ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হতে পারে। যেমন- সালমোনেলো টাইফি এবং সালমোনেলো প্যারাটাইফি। যে কোনো একটা দিয়ে আক্রান্ত হলে জীবাণুর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা যায়, যা দুই ধরনের জীবাণু সংক্রমণ প্রায় একই রকম হয়ে থাকে। যেমন- সালমোনেলো টাইফি এবং সালমোনেলো প্যারাটাইফি। 

সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া দিয়ে সংক্রমিত জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে যে জ্বর হয় তাকেই টাইফয়েড জ্বর বলা হয়। আর সালমোনেলা প্যারাটাইফি জীবাণুর কারণে জ্বর হলে তাকে প্যারা-টাইফয়েড জ্বর বলা হয়।

টাইফয়েডের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে দুষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে। যদি কোনো খাবার ও পানির মধ্যে টাইফয়েডের জীবাণু থাকে, তাহলে সেই খাবার খেলে ও পানি পান করলে টাইফয়েডের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। 

টাইফয়েড জ্বর থেকে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি  হতে পারে। যেমন- মস্তিস্কে প্রদাহ, হেপাটাইটিস, লিভারের সমস্যা ইত্যাদি। 

টাইফয়েড জ্বর শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গকে আক্রান্ত করতে পারে। চিকিৎসা যদি ঠিকমতো সময়ে না করা হয় এবং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না করলে রোগীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়, যা মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

কোনো একটা ভ্যাকসিন যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা  (WHO) অ্যাপ্রুভ করে তখন বিভিন্ন লেভেলে এটা নিয়ে পরীক্ষা করা হয় এবং বিভিন্ন ফেজে প্রয়োগ করে দেখা হয়, যেমন- প্রথম স্তর, দ্বিতীয় স্তর, তৃতীয় স্তরে। যখন দেখা যায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া একদম নাই বললেই চলে, তখনই সেটি ক্লিনিক্যাল  ট্রায়ালে যায়। ক্লিনিক্যাল  ট্রায়ালে যখন দেখা যায় মানুষের জন্য কোনো ক্ষতির কারণ হচ্ছে না, তখন জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাও অনেকগুলো ধাপ পার হয়ে।

যে কোনো ওষুধে ব্যক্তি বিশেষে কিছু কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। যেমন- কারো এলার্জি হতে পারে বা ভ্যাকসিনের স্থানে ব্যথা বা লাল হয়ে যাওয়া বা জ্বর আসতে পারে।  সে ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল খেলে ভালো হয়ে যায়।

লেখক: উপপরিচালক, ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতাল।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম