Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

আঞ্চলিক দেশগুলোর ওপর হস্তক্ষেপের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করল ইরান

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:১৩ পিএম

আঞ্চলিক দেশগুলোর ওপর হস্তক্ষেপের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করল ইরান

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি আমির সাঈদ ইরাভানি। ফাইল ছবি

ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক অভিযোগ—যে তেহরান নাকি আঞ্চলিক দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে—তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন প্রতিনিধি মাইকেল ওয়াল্টজের উত্থাপিত অভিযোগের জবাবে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি আমির সাঈদ ইরাভানি বলেন, ইরানের পররাষ্ট্রনীতি জাতিসংঘ সনদ এবং পারস্পরিক সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অ-হস্তক্ষেপ ও সুসম্পর্কের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত।

শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে মেহর নিউজ

তিনি বলেন, পশ্চিম এশিয়ায় অস্থিতিশীলতার প্রকৃত কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ সামরিক উপস্থিতি ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ, যা পুরো অঞ্চলে সংঘাত উসকে দিয়েছে।

ইরাভানি বলেন, ‘ইরানের প্রক্সি’ সংক্রান্ত যে বিভ্রান্তিকর বর্ণনা তৈরি করা হয়েছে, তা আসলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের আগ্রাসন থেকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি সরিয়ে দেওয়ার কৌশল। 

তিনি যুক্তি দেন, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কার্যক্রম বারবার ব্যাহত করে ইসরাইলের অপরাধের সহযোগী হয়ে উঠেছে এবং এই কারণে ওয়াশিংটন নৈতিক ও আইনগতভাবে এসব অপরাধের জন্য দায়ী।

ইরানি রাষ্ট্রদূত বলেন, ইসরাইলি শাসনব্যবস্থা শুধু আঞ্চলিক নয়, আন্তর্জাতিক শান্তির জন্যও গুরুতর হুমকি। গাজায় তাদের ‘অভূতপূর্ব গণহত্যা’র ফলে ৬৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আরও বহু মানুষ নিখোঁজ।

তিনি বলেন, ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর নিয়মিত বিমান হামলায় গাজার হাসপাতাল, স্কুলসহ প্রায় সব অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। ‘এই বর্বরতা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন,’ বলেন ইরাভানি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার ও অবৈধ অবরোধ আরোপ করে ইসরাইল আন্তর্জাতিক মানবিক নীতিমালা ভঙ্গ করছে।

ইরাভানি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সাম্প্রতিক পরামর্শমূলক মতামতের কথাও উল্লেখ করেন, যেখানে ইসরাইলকে মানবিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত করা ও জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর ওপর হামলার জন্য দায়ী করা হয়েছে—যার ফলে বহু জাতিসংঘকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন।

তিনি বলেন, ইসরাইল সিরিয়ায় বিমান হামলা চালিয়ে, লেবাননের বিরুদ্ধে সামরিক উত্তেজনা বাড়িয়ে এবং গোলান মালভূমি দখল করে রেখেছে—যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ভয়াবহ হুমকি। এমনকি ইরানেও ইসরাইলের আগ্রাসন হয়েছে, যার ফলে বহু বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।


ইরাভানি নিরাপত্তা পরিষদের নিষ্ক্রিয় অবস্থানকে ইসরাইলি অপরাধের সহযোগিতা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘গুরুতর লঙ্ঘনের পরও এই পরিষদ নীরব ও পঙ্গু অবস্থায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বারবার ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো যৌথ পদক্ষেপের পথ আটকে দেয়।’

তিনি বলেন, ইরান গাজায় যুদ্ধের অবসান, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা, মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায্য অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় লক্ষ্য করে নেওয়া সব উদ্যোগকে সমর্থন করে।

ইরাভানি যুদ্ধাপরাধের দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সত্যিকারের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, ফিলিস্তিন সংকটের ন্যায়সঙ্গত সমাধান একমাত্র সম্ভব ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, যার রাজধানী হবে আল-কুদস আল-শরিফ (জেরুজালেম)।

মার্কিন অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে ইরাভানি বলেন, ‘ইরান সর্বদা ন্যায্য ও আন্তরিক সংলাপের জন্য প্রস্তুত থেকেছে। এখন সময় এসেছে ভ্রান্ত বর্ণনা বন্ধ করে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার প্রকৃত উৎসের দিকে মনোযোগ দেওয়ার।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম