মা-বাবা বিয়ে দিতে না চাইলে গোপনে বিয়ে করা যাবে?
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৭ পিএম
প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের উত্তম প্রস্তাব এলে বিয়েতে বিলম্ব করা মা-বাবার উচিত কি? ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ছেলে-মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হলে এবং উত্তম প্রস্তাব পাওয়া গেলে বিয়ে করাতে দেরি করা কিছুতেই উচিত নয়। যদি এই কারণে ছেলে-মেয়ে অন্যায় অপরাধে জড়িত হয়, তবে সেই গুনাহের দায়ভার পিতা-মাতার ওপর আসবে।
প্রশ্ন: আমার বয়স ২৭ চলমান। আমার পড়ালেখা শেষ, একটি কোম্পানিতে কর্মরত আছি। আমি হালাল ভাবে বিয়ে করতে চাচ্ছি, কিন্তু আমার বাবা মা এখনই বিয়ে দিতে রাজি নয় কারণ নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে. এর কারণে আমি গুনাহে লিপ্ত হচ্ছি। অনেক বুঝানোর পরও তারা আমার কথা মানতে চান না। আমি কি করতে পারি?
উত্তর: ছেলে-মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলে উত্তম প্রস্তাব পাওয়া গেলে বিবাহ করাতে দেরি করা কিছুতেই উচিত নয়। যদি দেরি করানো হয়, আর এরই মাঝে ছেলে মেয়ে অন্যায় অপরাধে জড়িত হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু এই গুনাহের দায়ভার পিতা-মাতার উপর আসবে।
উপযুক্ত প্রস্তাব এলে বিবাহ করাতে গড়িমশি নয়। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা যে ছেলের দ্বীনদারি ও চরিত্রের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পার সে যদি প্রস্তাব দেয় তাহলে তার কাছে বিয়ে দাও। যদি তা না কর তাহলে পৃথিবীতে মহা ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে। (তিরমিজি-১০৮৪)
এক. এখন আপনার জন্য করণীয় হলো, আল্লাহর সাহায্য নিয়ে বাবা-মাকে বুঝাতে থাকুন। নিজেও চেষ্টা করতে থাকবে। সফলতা আল্লাহ তায়ালাই দিবেন। এক্ষেত্রে সীমার মধ্যে থেকে মান-অভিমান চলমান রাখা যেতে পারে। তবে কিছুতেই তাদের সঙ্গে বেয়াদবি করবেন না। কেননা বাবা মায়ের সঙ্গে বেয়াদবির ফল খুব খারাপ হয়। এমনি বাবা মা অন্যায় করলেও সবর করতে হয়। আল্লাহর কাছে বলতে হয়।
আরও পড়ুন
দুই.পরিবারকে না জানিয়ে গোপন বিবাহ পরিবারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। যা কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। তা শরীয়তের শর্ত মেনে পারিবারিকভাবেই বিবাহ করুন। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর এবং দৈনিক ন্যূনতম দুই রাকাত সলাতুল হাজত পড়ে পড়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চেয়ে দোয়া করতে থাকুন। তিনি অবশ্যই সাহায্য করবেন ইনশাআল্লাহ।
প্রাপ্ত বয়স্ক একজন যুবক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে হাল ছেড়ে দেবে না। বরং জীবন যুদ্ধে আল্লাহর সাহায্য নিয়ে তাকে বিজয়ী হতেই হবে। বাবা-মাকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। আল্লাহ তায়ালা উত্তম ব্যবস্থা করে দিন। আমিন।
মা-বাবার অসম্মতিতে বিয়ে করার বিধান
ইসলামি-শরিয়তে ছেলে এবং মেয়ে দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলার একটাই পদ্ধতি–বিয়ে। আর বিয়ের সঠিক সময় এবং সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে উপযুক্ত বয়সে স্ত্রীর ভরণ পোষণের ক্ষমতা অর্জনের পর পিতা-মাতার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপযুক্ত পাত্রীকে বিয়ে করা।
পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সময়ের পূর্বে অভিবাবকের অজান্তে বিয়ে করা একেবারেই অনুচিত।ইসলামি-শরিয়তে এব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কেননা তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনে।
তবে যদি কমপক্ষে দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে করেই ফেলেন, তাহলে যদিও শরিয়তের দৃষ্টিতে বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে- কিন্তু সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে তা সম্পূর্ণ অনুচিত হবে। দায় দায়িত্বহীনভাবে গোপনে বিয়ে করা শরিয়তের দৃষ্টিতে পছন্দনীয় নয়। তাছাড়া মেয়ের অভিভাবকদের না জানিয়ে বিয়ে করা তার জন্যও চরম ক্ষতির কারণ হতে পারে। (আদ দুররুল মুখতার ৩/৫৬, আল বাহরুর রায়েক ৩/১৯২)
ফুকাহায়ে কেরামের মতে, নিম্নোক্ত শর্ত পূরণ হলে মা-বাবার অসম্মতি অগ্রাহ্য করা যেতে পারে-
- বিয়ের জন্য শরয়ি সক্ষমতা থাকা (শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক)
- বিয়ে না করলে গুনাহে জড়ানোর প্রবল আশঙ্কা থাকা
- মা-বাবার আপত্তি যুক্তিসঙ্গত না হওয়া (যেমন: বংশমর্যাদা, গোত্রগত বিদ্বেষ ইত্যাদি)
- বিয়ের প্রস্তাব শরিয়তসম্মত হওয়া
ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘যখন বিয়ে ফরজ বা ওয়াজিব পর্যায়ের হয় এবং মা-বাবার আপত্তি যুক্তিহীন হয়, তখন তাদের অসম্মতিকে অগ্রাহ্য করা যাবে।’ (আল-মাজমু: ১৬/৩৪২)
সম্মতি ছাড়া বিয়ে করায় বাবা-মা কষ্ট পেলে কি গুনাহ হবে?
ইসলাম মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছে। ছেলে যদি সে দায়িত্ব যথাযথ পালন না করে, তবে সে গুনাহগার হবে।
তবে, যদি ছেলে পাপাচার থেকে বাঁচতে এবং ইসলামের বিধান মেনে বৈধভাবে পরিবারের অমতে বিয়ে করে এবং এতে মা-বাবা কষ্ট পান, তবে এই ক্ষেত্রে ছেলে গুনাহগার হবে না। কারণ, সে আল্লাহর নিষেধকৃত কোনো কাজ করেনি, বরং নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য ইসলামের বিধান অনুসরণ করেছে।
