Logo
Logo
×

লাইফ স্টাইল

ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণায় বাড়ছে ঝুঁকি, কী বলছে গবেষণা

Icon

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:১৯ পিএম

ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণায় বাড়ছে ঝুঁকি, কী বলছে গবেষণা

ছবি: সংগৃহীত

মানবদেহে প্রবেশ করা অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিক অন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে এবং বাড়িয়ে দিতে পারে অন্ত্রের ক্যানসার ও বিষণ্নতার ঝুঁকি—অস্ট্রিয়ার একদল বিজ্ঞানীর নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে এমন উদ্বেগজনক তথ্য। এটি মানবদেহে মাইক্রোপ্লাস্টিকের সরাসরি প্রভাব শনাক্তের প্রথম গবেষণা বলেই দাবি করেছেন তারা।

অস্ট্রিয়ার গ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা সুস্থ স্বেচ্ছাসেবকদের শরীর থেকে সংগৃহীত বর্জ্য টিস্যু বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, খাবারের প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা অন্ত্রের ভেতরের ব্যাকটেরিয়ার কার্যক্রমে পরিবর্তন ঘটায়। এসব পরিবর্তনের কিছু অংশ আগের গবেষণায় দেখা ক্যানসার ও বিষণ্নতার জীববৈজ্ঞানিক ধাঁচের সঙ্গে মিল পেয়েছে।

গবেষকেরা বলেন, এটি মানবদেহে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অন্ত্রের জীবাণুসমূহে পরিবর্তন ঘটানোর প্রথম প্রমাণ। তারা একে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ সব স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের জন্য ‘একটি সতর্কবার্তা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। 

কীভাবে শরীরে প্রবেশ করে মাইক্রোপ্লাস্টিক

মাইক্রোপ্লাস্টিক হলো দুই মাইক্রোমিটারের (এক মিলিমিটারের দুই হাজার ভাগের এক ভাগ) চেয়ে ছোট প্লাস্টিক কণা। দৈনন্দিন ব্যবহারের প্লাস্টিক দ্রব্যগুলো যখন পরিবেশে ভেঙে যায়, তখনই এসব অতি সূক্ষ্ম কণা তৈরি হয় এবং খাদ্য, পানি ও বাতাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।

শরীরে প্রবেশের পর এই কণাগুলো অন্ত্রের প্রাচীর ও জীবাণুর সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে হজম ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় জৈব প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানবদেহের ফুসফুস, রক্ত, বুকের দুধ এবং এমনকি গর্ভনালীতেও মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্ত হয়েছে, যা প্রমাণ করে আধুনিক জীবনে এই দূষণ প্রায় অনিবার্য।

‘চিন্তার কারণ গভীর’

গবেষণার প্রধান লেখক, গ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোপ্লাস্টিক গবেষক ক্রিশ্চিয়ান পাসচার ডয়েচ বলেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক এখন এতটাই দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে যে এটি মাছ, লবণ, বোতলজাত পানি, এমনকি ট্যাপের পানিতেও পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ আমরা প্রতিদিনই খাবার, শ্বাস বা ত্বকের মাধ্যমে এই কণাগুলো গ্রহণ করছি।

তিনি আরও বলেন, যদিও এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না যে মাইক্রোপ্লাস্টিক সরাসরি কোনো রোগ সৃষ্টি করে, তবে এটি যে মানুষের অন্ত্রের জীবাণু ও প্রতিরোধ ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলছে—তার প্রমাণ স্পষ্ট। 

গবেষণার গুরুত্ব

মানব অন্ত্রে থাকা ট্রিলিয়ন সংখ্যক জীবাণুর সমষ্টি—গাট মাইক্রোবায়োম—শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্যের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটলে প্রদাহজনিত অন্ত্রের রোগ, স্থূলতা ও বিষণ্নতার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

নতুন এই গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে, দৈনন্দিন জীবনের প্লাস্টিক দূষণ ধীরে ধীরে আমাদের অন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা একে মানবদেহে পরিবেশ দূষণের প্রভাব বোঝার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

যদিও গবেষণাটি সরাসরি ক্যানসার বা বিষণ্নতার কারণ হিসেবে মাইক্রোপ্লাস্টিককে নিশ্চিত করেনি, তবুও বিজ্ঞানীরা একমত যে বিষয়টি নিয়ে আরও গভীরভাবে গবেষণা করা জরুরি।

গবেষকেরা পরামর্শ দিয়েছেন, ভবিষ্যতে মাইক্রোপ্লাস্টিক কীভাবে অন্ত্রের জীবাণু ও মানবকোষের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে প্রদাহ বা জিনগত পরিবর্তন ঘটাতে পারে—সে বিষয়ে আরও অনুসন্ধান চালানো প্রয়োজন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম