থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য আপনার শরীরের গতি বদলে দিতে পারে
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪৬ এএম
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা শরীরের গতি, যা বিপাক, শক্তি, হৃদস্পন্দন— এমনকি ভারসাম্য ব্যাপকভাবে বদলে দিতে পারে। কারণ এই হরমোন শরীরের প্রায় প্রতিটি কোষ ও অঙ্গকে প্রভাবিত করে, যার ফলে ক্লান্তি, ওজন পরিবর্তন, হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা, মেজাজ পরিবর্তন, মাথা ঘোরা—এমনকি ভারসাম্যহীনতার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রাণবন্ত নাকি ক্লান্ত বোধ করছেন, ওজন বাড়ছে না কমছে— এমনকি মনের স্থিরতাও অনেকটাই নির্ভর করে এই থাইরয়েড হরমোনের ওপর।
আমাদের জানা উচিত—থাইরয়েড কীভাবে শরীরের গতি নিয়ন্ত্রণ করে। আপনি মনে রাখবেন, আপনার গলার ঠিক নিচে ছোট্ট একটা গ্রন্থি রয়েছে। দেখতে ঠিক প্রজাপতির মতো। এই ক্ষুদ্র অঙ্গটাই আপনার শরীরের গতি, শক্তি আর মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটি আপনার শরীরের বিপাকীয় হার নিয়ন্ত্রণ করে, যার ফলে শক্তি উৎপাদন ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ হয়।
আর কেন্দ্রীয় ও স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে, যা পেশি শক্তি, মেজাজ এবং স্নায়বিক কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। ভেতরের কানের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ
হরমোনের পরিবর্তনের ফলে মাথা ঘোরা ও ভারসাম্য বজায় রাখতে অসুবিধা হতে পারে। যখন এই হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, তখন নিঃশব্দে পুরো শরীরের ছন্দটাই বদলে যেতে থাকে, যা অনেক সময় আমরা টেরও পাই না। যখন থাইরয়েড হরমোন কমে যায়, তখন শরীরের ‘গতি’ কমে যায়। অর্থাৎ মানুষ তখন সবসময় ক্লান্ত বোধ করে, ওজন বেড়ে যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, চুল পড়ে, মনমরা ভাব দেখা দেয় এবং ঠান্ডা বেশি লাগে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। আমেরিকান থাইরয়েড অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, প্রতি আটজন নারীর মধ্যে একজন জীবনের কোনো না কোনো সময় থাইরয়েড সমস্যায় ভোগেন।
হরমোন বেড়ে গেলে কী হয়
হরমোন বেড়ে গেলে শরীরের গতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। তখন ওজন কমে যায়, হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়, ঘুম কমে, উদ্বেগ বাড়ে, হাত কাঁপে—এই উপসর্গগুলো দেখা দেয়। মায়ো ক্লিনিক জানিয়েছে, অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
হাইপোথাইরয়েডিজম (কম হরমোন): ক্লান্তি, ওজন বৃদ্ধি, ধীর হৃদস্পন্দন ও ঠান্ডা সহ্য করতে না পারা।
হাইপারথাইরয়েডিজম (বেশি হরমোন): ওজন হ্রাস, দ্রুত হৃদস্পন্দন, উদ্বেগ, ঘাম, কাঁপুনি ও গরম সহ্য করতে না পারা।
যা করা উচিত—
প্রথমত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে দ্রুত একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন। আর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন। এমনকি হরমোন স্বাভাবিক থাকলেও।
সেই সঙ্গে আয়োডিন, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্ক সমৃদ্ধ সুষম খাবার খান। আর পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম, নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন। কারণ সবকিছুই থাইরয়েড হরমোনকে ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে। তবে সমস্যা ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই ওষুধ বন্ধ বা শুরু করা উচিত নয়। কারণ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যাবে না।
