ন্যানো-প্লাস্টিক যেভাবে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:২৬ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান মোহালির ইনস্টিটিউট অব ন্যানো সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইএনএসটি) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে—একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বা পিইটি বোতল থেকে উৎপন্ন ন্যানো-প্লাস্টিক মানবদেহের নানা গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক প্রক্রিয়াকে সরাসরি ব্যাহত করতে পারে।
ন্যানো-প্লাস্টিক কী
ন্যানো-প্লাস্টিক হলো ন্যানোমিটার পরিমাপের (১–১০০০ ন্যানোমিটার) অতি ক্ষুদ্র কৃত্রিম প্লাস্টিক কণা, যা হয় পরিবেশে সরাসরি নির্গত হয়, নয়তো বড় প্লাস্টিক ভেঙে তৈরি হয়। দৈনন্দিন ব্যবহার্য অনেক পণ্য—যেমন প্যাকেজিং সামগ্রী, পোশাক, খেলনা বা প্রসাধনী—ক্ষয় হয়ে এসব কণা তৈরি করতে পারে। নদী, সমুদ্র, পানীয় জল ও খাদ্যেও এগুলোর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে খাবার ও পানির মাধ্যমে ন্যানো-প্লাস্টিক গ্রহণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, যদিও এখনো স্পষ্টভাবে জানা যায়নি এসব কণার মানবদেহে কী ধরনের ক্ষতি হয়। পরিবেশ দূষণ ও টিস্যু ক্ষতির বিষয়ে আগের বহু গবেষণা থাকলেও অন্ত্রের উপকারী জীবাণুর ওপর এর সরাসরি প্রভাব সম্পর্কে তথ্য প্রায় ছিল না।
আইএনএসটির কেমিক্যাল বায়োলজি ইউনিটের গবেষণা দল—প্রশান্ত শর্মা ও সাক্ষী দাগরিয়ার নেতৃত্বে—প্রথমবারের মতো দেখিয়েছে যে এসব ন্যানো-প্লাস্টিক শরীরের স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘ সময় সংস্পর্শে থাকলে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি, উপনিবেশ গঠন এবং প্রতিরক্ষা ক্ষমতা কমে যায়; একইসঙ্গে তাদের চাপ সহনশীলতা ও অ্যান্টিবায়োটিক সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়।
ন্যানোস্কেল অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, দৈনন্দিন ব্যবহৃত প্লাস্টিক থেকে গঠিত ন্যানো-প্লাস্টিক জৈবিকভাবে সক্রিয় কণা, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য, রক্তের স্থিতিশীলতা এবং কোষের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করতে সক্ষম।
গবেষকেরা ল্যাবরেটরিতে পিইটি বোতল থেকে ন্যানো-প্লাস্টিক তৈরি করে তিনটি জৈবিক মডেলে পরীক্ষা চালান। অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমে এদের প্রভাব বোঝার জন্য ল্যাকটোব্যাসিলাস র্যামনোসাস নামে একটি উপকারী ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়।
তারা দেখেছেন, উচ্চ মাত্রার ন্যানো-প্লাস্টিক রক্তের লোহিত কণিকার ঝিল্লি নষ্ট করে দ্রুত কোষ ধ্বংস ঘটায়। দীর্ঘমেয়াদে এগুলো ডিএনএ ক্ষতি, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, ক্যান্সার-সংক্রান্ত কোষমৃত্যু (অ্যাপোপটোসিস) ও প্রদাহ বৃদ্ধি করে—এছাড়াও শক্তি ও পুষ্টি বিপাকে পরিবর্তন আনে।
গবেষকদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে ন্যানো-প্লাস্টিকের সংস্পর্শে থাকলে মানুষের এপিথেলিয়াল কোষে ডিএনএ ক্ষতি, অক্সিডেটিভ চাপ ও প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি তৈরি করে।
সূত্র- এনডিটিভি

