Logo
Logo
×

জাতীয়

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৩২ পিএম

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে

ছবি: সংগৃহীত

সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জনগণের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে।  তাছাড়া ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে সরকারকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘নির্বাচন ও নাগরিক নিরাপত্তা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। সভার আয়োজন করে নাগরিক কোয়ালিশন। সহযোগিতা করে ভয়েস ফর রিফর্ম। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন— সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম, মানবাধিকার কর্মী আইরিন খান, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবিবা, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, গণ সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনাইদ সাকি, ইসলামী আন্দোলনের নেতা শাহ ইফতেখার তারিক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা সৈয়দ হাসিব উদ্দীন হোসেন, এনসিপির নেতা ড. তাজনুভা জাবীন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা, নাগরিক ঐক্যের সাকিব আনোয়ার, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রমুখ।‌

এছাড়াও সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা বক্তৃতা করেন। ‌

শহিদুল আলম বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের প্রত্যেকেরই দুশ্চিন্তা ছিল। নির্বাচন কে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা হচ্ছে, নিরাপত্তাহীনতা চলছে, সেটা নিয়ে আমরা সকলেই চিন্তিত ছিলাম। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সকলের জন্য এই উদ্বেগ ছিলো। আজকে নির্বাচন নিয়ে সবার মাঝে উদ্বেগ প্রকাশ হয়েছে, একই সঙ্গে সকল রাজনৈতিক দল প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা ঐক্যবদ্ধ হতে চায়। এবং যে অন্যায় এবং উস্কানি গুলো হচ্ছে-এগুলো প্রতিহত করবে। নিরাপত্তার বিষয়ে সরকারকে এখন প্রমাণ করতে হবে, যাতে জনগণ আস্থা রাখতে পারে।

তিনি বলেন, ওসমান হাদির মতো একজন তরুণ নেতার নিরাপত্তা সরকার নিশ্চিত করতে পারেনি, সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?

জুনায়েদ সাকি বলেন, উসমান হাদিকে পতিত ফ্যাসিস্টরা ঘোষণা দিয়ে হত্যা করেছে। তাদের আশ্রয়দাতা ভারতও জড়িত ছিল। পতিত ফ্যাসিস্টদের আশ্রয়দাতারা বাংলাদেশে বসে তারা অস্থিতিশীল করতে চায়। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বুঝাতে চায়, তারা ছাড়া বাংলাদেশ স্থিতিশীল থাকবে না। জুলাই বিপ্লবের ট্রমার ক্ষোভকে কাজে লাগাতে চায় পতিত ফ্যাসিস্টরা। তারা নির্বাচনকে বানচাল করতে চায়। লক্ষ্মীপুরে এক বিএনপি নেতার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে তার বাচ্চা মেয়েকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মানুষকে তারা কনফিউজড করতে চায় যে, নির্বাচন হচ্ছে না। ময়মনসিংহে একজনভিন্নধর্মাবলম্বীকে পুড়িয়ে মেরেছে।  চাকরি থেকে বাদ দিতে তাকে ধর্মাবমাননার কথা বলে সাধারণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলে পুড়িয়ে মেরেছে।

তিনি বলেন, সংস্কার করতে হলে ইলেকশন করতে হবে। যারা ইলেকশন বানচাল করতে চায়, ফ্যাসিবাদ ও দেশকে যারা অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য এক। সরকার বলছে, নির্বাচনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের টাকা নেই। এটা একটা চরম ফাঁকিবাজি কথা। হাদিকে হত্যা করে ১২ ঘন্টার মধ্যে খুনি চলে যায়, কিন্তু সরকার গ্রেফতার করতে পারে না। এখন রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হলে ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র সফল হতে পারবে না। পুলিশকে একটিভ করতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। পুলিশকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।  সবাই মনে করছে, যাই কিছু করি না কেন, পার পেয়ে যাব। রাজনৈতিক দলগুলো এই পরিবর্তনের সময়ে ঐক্যবদ্ধ না হলে বিপর্যয় থেকে কেউ রক্ষা পাব না। পুরনো বন্দোবস্ত থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। আমরা যদি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন করতে পারি, তাহলেই কেবল হাদিসহ সব শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হবে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সরকার উদাসীনতা দেখাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে আরও সক্রিয় হতে হবে। নির্বাচনের নিরাপত্তার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, সবকিছু সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে করতে হবে। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার বিষয়ে একাধিক এজেন্সি জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, সরকার দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ড. ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদে যারা ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের তিনি আগলে রাখছেন। এই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বহাল রেখে কোনোভাবেই নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব না।

তিনি সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার ক্ষেত্রে আশঙ্কা রয়েছে। ওসমান হাদিকে আপনারা নির্বাচন নিরাপত্তা দিতে পারেন নাই। সে বারবার হুমকির কথা বলেছিল। আজকে আমাদেরকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই সরকারের দায়িত্ব ছিল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কিন্তু হাসিনার পুলিশ দিয়ে আপনি কিভাবে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন? তারা চায়, এধরনের সংকট সৃষ্টি হোক। হাসিনা দিল্লি পালিয়ে গেল তার তৈরি ফ্যাসিবাদ এখনো বাংলাদেশে বহাল রয়েছে। নিজের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত রয়েছেন বলে জানান তিনি।

হাবিবা খানম বলেন, রাজনৈতিক ঐক্য এখনো নিস্তেজ হয়ে যায়নি। বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক উত্তোরন ঘটাতে হলে এই ঐক্য প্রয়োজন। গানম্যান কিংবা অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে জনগণ ও প্রার্থীদের আস্থা অর্জন করতে হবে। দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সব দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম