অগ্নিদগ্ধ রোগীর চিকিৎসায় প্রথম ২৪ ঘণ্টা কেন গুরুত্বপূর্ণ
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে গোটা দেশ শোকে স্তব্ধ। দুর্ঘটনায় দগ্ধ অনেক শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক এখনো মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন হাসপাতালে।
এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চিকিৎসকদের ভাষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো দুর্ঘটনার পর প্রথম ২৪ ঘণ্টা, যাকে বলা হয় ‘গোল্ডেন আওয়ার’।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই সময়?
মানবদেহের ত্বক আমাদের প্রথম সুরক্ষাবলয়। ত্বক পুড়ে গেলে শরীর দ্রুত পানি ও লবণ হারায়, সংক্রমণের পথ খুলে যায় এবং দগ্ধ অংশে মারাত্মক ব্যথা তৈরি হয়। আগুন, গরম পানি, রাসায়নিক কিংবা বিদ্যুতের সংস্পর্শে ত্বক ও নিচের টিস্যু পুড়ে গেলে দগ্ধ রোগীর জন্য প্রথম ১ ঘণ্টা ও পরবর্তী ২৪ ঘণ্টাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা ‘গোল্ডেন আওয়ার’ বলে অভিহিত করেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সময়ের মধ্যে যথাযথ চিকিৎসা পেলে রোগীর জটিলতা ও মৃত্যুঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, অগ্নিদগ্ধ রোগীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের মৃত্যুর পেছনে কারণ হলো চিকিৎসা বিলম্ব।
গোল্ডেন আওয়ারে দেরি হলে কী হতে পারে?
১. তরল ও রক্তচাপ কমে যাওয়া: পোড়া ত্বক শরীরের তরল রক্ষা করতে পারে না। দ্রুত পানি ও লবণের ঘাটতি তৈরি হয়ে রক্তচাপ হঠাৎ নেমে যায়। এতে কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
2. সংক্রমণ (ইনফেকশন): পোড়া স্থানে জীবাণু প্রবেশ করে রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে সেপ্টিসেমিয়া নামের মারাত্মক সংক্রমণ দেখা দেয়, যা প্রাণঘাতী হতে পারে।
3. শ্বাসতন্ত্রে জটিলতা: আগুন থেকে নির্গত ধোঁয়া ও গ্যাস শ্বাসনালির মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট বা ফুসফুসের সংক্রমণ হতে পারে।
4. দাগ বা অঙ্গহানি: চিকিৎসা বিলম্বিত হলে পোড়া অংশে স্থায়ী ক্ষত বা অঙ্গহানি ঘটতে পারে।
5. মানসিক আঘাত: পোড়া দেহের যন্ত্রণা এবং ক্ষতচিহ্ন মানসিকভাবে গভীর প্রভাব ফেলে। রোগীর মধ্যে আতঙ্ক, হতাশা ও দীর্ঘমেয়াদি ট্রমা তৈরি হতে পারে।
প্রাথমিক করণীয় কী?
• পোড়া স্থানে তাৎক্ষণিকভাবে ঠান্ডা পানি ঢালুন (বরফ নয়)
• কোনো প্রকার ঘরোয়া ওষুধ, টুথপেস্ট বা ডিম প্রয়োগ করবেন না
• পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে পাতলা কাপড়ে জায়গাটি ঢেকে দিন
• দ্রুত রোগীকে কাছের বার্ন ইউনিট বা হাসপাতালে নিয়ে যান
গবেষণায় কী পাওয়া গেছে?
২০২০ সালের একটি গবেষণা বলছে, গুরুতর দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে শুরু না হলে মৃত্যুহার হতে পারে প্রায় ৩২ শতাংশ, অথচ সময়মতো চিকিৎসা পেলে সেটি নেমে আসে মাত্র ৭ শতাংশে।
অগ্নিদগ্ধ রোগীর ক্ষেত্রে প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। ‘গোল্ডেন আওয়ারে’ দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করলেই বহু প্রাণ রক্ষা সম্ভব। তাই যে কোনো দুর্ঘটনার সময় আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তৎপরভাবে পদক্ষেপ নেওয়াই সবচেয়ে জরুরি।
